পুলিশ বাহিনী সংস্কার কতদূর
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিগত সরকারের পতনের পর মুক্তি পায় দেশের মানুষ। পট-পরিবর্তনের পর অনেক কিছুই পরিবর্তন চলে আসে। শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, হামলা ও ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে নিজের মতো করে পুলিশ বাহিনীকে সাজিয়েছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। ফলে জনগণের সেবক না হয়ে ক্ষমতাসীন দলের সেবক হিসাবে পরিণত হওয়া এ বাহিনী অনেকটা বিতর্কিত হয়। এ আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে সবার চক্ষুশূল হয়ে ওঠে পুলিশ। সর্বত্র সমালোচনার মুখে পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এ বাহিনী। সরকার পতনের পর জনরোষ এতটাই ভয়ঙ্কর হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের ২২৪টি স্থাপনা জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এর বাইরে ভাঙচুর করা হয় আরো ২৩৬টি পুলিশ স্থাপনা। বেশ কিছু থানা পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। ফলে সাধারণ জনগণের সঙ্গে পুলিশের মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়।
এমনও শোনা যায় বাঘে ছুলে এক ঘা আর পুলিশ ছুলে বত্রিশ ঘা। তাই পারতোপক্ষে কেউ পুলিশের কাছে যেতে চায় না। অথচ পুলিশ জনগণের বন্ধু হওয়ার কথা। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের ভূমিকা অপরিসীম। এ বাহিনী ছাড়া মানুষের জীবন স্বাভাবিক নয়। কিন্তু দেড় মাসের বেশি সময় পার হলেও পুলিশে এখনও চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর ‘যুদ্ধ’। ভেঙে পড়া মনোবল ফিরে পেতে কঠিন সংগ্রামে আছে পুলিশ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে রয়ে গেছে বিশৃঙ্খলা। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীর খোলনলচে বদলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গেল সাড়ে ১৫ বছরের দুর্নাম ঘুচিয়ে পুলিশ জনআস্থা অর্জন করতে চায়। এ লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ আটটি সংস্কার কমিটিও কাজ করেছে সরকার।
অন্যদিকে, পুরো পুলিশ বাহিনী সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশন বাহিনী সংস্কারে তিন বিষয়ে প্রাধান্য দেবে। পুলিশে সংস্কার নিয়ে শিগগিরই কাজ শুরু করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত কমিশন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন মহল থেকে প্রস্তাব ও পরামর্শ নেয়ার কাজ। এই কমিশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, পুলিশের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা পুনরুদ্ধার করা। পাশাপাশি কেন আস্থা হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা হয়েছে সেই কারণগুলো অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব দেয়া। সংস্কারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন জরুরি। কারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মানুষের জান ও মাল পড়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটাতে না পারলে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে পড়বে। তাই আমাদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার পুরো পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের মাধ্যমে তাদের মনোবল ফিরিয়ে এন জননিরাপত্তায় নিয়োজিত করবেন। দেশের সব থানার কার্যক্রম পুনরুদ্ধার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থার বিকল্প নেই। সর্বোপরি অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে না পারলে সরকার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে না। সারাদেশের থানাগুলোর সংস্কার ও পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক না করলে এই অস্থিতিশীলতাকে সামাল দেয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। পুলিশকে হতে হবে দুর্নীতিমুক্ত ও জনগণের প্রতি মানবিক। দেশবাসীও মানবিক পুলিশ দেখতে চায়।
আমরাও আশা করব, পুলিশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধির জন্য মানবিকতার প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হবে। জননিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় করতে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- এমনই প্রত্যাশা আমাদের। সংস্কার এমনভাবে করতে হবে, এই বাহিনীর সদস্যরা যেন নিজেদের জনগণের সেবক না, ভেবে নিজেদের প্রচণ্ড ক্ষমতার অধিকারী না ভাবতে শুরু করেন। জনগণের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে পুলিশ বাহিনীকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার কোনো বিকল্প নেই।