ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইসকনের যতো আপত্তিকর কর্মকাণ্ড

ব্রি. জে. (অব.) রোকন উদ্দিন
ইসকনের যতো আপত্তিকর কর্মকাণ্ড

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন), যা সাধারণভাবে হরে কৃষ্ণ আন্দোলন নামে পরিচিত, এক জটিল ইতিহাসের অধিকারী সংগঠন, যা ধর্মীয় উদ্দীপনা, বৈশ্বিক প্রসার এবং চলমান বিতর্কে পরিপূর্ণ। মূলত গৌড়ীয় বৈষ্ণব হিন্দু সংগঠন হিসেবে পরিচিত ইসকন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালের ১৩ জুলাই নিউইয়র্ক সিটিতে এ.সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের মাধ্যমে। এর লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী কৃষ্ণ চেতনা ছড়িয়ে দেয়া। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুরে অবস্থিত ইসকনের প্রধান কার্যালয় আজকের দিনে এর বিস্তৃত আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের কেন্দ্রস্থল, যেখানে প্রায় এক মিলিয়ন অনুসারীর একটি বৃহৎ সংগঠন গড়ে উঠেছে। তবে, ইসকনের কার্যক্রমগুলো সবসময় বিতর্কমুক্ত ছিল না। অভ্যন্তরীণ সমস্যা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ এবং হিন্দু ধর্মের শিক্ষার ভুল ব্যাখ্যা দেওয়ার অভিযোগ নানা সময়ে উঠে এসেছে, যা সংগঠনটির বিরুদ্ধে একটি জটিল এবং প্রায়শই বিতর্কিত জনমত তৈরি করেছে। যদিও ইসকন একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে নিবন্ধিত, এর কার্যক্রম বিভিন্নভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে।

এই নিবন্ধটি ইসকনের ঐতিহাসিক শিকড়, বৈশ্বিক কার্যক্রম, আয়ের উৎস এবং সংগঠনের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগের বিশদ বিবরণ প্রদান করবে। বিশেষত বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করবে। ইসকনের শিক্ষা গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা ১৬০০ শতাব্দীর শুরুতে আধ্যাত্মিক নেতা চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রভাবে বিকাশ লাভ করে। ইসকন একেশ্বরবাদী হিন্দু ধর্ম প্রচার করে, যেখানে কৃষ্ণকে সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে গণ্য করা হয় এবং ভক্তির কঠোর পথ অনুসরণ করা হয়, যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যে যেমন ভাগবত গীতা এবং ভাগবত পুরাণে বর্ণিত। তবে, প্রভুপাদের অনুবাদ ও ভাষ্য মাধ্যমে ইসকনের ব্যাখ্যা প্রায়ই অন্যান্য হিন্দু দেবতাদের ‘অর্ধদেবতা’ হিসেবে চিত্রিত করে, যা তাদের এক নিম্নস্তরের অবস্থানে নামিয়ে দেয়। এই একচেটিয়া মনোভাব নিয়ে হিন্দু পণ্ডিত ও ঐতিহ্যবাদীদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যারা মনে করেন, ইসকনের হিন্দুধর্মের ব্যাখ্যা মূলধারার বিশ্বাস থেকে অনেকটাই ভিন্ন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসকন আমেরিকা, ইউরোপ এবং আফ্রিকায় প্রসারিত হয়েছে। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে অনুসারীদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি দেখা যায়, তবে ১৯৭৭ সালে প্রভুপাদের মৃত্যুর পর সংগঠনটি অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ছিল হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর পুনঃঅনুবাদের অভিযোগ এবং তরুণ ভক্তদের উপর কথিত ‘ব্রেনওয়াশিং’ বা মানসিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ, যা বিভিন্ন মামলা ও বিতর্কের জন্ম দেয় এবং ইসকনের জনমত ক্ষুণ্ণ করে।

ইসকন মূলত একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে কাজ করে, যেখানে আধ্যাত্মিক কার্যক্রম যেমন সংকীর্তন, পূজা ও ধর্মীয় আলোচনায় মনোনিবেশ করা হয়। সংগঠনটি নিরামিষাশন, ধ্যান এবং বৈদিক শিক্ষার প্রচারেও গুরুত্ব দেয়। ইসকনের মন্দিরগুলো যেগুলো এক ধরনের কমিউনিটি সেন্টার হিসেবেও কাজ করে, প্রায়শই ভক্ত ও সাধারণ জনগণের জন্য বিনামূল্যে নিরামিষ খাবার বিতরণ করে। এছাড়াও, ইসকন বেশ কয়েকটি স্কুল, খামার ও আধ্যাত্মিক আশ্রম পরিচালনা করে, যা তাদের অনুসারীদের মধ্যে কৃষ্ণ চেতনা জাগ্রত করতে সহায়ক।

