ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আর কত অভ্যুত্থান

আমীন আল রশীদ
আর কত অভ্যুত্থান

সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে নানা মাত্রিক আলোচনার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন : ‘গণহত্যার বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে।’ বাংলাদেশে গত জুলাই মাসে সংঘটিত অভ্যুত্থানকে অনেকে ‘বিপ্লব’ এমনকি এই ঘটনাকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেও তুলনা করেন এই যুক্তিতে যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হলেও ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ‘বিপ্লব’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তবে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে যে বৃহত্তর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলো, সেটি নিঃসন্দেহে একটি বিরাট গণঅভ্যুত্থান।

প্রত্যাশা করা হয়েছিল যে এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি নতুন পথের দিকে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করবে। কিন্তু এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের বেশি পার হয়ে গেলেও সাধারণ মানুষের সেই প্রত্যাশা খুব একটা পূরণ হয়নি। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতি, নিত্যপণ্যের দাম, আইনশৃঙ্খলা তথা নাগরিকের নিরাপত্তা, মব ভায়োলেন্স এবং নানা গোষ্ঠীর বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নেমে গিয়ে জনদুর্ভোগ তৈরির ঘটনাগুলো জনমনে শঙ্কা বাড়াচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে শিক্ষার্থীরা এই অভ্যুত্থানের সামনে ছিলেন এবং যারা আপাতদৃষ্টিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অংশীদার, এমনকি ড. ইউনূস তার বক্তৃতায় যে শিক্ষার্থীদের তাদের ‘প্রাথমিক নিয়োগকর্তা’ বলে অভিহিত করেছেন, তারাই এখন বলছেন প্রয়োজনে আবার অভ্যুত্থানের ডাক দেয়া হবে। কেন তারা এটি বলছেন? কারণ, তারা যেভাবে চাইছেন দেশ সেভাবে চলছে না, নাকি অন্তর্বর্তী সরকার সেভাবে দেশ চালাতে পারছে না?

শিক্ষার্থী এবং অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা তাদের প্রতিনিধিরা মনে করেন এটি ‘বিপ্লবী সরকার’। যদিও তারা সবাই শপথ নিয়েছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতির কাছে বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে এবং তারা সংবিধান রক্ষারই শপথ করেছেন। অথচ তাদেরই একটা বড় অংশ এই সংবিধান বাতিলের দাবিতে সোচ্চার। ফলে এই ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে তাদের প্রধান অংশীদারদের একটি বড় ধরনের দূরত্ব আছে বলে প্রতীয়মান হয়। প্রশ্ন হলো, একটি বিরাট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে যে একটি নতুন ধরনের সরকার গঠিত হলো এবং তার আগে অজস্র মানুষ প্রাণ দিল, অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হলো, দৃষ্টিশক্তি হারাল- সেই রক্তাক্ত স্মৃতি এখনো যেখানে গণমানুষের স্মৃতিতে উজ্জ্বল, সেখানে সত্যিই আরেকটা অভ্যুত্থানের ডাক এলে আবার কত লোকের প্রাণহানি হবে? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, অভ্যুত্থানের লক্ষ্য উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষের মুক্তি ও দেশের কল্যাণ- তাহলে সেই অভ্যুত্থান কেন বারবার হবে এবং সেই অভ্যুত্থান কেন ব্যর্থ হবে?

বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম অভ্যুত্থানের শিকার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবার তাকে হত্যা করা হয়। এর আড়াই মাসের মাথায় ওই বছরের ৩ নভেম্বর আরেকটি অভ্যুত্থানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। এর চার দিনের মাথায় ৭ নভেম্বর আরেকটি অভ্যুত্থান- যেটিকে একপক্ষ বলে সিপাহি-জনতার বিপ্লব, আরেকপক্ষ বলে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস।

লেখক : সাংবাদিক ও লেখক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত