স্যাটেলমেন্টের দৌড়ে হারানো মানবিকতা : আমরা কি সত্যিই সুখী?
ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিম কলামিস্ট, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমাদের চারপাশে যে জীবনধারা প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে, তার কেন্দ্রে একটি শব্দই ঘুরপাক খায় ‘স্যাটেলমেন্ট।’ সমাজ আমাদের জীবনের জন্য একটি পূর্বনির্ধারিত ছক ধরিয়ে দিয়েছে: ভালো জিপিএ, ডিগ্রি, স্থায়ী চাকরি, বিয়ে, সন্তান, বাড়ি, গাড়ি- এসব অর্জনের মাধ্যমে জীবনের সার্থকতা নির্ধারণ করা। কিন্তু এই স্যাটেলমেন্টের দৌড়ে আমরা কি প্রকৃত সুখী হতে পারি? মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্য হলো, আমাদের জীবন অনিশ্চিত। এক সেকেন্ডের উপরও আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অথচ আমরা প্রতিনিয়ত নিজেরাই নিজেদের জন্য তৈরি করছি একেকটি টর্চার সেল। সমাজের এই সাফল্যের সংজ্ঞা মেনে চলতে গিয়ে মানুষ হারাচ্ছে তার মানসিক স্থিতি। উচ্চ রক্তচাপ, ইনসমনিয়া, ডিপ্রেশন, নিঃসঙ্গতা- এমনকি আত্মহননের মতো চরম পদক্ষেপও এখন স্যাটেলমেন্টের চেষ্টার ফলাফল। আমরা এই দৌড়ে ভুলে যাই জীবনের সহজ আনন্দগুলো- একটি প্রাণখোলা হাসি, একটুখানি ভালোবাসার ছোঁয়া, মায়ার মোহ, অথবা কোনো অপেক্ষার মিষ্টি উত্তেজনা। অথচ সেগুলোই আমাদের জীবনের আসল রঙ। আমাদের মাথায় সব সময় ঘুরপাক খায় অপূর্ণতার কষ্ট। ‘বাড়ি নেই, গাড়ি নেই, ব্যাংকে টাকা নেই, পার্টি নেই, ভিউ নেই।’ এই না পাওয়ার বেদনা আমাদের মস্তিষ্কের নিউরণগুলোকে ক্ষয়ে ফেলছে। আজকের সমাজে সাফল্য আর সুখের প্রদর্শনী আমাদের এতটাই গ্রাস করেছে যে, আমরা নিজেদের স্বাভাবিক আবেগ আর মানবিকতাকে বিস্মৃত হচ্ছি। এই দৌড়ে আমরা ভুলে যাই, সাফল্যের অর্থ কেবল বাইরের অর্জন নয়। এটি হতে পারে একটি নিখুঁত মুহূর্তের হাসি, একটি রোদ ঝলমলে সকালের সৌন্দর্য, অথবা কারও জন্য কিছু করে তোলার আনন্দ।
একটি প্রশ্ন আমাদের নিজেদের কাছে করতে হবে: স্যাটেল হতে গিয়ে কি আমরা আমাদের মানবিকতা হারাচ্ছি? যদি এই দৌড় আমাদের জীবনকে আনন্দহীন করে তোলে, তবে এই সাফল্যের মূল্য কতটুকু? জীবন একটি চলমান বিস্ময়। অনিশ্চয়তা এবং অসম্পূর্ণতার মাঝেও সেটি সুন্দর। আমাদের উচিত এই দৌড়ের বাইরে এসে নিজের ভেতরের সৌন্দর্য এবং আশপাশের সম্পর্কগুলোর গভীরতায় মনোযোগ দেওয়া। স্যাটেলমেন্টের বাইরেও যে জীবনে সুখের সন্ধান করা যায়, সেটি হয়তো আমাদের উপলব্ধির অপেক্ষায়।