ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়েছে। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু তিনি পালিয়ে গেলেও তার বিপুলসংখ্যক সহচর আগের মতো সব জায়গায় জেঁকে বসে আছেন। বিশেষ করে সরকারি অফিস-আদালতে এখনো চালকের ভূমিকায় রয়েছেন তারাই। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার শতভাগ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করলেও নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। পতিত সরকারের সহযোগী ও সুবিধাভোগীরা অন্তর্বর্র্তী সরকারকে পদে পদে বাধা দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার উৎখাতের পর সরকার পরিবর্তনের তিন মাস হতে যাচ্ছে। দেশের বর্তমান এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন বাংলাদেশ গড়তে খাতভিত্তিক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাস্তবতা হলো, শত প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে রাষ্ট্রের আমূল সংস্কারকাজ হাতে নিতে হচ্ছে। লক্ষ্য একটিই এই সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে আগামী দিনের উপযোগী করা। সংস্কারকাজ সম্পাদনে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব কমিশন কাজ শুরু করেছে।
লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, সরকারের কাছে জনমানুষের চাওয়া প্রথমত দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা। কিন্তু মাফিয়া হাসিনার জমানায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়; যা এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দেশের বেশিরভাগ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে রয়েছে। এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে যত দ্রুত সম্ভব সাধারণ মানুষকে মুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরো যত্নশীল হতে হবে। দ্বিতীয়ত, ছাত্রজনতার পরম চাওয়া বৈষম্যহীন সমাজ কায়েম তথা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা। তৃতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং চতুর্থত, সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা।
শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন। এগুলো আবার যথাযথভাবে কার্যকর করতে সংস্কারের বিকল্প নেই। দেশবাসী মনে করেন, আগে সংস্কারকাজ সম্পন্ন করে তারপর নির্বাচন করাই দেশের জন্য কল্যাণকর। কারণ কোনো নির্বাচিত সরকারকে যে কোনো ধরনের সংস্কার কর্মসূচি নিতে গেলে নানা গোষ্ঠীর স্বার্থ-দ্বন্দ্ব-সংঘাত মাথায় নিতে হয়। বর্তমান জনআকাঙ্ক্ষার অন্তর্বর্তী সরকারের এ দুর্বলতা নেই। ফলে তাদের পক্ষে রাষ্ট্র মেরামত বা সংস্কার করা যত সহজ, ঠিক তত কঠিন নির্বাচিত সরকারের বেলায়।
অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রম করলেও আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার একটি ন্যায়ভিত্তিক কাঠামো দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছি। অর্থাৎ আমাদের সমাজ ইনসাফ নির্বাসিত। পরিণতিতে সব খাতে দেশে বৈষম্য পাহাড়সম। যার কারণে প্রান্তিক মানুষের বাঁচার পরিসর সঙ্কীর্ণ হয়ে এসেছে। এ থেকে উত্তরণ না ঘটলে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকা আমাদের পক্ষে কঠিন।
এই প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি, জুলাই বিপ্লব আমাদের সামনে যেমন বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে, তেমনি এই মহাসুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে দেশ চোরাবালিতে আটকে যাবে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তিকে বোঝাপড়ার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জনপ্রত্যাশা বুঝতে হবে। দলীয় স্বার্থ প্রাধান্য পেলে চলবে না।