নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা
একেএম আতিকুর রহমান
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
গত ৫ নভেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে এই জয় পান। ট্রাম্প ২০১৬ সালে যখন প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখনো ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়েছিলেন। দুইবারই তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দুজন নারী এবং উভয়েই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে গিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পুরুষ প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে (বর্তমান প্রেসিডেন্ট)। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছ থেকে ট্রাম্পের দায়িত্ব নেয়ার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশ্ববাসী অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে এই নির্বাচনটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছে। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোড়লগিরি’ করার অভ্যাস রয়েছে। তবে ‘অর্থনৈতিক’ স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার অর্থেই যে সেসব করা হয় তা নয়, ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা’ দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণের বিস্তার ঘটানোর উদ্দেশ্যেও করা হয়ে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হওয়ার ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রাখার প্রয়াস যুক্তরাষ্ট্রকে কখনো মানবিক, কখনো আবার অমানবিক করে তোলে। তাইতো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সে কখনো কোনো রাষ্ট্রের ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে যায় আবার কখনো কোনো রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার প্রয়াসে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলে। ফলে কেউ উচ্ছ্বসিত হয় আবার কারো কপালে উদ্বেগের ভাঁজ পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে চলতে পারা যে কোনো রাষ্ট্রের, বিশেষ করে কোনো ছোট রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না, সে কথা সবাই জানে। আর সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কোন পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়, তা বিশ্বের প্রতিটি দেশ এবং জনগণ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। সাধারণত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণে তেমন বড়সড় পরিবর্তন না ঘটলেও ক্ষমতায় দলের পরিবর্তনের সঙ্গে কিছু বিষয়ে-ক্ষেত্রে নীতির পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। আর এসবের অনেকটাই হয়ে থাকে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির আলোকে বা দলীয় আদর্শ বিবেচনায়। নির্বাচনের আগে ও পরে ট্রাম্প প্রশাসন কী রকম হবে বা বৈদেশিক ইস্যুগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কোথায় দাঁড়াবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে যেমন আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। তিনি নির্বাচনি প্রচারণার সময় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিল অর্থনীতি, অভিবাসন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু ইত্যাদি। তাই নির্বাচনে জয়ের পরদিন ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একটি সাধারণ লক্ষ্য নিয়ে দেশ পরিচালনা করব। সেটি হলো যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেগুলো প্রতিপালন করা। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করব।’ অন্যদিকে তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অভ্যন্তরীণ ইস্যুগুলোতে যেমন দেখা যাবে, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সব ক্ষেত্রেই ওই নীতি প্রাধান্য পেতে পারে। অনেকেই মনে করে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি যেসব নীতি অনুসরণ করেছিলেন, অনেক ক্ষেত্রে সেসবের পুনরাবৃত্তিও ঘটতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চলমান যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার লড়াই বন্ধ করার উদ্যোগ নেবেন। দুটি দেশকেই তিনি অবিলম্বে স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য আহ্বান জানাতে পারেন। কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে পারস্পরিক স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে উভয় পক্ষকে যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি করাতে পারলে সেটি শুধু ট্রাম্পের নির্বাচনি অঙ্গীকারের বাস্তবায়নই হবে না, শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসী তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাবে। তবে এ ক্ষেত্রে ন্যাটো সদস্যদের নিয়ে তাকে বসতে হবে এবং যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে একটি শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে যেহেতু তিনি যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার করেছেন এবং সে আলোকে এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন, তাই আশা করা যায় যে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের চলমান ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ হবে।