ব্যক্তির নিজের জায়গা থেকে পরিবর্তনই পারে দেশকে শুধরে দিতে। দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরার ক্ষেত্রে সকলেই আমরা নিয়ম-কানুন জানি। কিন্তু কজনই বা মেনে চলি! নিজের প্রয়োজনে বা নিজের সুবিধার্থে জানা নিয়মগুলো বদলাতে আমাদের বিন্দুমাত্র সময়ের প্রয়োজন হয় না। নিজের চলাফেরার প্রয়োজনে বদলাচ্ছি ট্রাফিক আইনও। রাস্তা পারাপারের জন্য শহরে বেশ কিছু ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। শুধুমাত্র সংখ্যালঘুই তা ব্যবহার করে। সবাইকে উপদেশ দেই দুর্ঘটনা এড়াতে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে। কিন্তু নিজের সময় বাঁচানোর জন্য গাড়িগুলোকে সুপারম্যানের পাওয়ার দেখিয়ে রাস্তা পার হই। কারণ ওভারব্রিজে উঠতে ও নামতে কষ্ট হয়। কখনো ভেবে দেখেছেন কি, যদি সুপারম্যানের পাওয়ার কাজ না করে তখন কি হবে? একদিকে আমরা বেশিরভাগ মানুষই ব্যাটারিচালিত রিকশা মহাসড়কে চলাচলের বিরুদ্ধে। কিন্তু দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে আমরা সর্বদাই ব্যাটারিচালিত রিকশার সন্ধান করি। রাস্তার মাঝখানে হুটহাট পাবলিক বাস থামানো অনেকেই পছন্দ করি না। বাসা থেকে বাসস্ট্যান্ড দূরে, এই অজুহাতে বাসস্ট্যান্ডে না গিয়ে বাসের জন্য বাসার পাশের রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকি। নিয়ম ছিল বাস শুধুমাত্র বাসস্ট্যান্ডেই দাঁড়াবে। ঢাকা মহানগরে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ডধারী স্টুডেন্টদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু যখন নিজের কাছে কোনো কারণবশত আইডি কার্ড থাকে না, তখনও জোর করে হাফ ভাড়া দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু কথা ছিল আইডি কার্ড দেখানো শর্তেই হাফ ভাড়া দিতে পারবে শিক্ষার্থীরা। অনেকেই আবার মেয়াদোত্তীর্ণ বা নকল কার্ড দেখিয়ে হাফ ভাড়া দেয়ার চেষ্টা করে। তাহলে নিয়ম মানছি কোথায়? চকোলেট, চুইংগাম, বিস্কিটের প্যাকেট, কলার খোসা, পানির বোতল আমরা হর-হামেশাই যেখানে সেখানে ফেলি। কিন্তু রাস্তার ময়লা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য আবার স্থানীয় সরকারকেই দোষারোপ করি, যে তারা ড্রেন পরিষ্কার করে না। রাস্তায় ময়লা স্তূপ করে রাখি। যেকোনো জায়গায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে আমরা পটু। ক্ষমতার জোরে আমরা অনেক কাজই আগে করিয়ে নেই। বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। উল্টো পথে গাড়ি চলা কেউই পছন্দ করি না। কিন্তু নিজের প্রয়োজনে উল্টো পথে চলাতেও আমাদের সমস্যা হয় না। রাস্তায় যানজটের জন্য কিন্তু আমরাই দায়ী। কারণ ট্রাফিক আইন ভেঙে আমরাই আগে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমরা শুধু সবাইকে উপদেশ দিতেই পছন্দ করি। কিন্তু উপদেশগুলো নিজেরা মানতেই অপারগ। দেশকে পরিবর্তন করতে হলে, দেশকে উন্নত করতে হলে নিয়মগুলো মানার কথা যেমন অন্যকে বলতে হবে। ঠিক তেমনি নিজেও কঠোরতার সহিত নিয়মগুলোকে মানতে হবে। পরিবর্তন সবাই চাই কিন্তু পরিবর্তন করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা কজনই বা নেই? কর্তৃপক্ষের আশায় বসে না থেকে নিজের অবস্থান থেকে পরিবর্তিত হলেই দেশের দ্রুত পরিবর্তন সম্ভব।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা