জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। মাত্র একশ’ দিনে দেশ ও জনগণের জীবনে নানা ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। যদিও সরকারের মেয়াদ খুবই স্বল্প, তবুও এই সময়ে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক। গণতান্ত্রিক চর্চা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক উন্নয়নে সরকারের ইতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট।
বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ : জুলাই বিপ্লবের অন্যতম বড় অর্জন হলো বাকস্বাধীনতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। অনেক দিন পরে, মানুষ ভীতিহীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারছে। সরকারের উদ্যোগে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।
অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা : অর্থনীতির চরম সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। *ডলার সংকট সমাধান* হয়েছে, এবং আগের সরকারের বকেয়া, বিশেষত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও আদানির দেনা পরিশোধ করা হয়েছে। বৈদেশিক শ্রমবাজার সম্প্রসারণের জন্য মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, ইতালি ও তুরস্কের সাথে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি কিছুটা কমেছে*, যদিও তারল্য সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতি এখনো রয়ে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা ও পরিবেশ উন্নয়ন : আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে। মব জাস্টিস বা জনতার বিচার কমেছে, শ্রমিক অসন্তোষও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে।
পরিবেশ সংরক্ষণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে : *পলিথিন নিষিদ্ধকরণ* এবং ঢাকার আশেপাশের খাল পরিষ্কার করা শুরু হয়েছে। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন রক্ষায় কাজ শুরু হয়েছে।
পররাষ্ট্রনীতির ভারসাম্য : সরকার একক নির্ভরশীলতা কমিয়ে বহুমুখী পররাষ্ট্রনীতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, চীন, তুরস্কের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে নজর দেওয়া হয়েছে। যমুনা সেতু এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় আহত প্রবাসীদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। দুবাইতে কারাবন্দি ৫৭ জন প্রবাসী শ্রমিকের সাজা মওকুফ করিয়ে দেশে ফেরানো হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয় : তবে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। মুদ্রাস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিচার বিভাগ ও প্রশাসন পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। ঢাকার বায়ু দূষণ মোকাবিলায় আরও সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। জুলাই বিপ্লবের সময় আহত ও নিহতদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। ভবিষ্যতের প্রত্যাশা : জুলাই বিপ্লবের সরকার গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, এবং জনস্বার্থে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিথ্যা উন্নয়নের গল্প শোনানোর বদলে দেশের প্রকৃত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, যা নতুন সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াবে। সরকারের আগামী দিনের পদক্ষেপগুলো কীভাবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে, তা দেখতে অপেক্ষায় থাকবে পুরো দেশ। তবে একশো দিনে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তা নিঃসন্দেহে দেশকে গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। লেখক ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিম, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক। তিনি সামাজিক পরিবর্তন ও গণতান্ত্রিক উন্নয়ন নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন।
কলামিস্ট, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