ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অন্যের সুখে নিজের সৌভাগ্য!

রাজু আহমেদ
অন্যের সুখে নিজের সৌভাগ্য!

যে আঘাত আপনাকে যন্ত্রণা দেয় সে আঘাত অন্যকেও কষ্ট দেয়। কাউকে আঘাত করার আগে, অন্যকে ঠকানোর আগে কিংবা কাউকে অসম্মান করার আগে ভাববেন- এটা যদি আপনার সাথে ঘটতো তবে আপনার মনের অবস্থা কেমন হতো? কারো বিশ্বাস ভাঙার পূর্বে, কারো সাথে প্রতারণা করা অগ্রে কিংবা কারো শান্তি নষ্ট করার আগে নিজেকেও ভিকটিম হিসেবে কল্পনা করবেন। তারপরেও বিবেক যদি কাউকে আঘাত করতে বলে, কাউকে কাঁদাতে নির্দেশ দেয় কিংবা কাউকে ঠকাতে উৎসাহিত করে, তবে আর নিষেধ করব না। তবে মনে রাখবেন, ন্যায়-অন্যায় অন্যকে যা উপহার হিসেবে দিবেন আপনিও তা ঋণের কিস্তি হিসেবে সুসদসহ ফেরত আসবে। পূর্ণ জামানত ফেরত পাবে আখেরে! সওদাগর হলে দুঃখ নয় সুখ ফেরি করুন। কাউকে হাসাতে কিংবা বাঁচাতে সামান্যই ত্যাগ করতে হয়। আমরা যদি লোভের গোলামি না করি, ভোগের তৃষ্ণায় না মরি তবে আমাদের আরশির পড়শীরাও ভালো থাকে। ভাবুন তো, একটা সুখের জীবন, আরেকটি দুঃখের জীবন- কোনটাই থেমে থাকবে? দুটোই কেটে যাবে। আপনি যদি কারো সুখের কেন্দ্র হতে পারেন, কারো শান্তির বিচরণ ক্ষেত্র হতে পারেন, তবে সেটা কতোখানি সৌভাগ্যের। সবাই তো মানুষের উপকারে আসে না। আপনার দ্বারা যদি পরের অল্প অল্প উপকার হয়, ভালো থাকা স্থির হয় কিংবা মনটা ভালো হয়ে যায়, তবে সেই চেষ্টায় কৃপণতা কেন থাকবে? আচরণে-বিচরণে বড় হয়ে উঠুন।

বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মত বুক উজার করে ভালোবাসুন- নিজের ভালোথাকা টেকসই হবে। কখনোই কাউকে বকা দেওয়া, আঘাত করা কিংবা ঠকানো উচিত নয়। কখনো যদি এসবে একান্ত বাধ্য হতে হয় তবে ন্যায্যতা রাখুন। দায়িত্বের অতিরিক্ত কিছু নয়। যার যতটুকু ভুল তাকে ঠিক ততটুকুর শাস্তি দিন। তবে ক্ষমা সব সময় মহোত্তম। ক্ষমতা আছে বলে কাউকে ধমকানো যায়, দাঁড় করিয়ে রাখা যায়, ফিরিয়ে দেয়া যায় কিংবা আদেশও করা যায় তবে নিষ্প্রয়োজন অংশটুকু জীবন থেকে মুছে ফেলুন। কাউকে উপকার না করলে আপনাকে দায়ী করা যায় না; কিন্তু যদি ক্ষতি করেন তবে তিনি দেখছেন। প্রায়শ্চিত্ত ছাড়া পাপ মুছবে না। কথা বলার আগে ভাবুন, যাতে ফিরিয়ে নিতে না হয়। এমন কথা না বলি যা গিলে নেওয়া না যায়। কারো চোখের পানির কারণ হলে তার মূল্য ভীষণ! যা আপনি সহ্য করতে পারেন না, তা অন্যের ওপর চাপাবেন না। উপেক্ষা, অবহেলা কিংবা নিন্দা আপনি সহ্য করতে পারলেও অন্যকে সহ্য করানোর এক্সপেরিমেন্ট ভুলেও করবেন না। সম্পর্ক খোওয়াবেন, মানুষ হারাবেন। খারাপ আচরণ করার ব্যাপারে ভীষণ কৃপণ হোন। নিজের সহ্যসীমা বাড়ান। জীবনের মন্দবিষয়, অন্ধকার দিকের পর্দা এই জীবনে উন্মোচিত করবেন না। অন্ধকারকে সর্বশক্তি দিয়ে ঢেকে রাখুন। আপনি অন্যদের থেকে যেমন আচরণ আশা করেন, অন্যদের ব্যাপারেও তেমন দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন। কাউকে ঠকানোর চিন্তা মাথায় আসতে আসতেই আপনার জন্য ঠকের পরিণতি নির্দিষ্ট হয়ে যায়। কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হতে বহুবার ভাববেন। আপনার বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্র করলে কীভাবে সামলাবেন?- ছক আঁকুন!

মনের রাখবেন, চড়-থাপ্পর চামড়া অবধি পৌঁছায় কিন্তু কথার আঘাত রূহ অবধি যায়। দীর্ঘদিন মনে থাকে! কাউকে খোঁচা দেওয়ার আগে নিজেকে কল্পনায় ক্ষতিগ্রস্তের দুয়ারে রাখবেন। কারো নামে কুটনামি করা, কারো দালালি করা কিংবা কাউকে তৈলমর্দন করে অবৈধ সুবিধা নেওয়া- কাপুরষতার চূড়ান্ত। আপনার চেয়ে যোগ্য, সৎ ও সজ্জনকে বঞ্চিত করার ভুল ভুলেও করবেন না। জীবনকে সর্বদা বীরপুরুষের পোশাক পড়াবেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ প্রকাশ্যে করবেন। কাউকে শত্রু ভাবছেন সেটা জানান দিবেন। ব্যক্তি স্বার্থের জন্য অন্যকে পদানত করলে জীবন থেকে সুখ আড়ালে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে না পারুন অন্তত ঘৃণার কারণ হবেন না। মানুষকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসুন। মনে রাখবেন, জীবনের সফর সংক্ষিপ্ত। এই অল্পায়ুর দৌড়ে আপনাকে ভালো বলার, ভালো জানার, ভালোবাসার কয়েকটি মানুষ থাকুক। ঘৃণা বয়ে বেড়ানোর মাঝে অহংকার নেই বরং ধ্বংস টানছে। কথা ও কাজে, আচরণ ও বিশ্বাসে যেনো সাবধান থাকি। শব্দের আঘাত চিরস্থায়ী; তাই কথা বলার আগে ভাবুন- আপনার শব্দ কি নির্মাণ করবে, নাকি ধ্বংস করবে?

প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত