খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির আশঙ্কা

ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংক খাতের নানামুখী সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাটে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। আগে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য আড়াল করে কমিয়ে দেখানো হতো। এখন সব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এতে দ্রুতগতিতে বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণের অঙ্ক। এদিকে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী মার্চের মধ্যে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে। এর ফলে কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস পর থেকে তা খেলাপি হবে; এখন যা হচ্ছে ছয় মাস পর। নতুন নিয়ম চালু হলে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ব্যাংকগুলো আরো দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখ্য, সরকার পতনের আগে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গত ১৫ বছরে ২৪টি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপের নামেও ভয়ানক জালিয়াতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ৫ আগস্ট সরকারের পতন হলে জুন প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের তথ্য ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করে বর্তমান সরকার। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকায়। প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করার কারণেই খেলাপি ঋণ বেড়ে যায় ২৯ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের চিত্র আগামীতে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। যেসব বড় শিল্প গ্রুপ বড় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে, সেই ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ আগামীতে খেলাপি হতে পারে।

বস্তুত খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ব্যাংক খাতের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাবে। খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি-ব্যাংকের এসব সূচকের অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৈশ্বিকভাবে বিভিন্ন ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকের এলসি গ্রহণ করতে চায় না। তখন তৃতীয় কোনো ব্যাংকের গ্যারান্টি দিতে হয়। এতে ওই ব্যাংককে গ্যারান্টি ফি হিসাবে বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এতে আমদানি খরচ বেড়ে যায়। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে অস্বস্তির মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। বস্তুত খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি অন্যসব সূচককে নেতিবাচক ধারায় নিয়ে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকার বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়ায় ব্যাংক খাত থেকে লুটপাট ও অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে। এতে বাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। তারল্যও বাড়তে শুরু করেছে। তবে বেশক’টি দুর্বল ব্যাংকে তারল্য সংকট এখনো প্রকট। যেহেতু খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতে দুরারোগ্য ব্যাধির রূপ নিয়েছে, সেহেতু এ খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংক খাত সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, শ্বেতপত্র প্রকাশেরও কথা রয়েছে। এ খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স যেসব সুপারিশ করবে, তা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।