ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অব্যাহত মূল্যস্ফীতি

বাজারে কারসাজি বন্ধ করতে হবে
অব্যাহত মূল্যস্ফীতি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। অক্টোবরে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বস্তুত খাদ্য মূল্যস্ফীতির ধাক্কা লেগেছে সার্বিক মূল্যস্ফীতির উপর। অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয় ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। দেশের গ্রাম ও শহর সর্বত্র মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় নাকাল সাধারণ মানুষ। বাজারে গিয়ে নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। অনেকে প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনেই বাড়ি ফিরছেন। বিবিএসের তথ্যমতে-চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজির দাম বাড়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। বস্তুত টানা প্রায় তিন বছর ধরে সাধারণ ভোক্তারা চড়া মূল্যস্ফীতির যন্ত্রণায় ভুগছেন। এর জন্য মূলত দায়ী ছিল বিগত সরকারের ভুল নীতি, অর্থ পাচার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দেশ পরিচালনা ইত্যাদি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে ভোক্তারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, এবার চড়া মূল্যস্ফীতির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু ভোক্তাদের এ আশা পূরণ হয়নি। নতুন সরকারের তিন মাস পূর্ণ হলেও এর মধ্যে পণ্যমূল্য কমেনি। জানা যায়, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিলেও এগুলো বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এর অন্যতম হচ্ছে অসহযোগিতা। অসাধু ব্যবসায়ীদের বেশি মুনাফার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। বিভিন্ন স্তরে চাঁদাবাজিও চলছে। এসব কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ সমস্যাগুলো বিগত সরকারের আমলে সৃষ্টি হলেও তা বর্তমান সরকারকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এদিকে রমজান শুরু হতে এখনো প্রায় চার মাস বাকি থাকলেও এরইমধ্যে বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি শুরু হয়ে গেছে। রমজান মাসে ছোলার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তাই বাড়ানো হয়েছে ছোলার দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে পণ্যটি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি সাত দিনের ব্যবধানে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দামও বাড়ানো হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজান শুরুর কয়েক মাস আগে থেকেই ছোলা, ভোজ্যতেল ইত্যাদি পণ্যের দাম বাড়ানো শুরু করে। অতীতে আমরা লক্ষ করেছি, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নানা রকম আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তাতে কোনো সুফল মেলেনি। অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুলেছে। রমজানে কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে, এটা অস্বাভাবিক নয়। সেজন্য আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও পণ্যের দাম ইচ্ছামতো বাড়ানো হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বাজার তদারকি জোরদার করা উচিত। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেজন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে তৎপর থাকতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে কোনোরকম কারসাজির সুযোগ না পায়, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত যেসব কারণে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়, সেগুলো মোটামুটি চিহ্নিত; কী করণীয় তাও বহুল আলোচিত। কাজেই যেভাবেই হোক, সেই কারণগুলো দূর করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত