প্রবীণ জীবনে স্ত্রীর ভূমিকা

হাসান আলী

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রবীণ জীবনে স্ত্রীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেবাযত্ন, ওষুধপত্র, খাবার দাবার ইত্যাদি বিষয়ে স্ত্রীর নজরদারি থাকে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় দাম্পত্য জীবনে স্বামীকে বিশেষ গুরুত্ব দেবার রেওয়াজ চালু রয়েছে। কার্যতঃ সংসারে স্ত্রীর অভিভাবক স্বামী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বামীর আয়ে সংসার চলে। যেসব স্ত্রী কর্মজীবী তারা যৌথভাবে সংসারের খরচ বহন করে। বয়সের প্রার্থক্য থাকার কারণে স্বামীকে আগে ভাগেই নানান রকমের রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। পক্ষাঘাত গ্রস্থ, স্ট্রোক, পারকিন সন্স, ডিমেনশিয়া, আলঝাইমার্সে আক্রান্ত স্বামীর দেখা শোনার পুরো দায়িত্ব স্ত্রীর কাঁধে পড়ে। সেসময় ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। পিতার সেবাযত্ন চিকিৎসায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন খুবই কঠিনবিষয়। সন্তানরা ক্ষেত্র বিশেষ আর্থিক সহায়তা করে কিংবা খণ্ডকালীন সেবাযত্নে অংশগ্রহণ করে। স্বামীর চিকিৎসায় সেবাযত্নে মূল দায়িত্ব পালন করতে হয় স্ত্রীকে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অসুস্থ স্বামীর শয্যা পাশে নির্ঘুম রাত্রিযাপনের কষ্টকর স্মৃতি অনেক স্ত্রীর রয়েছে। স্ত্রীর ছুটি নেই, বেড়াতে যাবার সুযোগ থাকে না, নিজের ইচ্ছা মতো বিশ্রাম নিতে পারে না। অনেক স্ত্রী সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে না। সামাজিক সমালোচনার ভয়ে আনন্দ উৎসবে, হাসি ঠাট্টায়, দূরের ভ্রমণে, গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, নাটক সিনেমায় অংশ নিতে পারেন না। উল্টো ধর্ম কর্মে অধিক মনোযোগী হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিতে দেখা যায়। স্বামীর আরোগ্য লাভের সম্ভবনা না থাকলে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অসুস্থ স্বামীর শয্যা পাশে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা স্ত্রীর মানসিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে উঠে। ছেলে মেয়ে, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা আসে কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যায়। স্ত্রীকে সবসময়ই পাশে থাকতে কিংবা নজরদারি করতে হয়। যেসব স্বামীর আর্থিক অবস্থা খারাপ কিংবা চিকিৎসা করাতে গিয়ে ফতুর হয়ে গেছে তাদের স্ত্রীরা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার কর্জ, সাহায্যে সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালায়। যেসব স্ত্রীরা যৌবনে স্বামীর অবহেলা, নির্যাতন, অপমান, অসম্মানের শিকার হয়েছেন তারা স্বামীর সেবা যত্ন আন্তরিকভাবে করেন না কিংবা করতে চান না।

যে সকল স্ত্রীর-স্বামী শারীরিকভাবে মোটামুটি সুস্থ এবং চলাফেরা করতে সক্ষম তারা কমবেশি ভালো আছেন। স্বামীর সাথে ঝগড়া করে, গল্প করে, অভিমান করে, শপিং করে, ঘুরে বেড়িয়ে সময় কাটিয়ে নিচ্ছেন। বয়স বাড়তে থাকলে চলাচল সীমিত হয়ে যায়। বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, যোগাযোগ কমে যায়, আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক শুকনো হয়ে পড়ে। রক্তের সম্পর্কের লোকজনের সাথে স্বার্থের দ্বন্দ্বগুলো প্রকাশ্যে চলে আসে। স্ত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ স্বামীকে দারুণ অপছন্দ করে। তার সাথে একত্রে বসবাসকে নরকের সাথে তুলনা করে। স্বামীর খবরদারী, বকাবকি, রাগ, ক্ষোভ, জেদ দেখতে দেখতে কেউ কেউ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন। ভালোবাসা হীন, উপায়হীন দাম্পত্য কাটিয়ে আসা স্ত্রীরা নতুন করে স্বামীর প্রতি অধিক মনোযোগী হতে চায় না।

যতটুকু সেবা যত্ন করে তা দীর্ঘ সময়ে একত্রে বসবাস করা থেকে গড়ে উঠা মায়া মমতা কিংবা দায় বোধ থেকে। অনেকটা ‘আহা বেচারা!’ মনোভাব থেকে কিংবা দয়া করুণা কৃপা করে। যৌবনে স্ত্রী, সন্তানের প্রতি অমনোযোগী স্বামী বার্ধক্যে পৌঁছে স্ত্রীর মনোযোগ পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। স্ত্রীকে নিজের কাছে সবসময় দেখতে চান। কোথাও বেড়াতে যেতে দিতে চান না কিংবা বেড়াতে গেলে গেলেও তাড়াতাড়ি চলে আসবার জন্য বারবার তাগাদা দিতে থাকে। সামাজিক নানা কারণে অনেক স্ত্রী-স্বামীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করেন। অতীতে বিশ্বাস ভঙ্গকারী স্বামীরা অনেক নাজুক অবস্থায় পড়েন। তাদের অন্য নারীর সাথে হেসে কথা বলা ও বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। স্বামী নির্যাতন করে সুখ পাওয়া স্ত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একদা নিপীড়ক এখন নিপীড়নের শিকার হতে দেখা যাচ্ছে। বার্ধক্যে স্ত্রীর সহযোগিতা, সমর্থন, ভালোবাসা পাওয়া পরম সৌভাগ্যের। এমন সৌভাগ্য কয়জনের হয়!