সংগঠনের আয় মূলত সদস্যদের দান, সরকারি অনুদান, মন্দিরের সংগ্রহ, ধর্মীয় সাহিত্য ও পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে আসে। ইসকনের প্রকাশনা বিভাগ, ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট, প্রভুপাদের হিন্দু ধর্মগ্রন্থের অনুবাদ ও ভাষ্য বিক্রি করে উল্লেখযোগ্য অর্থ আয় করে। এতদ্ব্যতীত, শুভাকাঙ্ক্ষী, দাতাগণ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থার দান ইসকনের সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যক্রমকে অর্থায়ন করে। বাংলাদেশে ইসকনকে নিয়ে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা ভারতের হাইকমিশন থেকে তহবিল পায়, যা রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিতর্ক ও অভিযোগ

১। হিন্দু ধর্মগ্রন্থের ভুল ব্যাখ্যার অভিযোগ : ইসকনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের। একটি সমালোচনা হলো তাদের দ্বারা হিন্দু ধর্মগ্রন্থের প্রচলিত ব্যাখ্যার পুনঃবিবেচনা করা হচ্ছে। সমালোচকরা দাবি করেন, ইসকনের গ্রন্থগুলোতে কৃষ্ণকে সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে তুলে ধরা হয়, যেখানে শিব ও দুর্গার মতো অন্যান্য দেবতার অবমূল্যায়ন করা হয় এবং তাদের ‘অর্ধদেবতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রচলিত হিন্দু অন্তর্ভুক্তিবাদের এই বিচ্যুতি ইসকনের ধর্মকে হিন্দুধর্মের একটি সরলীকৃত সংস্করণ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হয়, যা সমালোচকদের মতে বিভ্রান্তিকর এবং হিন্দুধর্মের বিভিন্ন ঐতিহ্যের প্রতি অবমাননাকর।

২। যুক্তরাষ্ট্রে মানসিক প্রভাব বিস্তার ও আইনি মামলা : ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে, ইসকন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্রেনওয়াশিং’ বা মানসিক প্রভাব বিস্তার, অবৈধভাবে কারাগারে রাখা এবং তরুণ ভক্তদের অপহরণের অভিযোগে বিভিন্ন আইনি জটিলতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের People v. Murphy মামলায় নিউইয়র্ক আদালত হরে কৃষ্ণকে একটি বৈধ ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে পরবর্তী মামলাগুলো, যেমন ১৯৮৪ সালের George v. ISKCON, সংগঠনের অভ্যন্তরে কথিত মানসিক প্রভাবের অভিযোগ তুলে ধরে। এই মামলায় এক তরুণী ইসকনে যোগ দেয় এবং অভিযোগ ছিল যে, ইসকন তার অবস্থান নিয়ে তার বাবা-মাকে বিভ্রান্ত করেছিল। মামলাটি বিভিন্ন রায়ের দিকে নিয়ে যায়; কিছু অভিযোগ খারিজ করা হলেও শেষ পর্যন্ত ইসকন পরিবারটির মানসিক দুর্দশার জন্য দায়ী বলে সাব্যস্ত হয়।

৩। নেতৃত্ব কেলেঙ্কারি ও আর্থিক অসদাচরণ : ইসকনের আরেকটি বড় বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন কীর্তনানন্দ স্বামী বা স্বামী ভক্তিপাদ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ বৃন্দাবন সম্প্রদায়ের একজন প্রাক্তন নেতা ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ইসকনের নীতিমালা লঙ্ঘনের কারণে তাকে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং পরে তাকে প্রতারণা এবং শিশু নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তার মামলা ইসকনের জন্য তীব্র পর্যবেক্ষণের সময় চিহ্নিত করে, যেখানে নেতৃত্বের অসদাচরণে অভ্যন্তরীণ তদারকি ও জবাবদিহির অভাবের জন্য সংগঠনটি সমালোচিত হয়।

৪। শিশু নির্যাতনের অভিযোগ : ১৯৯০-এর দশকে, ইসকনের অধীনস্থ বোর্ডিং স্কুলগুলোতে শিশু নির্যাতনের ব্যাপক অভিযোগ সামনে আসে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ইসকন পরিচালিত স্কুলগুলোতে ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে অনেক শিশু শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। এই নির্যাতনের জন্য আংশিকভাবে ইসকনের নেতৃত্ব কাঠামোকে দায়ী করা হয়, যা গার্হস্থ্য জীবন ও শিশুদের মূল্যায়নকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। ফলে শিশুদের প্রতি অবহেলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জনসমালোচনা ও আইনি চ্যালেঞ্জের পর ইসকন ‘চাইল্ড প্রোটেকশন অফিস’ এবং ‘ইসকন রিজলভ’ প্রতিষ্ঠা করে, যা শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত অভ্যন্তরীণ সংস্থা হিসেবে কাজ করে।

বাংলাদেশে ইসকনের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ: সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশে এমন কিছু কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হচ্ছে, যা রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। আগে যেখানে এটি মূলত ধর্মীয় সংগঠন ছিল, সেখানে এখন সমালোচকরা অভিযোগ করছেন যে, ইসকন আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ডের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে অংশ নিচ্ছে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসকন বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে আর্থিক সহায়তা পায়, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিস্থিতিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। সমালোচকদের মতে, ইসকন বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের একটি বানোয়াট চিত্র তুলে ধরছে। তারা মনে করেন, এই চিত্রটি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি এবং সমর্থন লাভের জন্য অতিরঞ্জিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরে ইসকন আন্তর্জাতিক মতামত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে এবং দেশটির ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

সমালোচকরা বলেন, এই ধরনের প্রতিবেদন ভারতের কিছু স্বার্থের পক্ষে উপকারী, কারণ এটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই ধারণা থাকলে বাংলাদেশের বাণিজ্য, পর্যটন এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুদের জন্য বিরূপ পরিবেশ হিসেবে উপস্থাপন করে ইসকনের এই প্রচারণা দেশটিকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে, যা বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

রাজনৈতিক ধারণাগুলোর বাইরে ইসকনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে যে, সংস্থাটি হিন্দু সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। হিন্দু সম্প্রদায় হুমকির মুখে রয়েছে বলে ইসকন প্রচারণা চালাচ্ছে, যা বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোকে অস্থিতিশীল করে সাম্প্রদায়িক বিভেদ বৃদ্ধি করছে।

এই অভিযোগ আরো গুরুতর হয়ে ওঠে যখন বলা হয় যে, ইসকনের কার্যকলাপ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র-এর) উদ্দেশ্য সাধনে সহযোগিতা করছে। সমালোচকরা বিশ্বাস করেন যে, ইসকন সম্ভবত বাহ্যিক সংস্থাগুলোর সাথে মিলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে একটি বিভ্রান্তিকর ধারণা ছড়াচ্ছে। এই ধরনের বাহ্যিক হস্তক্ষেপ, যদি প্রমাণিত হয়, তবে এটি ইসকনের মূল লক্ষ্য কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার ও আধ্যাত্মিকতার প্রচারের থেকে একটি বড় বিচ্যুতি হিসেবে পরিগণিত হবে।

চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক এক সহিংস ঘটনায় ইসকন সদস্যদের জড়িত থাকার পর ইসকনকে ঘিরে বিতর্ক আরও তীব্র হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসকন সদস্যরা চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে এবং সেখানে তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনা সংগঠনের উদ্দেশ্য ও কার্যপদ্ধতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন যে, এই ধরনের আক্রমণ উদ্বেগজনক, কারণ এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ইসকন একটি শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় আন্দোলন থেকে সহিংসতা অবলম্বনের দিকে ঝুঁকছে।

এই ঘটনাগুলো সমালোচকদের কাছে ইসকনকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করার কারণ হয়েছে। সমালোচকদের মতে, ইসকনের আগ্রাসী কার্যকলাপ এবং এর কথিত সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক প্ররোচনা বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। চট্টগ্রামের এই ঘটনাটি ইসকনকে আরো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার কথাই সামনে নিয়ে এসেছে, যেখানে কেউ কেউ মনে করছেন যে এটি সন্ত্রাসী সংগঠনে রূপান্তরিত হতে পারে।

অভিযোগ এবং সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার কারণে বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বা সরাসরি নিষেধাজ্ঞার দাবি বাড়ছে। অতীতে বিভিন্ন দেশ ইসকনের কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে, বিশেষত যখন সংগঠনের কার্যকলাপ ধর্মীয় অনুশীলনের গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বা সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পথে এগিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের উচিত জাতীয় স্বার্থ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

যারা এ দাবির পক্ষে আছেন তাদের মতে, ইসকনের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করলে সংগঠনটির কথিত রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব রোধ করা যাবে। ইসকনের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগে উদ্বিগ্ন নাগরিকদের মতে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ইসকনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। তাদের মতে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটা বার্তা দিতে পারবে যে, দেশটি এমন কোনো বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ সংগঠনকে প্রশ্রয় দেবে না, যা দেশের সার্বভৌমত্ব, সামাজিক সংহতি বা সাম্প্রদায়িক শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত