তরুণদের বিদেশমুখিতা
দেশে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, এ তথ্য নতুন নয়। তবে তা কী হারে বাড়ছে, এর একটি ধারণা পাওয়া যায় এদেশে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিলের এক গবেষণায়। ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, দেশের ৫৫ শতাংশ তরুণ পড়াশোনা ও কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যেতে আগ্রহী। উচ্চ বেকারত্বই যে এর কারণ, তারও ইঙ্গিত পাওয়া যায় এ গবেষণায়। এতে দেখা যায়, দেশের ৪২ শতাংশ তরুণ বেকারত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, বেকারত্বের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগে বৈষম্য এবং পারিবারিক জীবন ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে না পারা। মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য উন্নত দেশগুলোতে যাবে, পড়ালেখা শেষে ফিরে এসে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখবে, এটাই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু তারা যদি আর দেশে ফিরে না এসে বিদেশেই থেকে যায় তাহলে সেটা হয় ‘মেধা পাচার’। উচ্চহারে এই মেধা পাচার জন্ম দেয় মেধাশূন্যতার, যা উদ্বেগের বিষয়।
প্রশ্ন হলো, কেন এমনটি ঘটছে? উচ্চ বেকারত্ব ছাড়াও এর পেছনে আরো নানা কারণ রয়েছে। তরুণরা বিদেশমুখী হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কারণে। মেধাবী শিক্ষার্থী, যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী, তারা দেশে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ পায় না। নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া করার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। শিক্ষার মানের দিক থেকেও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে আছে। অন্যদিকে, দেশে উচ্চশিক্ষা শেষে যদিও কর্মসংস্থান হয়ও, শিক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ পেশায় কাজ করা সম্ভব হয় না অধিকাংশ তরুণের।
এছাড়া উন্নত দেশগুলোর তুলনায় দেশের চাকরিতে বেতন অনেক কম। এসব কারণে তরুণরা ক্রমেই বিদেশে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তাছাড়া বিদেশের উন্নত জীবনব্যবস্থা, নিরাপদ ভবিষ্যৎ, উন্নত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইত্যাদির হাতছানিও তরুণদের বিদেশ যেতে আগ্রহী করে তুলছে। সেক্ষেত্রে আমাদের তরুণদের, বিশেষত মেধাবীদের দেশে ধরে রাখতে হলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলে বিদেশ গমনেচ্ছু তরুণদের সবাই না হলেও একটি অংশ দেশেই থেকে যাবে এবং অনেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে ফিরেও আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এর ফলে দেশ উপকৃত হবে।