বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষত জেনারেশন জি বা জেন জি, রাজনীতির প্রতি এক নতুন মনোভাব ও চিন্তাধারা নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। তাদের এই চিন্তাধারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকেও প্রভাবিত করছে। বিশ্বায়ন, প্রযুক্তি, সামাজিক মাধ্যমের প্রসার এবং রাজনৈতিক তথ্যের সহজলভ্যতার যুগে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং সামাজিক ন্যায়ের কথা আগের তুলনায় অনেক বেশি উচ্চকণ্ঠে প্রকাশ করছে। তবে, বাস্তবতাটা সহজ নয়; জেন জি-এর রাজনীতিচিন্তা বাস্তবায়নের পথে একাধিক বাধা ও চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। জেন জি প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার ভিত্তি গড়ে উঠেছে প্রযুক্তির হাতে, যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা বিশ্বজুড়ে অন্য দেশের তরুণদের আন্দোলন, রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বৈপ্লবিক চেতনার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার, টিকটক এবং অন্যান্য সামাজিকমাধ্যম তাদের কাছে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যেখানে তারা নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে, প্রতিবাদ জানাতে এবং সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারছে। বাংলাদেশের জেন জি-ও সেই বৈশ্বিক তরঙ্গের অংশ হয়ে উঠেছে এবং দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তবে এই প্রযুক্তিগত সুবিধাগুলো তাদের রাজনৈতিক চেতনা ও জ্ঞানের প্রসারে সহায়তা করলেও বাংলাদেশের বাস্তবতা অনেকাংশেই তাদের চেতনার বিপরীতে। যখন তারা রাজনৈতিক অসামঞ্জস্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, তখন অনেক সময় সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত করার উপযুক্ত ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তদুপরি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিকূলতাও তাদের আশা ও চেতনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নকে প্রায়শই বাধাগ্রস্ত করে তোলে। বাংলাদেশের জেন জি প্রজন্ম এমন এক সমাজে বেড়ে উঠেছে, যেখানে পুরোনো প্রথা এবং মূল্যবোধ এখনো দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। এমনকি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও পূর্ববর্তী প্রজন্মের মানসিকতার প্রচুর প্রভাব রয়েছে, যা তুলনামূলকভাবে জেন জি-এর উদার ও স্বাধীন মতাদর্শের সঙ্গে মেলে না। তারা যে প্রথাগত রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখছে, তা মূলত নির্দিষ্ট দলের আনুগত্য, পারিবারিক প্রভাব এবং ক্ষমতার দুষ্টচক্রের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ফলে, তাদের আদর্শবাদী মানসিকতা এখানে যথেষ্ট জটিলতার মুখোমুখি হয়। জেন জি প্রজন্ম যেখানে সমাজে স্বাধীন মতামত, রাজনৈতিক মুক্তি এবং উন্নয়ন চায়, সেখানে তাদের পরিবারের বড়রা এবং সমাজের প্রবীণরা অনেক ক্ষেত্রে সেই পরিবর্তনকে সহজভাবে নিতে পারে না। এই প্রজন্মের অনেকেই রাজনৈতিক দুর্নীতি, বৈষম্য এবং সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান গ্রহণ করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাঠামো তাদের প্রথাগত ধ্যান-ধারণার বিপক্ষে দাঁড়ানোর পথে অনেক বাধা সৃষ্টি করে। জেন জি প্রজন্মের রাজনৈতিক চিন্তা অনেক ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক। তারা দেশের রাজনৈতিক সমস্যা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে নিজেদের স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করতে চায়। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিরপেক্ষতা রক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে রাজনীতি প্রায়শই বিভক্তিকরণ এবং প্রতিযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার, যেখানে নিরপেক্ষতার চর্চা অনেক কঠিন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তাদের দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলার সাহস তাদের এই প্রজন্মের প্রতি একধরনের ভীতি এবং শঙ্কা সৃষ্টি করে। ফলে, তারা স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করার সুযোগ পেলেও সেটা একসময়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে পারে। এমনকি, এই প্রজন্মের মধ্যে যারা নিরপেক্ষ থেকে দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে, তাদেরও মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়। জেন জি প্রজন্মের একটি বড় অংশ রাজনীতির প্রতি আগ্রহী এবং দেশের উন্নয়নের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়। তাদের মধ্যে নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং তারা পরিবর্তনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চায়।