ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকনের উস্কানিতে এবার চট্টগ্রামের আদালতপাড়ায় এক আইনজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হলে ইসকনের ছদ্মবেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগও রাস্তায় নেমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আদালত এলাকায় নিরপরাধ আইনজীবীকে হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশের ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আত্মগোপনে থাকা স্বৈরাচারের দোসররা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একের পর এক নানা রকম দাবি-দাওয়া সামনে এনে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৬ বছরের বেপরোয়া লুণ্ঠনে দেশের অর্থনীতি দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে এসে উপনীত হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধ্বংস হয়ে গেছে। রাষ্ট্রকে নাজুক অবস্থায় রেখে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ, তার মাফিয়া সিন্ডিকেট, অলিগার্ক এবং ভারতীয় এজেন্টরা সমন্বিতভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলে পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে গত সাড়ে তিনমাসে প্রতিবিপ্লবের প্রতিটি অপচেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের চরম বিপর্যয়ের পর, শুরু থেকেই হাসিনা ও তার পৃষ্ঠপোষক মোদি প্রশাসন ও বিজেপি’র মিডিয়া এজেন্টরা বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের কল্পকাহিনী প্রচার করে একটি সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিনের মাথায় ঢাকায় হিন্দুদের জড়ো করে শাহবাগ দখলের অপতৎপরতা দেখা গেছে। আরো বেশ কয়েকটি সমাবেশ ও প্রতিবিপ্লবের অপচেষ্টা ব্যর্থ হলেও সনাতন জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে ইসকনের প্রভুরা উস্কানি ও অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা জারি রেখেই ক্ষান্ত হয়নি, ভারত সরকার, বিজেপি এবং সে দেশের হিন্দুত্ববাদী গণমাধ্যম বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকিও জারি রেখেছে।

চট্টগ্রামের পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ ও সনাতন জাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা যায়। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলায় আটক হওয়ার পর তার পক্ষে ভারত সরকার এবং বিজেপির তরফ থেকে যে প্রতিক্রিয়া ও বিবৃতি দেয়া হয়েছে, তাতে স্পষ্ট হয়ে যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আসলে ভারতীয় স্বার্থ রক্ষার গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছেন। ভারতীয়রা দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক-বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার কথা ভুলে গিয়ে বাংলাদেশে তাদের এজেন্টদের রক্ষা ও পুনর্বাসনে শিষ্টাচার ও ন্যায্যতার সীমালঙ্ঘন করে চলেছে। তাদের এহেন আচরণ, হুমকি-ধামকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত বলেই পরিগণিত হচ্ছে। একাত্তরে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত রাষ্ট্র আধিপত্যবাদের বশংবদ স্বৈরাচারের হাত ধরে ভারতীয় বশংবদ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। দেশের মানুষের স্বপ্ন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে অতীতের ধারাবাহিকতায় চব্বিশের জুলাই-আগস্টে হাজারো প্রাণের বিনিময়ে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। এই বাংলাদেশ হবে স্বৈরাচার মুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত, বৈষম্যহীন, আধিপত্যবাদের অর্গলমুক্ত ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ। ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্ন ও ছাত্র-জনতার রক্তের সেই প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করতে পরিকল্পিতভাবে দেশকে সংঘাত-সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সমর্থক-পৃষ্ঠপোষকরা। দলমত ভুলে জাতীয় ঐক্য অটুট রেখে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গত ১৬ বছরে এ দেশে বিচারের নামে অনেক প্রহসন ঘটেছে। রাজনৈতিক কারণে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষকে বছরের পর বছর ধরে মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সে সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিরুদ্ধে কথা বললেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ দেখানো হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদী সন্ত্রাসী গোষ্টিকে পুর্নবাসিত করতে ইসকন ও সনাতন জাগরণ মঞ্চ ফ্যাসিবাদী শক্তির অণুঘটক হিসেবে কাজ করছে। তারা দেশকে অশান্ত করার এবং দাঙ্গা বাঁধানোর উস্কানি দিচ্ছে। তারা প্রকাশ্য আদালতপাড়ায় নামাজি আইনজীবীকে পৈশাচিক কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করেছে। আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তবে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী পাল্টা হামলা বা সাম্প্রদায়িক উস্কানির ফাঁদে পা দেয়নি। তারা অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আটকের প্রতিবাদ বিক্ষোভে ইসকন সদস্যদের সাথে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মীদেরও সশস্ত্র অবস্থায় দেখা গেছে বলে খবর বেরিয়েছে। অতএব বোঝাই যাচ্ছে, পতিত স্বৈরাচারের দলীয় দোসর এবং ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের সেবাদাস ইসকন, সনাতন জাগরণ মঞ্চের কুশীলবরা সংঘবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে সংঘাত-সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারে ভারত সরকারের বিবৃতির পাল্টায় বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতিই যথেষ্ট নয়। আরো জোরালো বক্তব্য ও ন্যারেটিভ তুলে ধরতে হবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ঐক্য নস্যাতের সুগভীর ষড়যন্ত্রও দেখা যাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক ও ছাত্রবেশে থাকা স্বৈরাচারের দোসর ও ছাত্রলীগ নানা ইস্যু সৃষ্টি করে ছাত্র সমাজকে হানাহানি ও সংঘাতের উস্কানি দিচ্ছে। রক্তপাত ঘটাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অন্তর্র্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তা নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে মানুষ হত্যার উন্মাদনায় মত্ত উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের শান্তির ললিত বাণী শুনিয়ে লাভ নেই। ভিডিও ফুটেজ দেখে এসব হন্তারক দানবদের ধরে দ্রুত বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। ছাত্রলীগের মত ইসকন নিষিদ্ধের দাবি ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থেই আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে হবে। আইনজীবী জনতার উপর হামলা এবং সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার সাথে জড়িত এবং উস্কানিদাতা সকলকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত