ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মাফিয়াতান্ত্রিক স্বৈরশাসনে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ভারত সরকার এবং সেখানরকার হিন্দুত্ববাদী গণমাধ্যমের বাংলাদেশবিরোধী প্রোপাগান্ডা অস্বাভাবিক মাত্রায় উপনীত হয়েছে। গত সাড়ে তিন মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল ও ব্যর্থ করে দেয়ার যেসব অপতৎপরতা দেখা গেছে, তার সবগুলোর সাথেই শেখ হাসিনা এবং ভারতীয় যোগসাজশ স্পষ্ট। শাহবাগে হিন্দু মহাজোটের সমাবেশ ও সচিবালয়ে আনসারদের ঘেরাও কর্মসূচি থেকে শুরু করে রিকশা-অটোচালকদের অবরোধ আন্দোলন এবং সর্বশেষ সনাতনী জাগরণ জোটের উস্কানি এবং চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের হাতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডসহ প্রতিটি উগ্রবাদী ঘটনার সাথে ইসকন এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের মদদ ও অংশগ্রহণ দেখা গেছে। সরকারের প্রশাসন, গণমাধ্যম, শিক্ষাঙ্গন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে ঘাঁপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসররা পারস্পরিক হানাহানি ও বিভক্তির জাল বিছিয়ে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল এজেন্ডা হচ্ছে, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং এ লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার নিশ্চিত করা। অন্যদিকে ভারতীয় এজেন্ট ও তাঁবেদাররা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ন্যারেটিভের আলোকে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বিভাজন সৃষ্টি করে ভারতের আধিপত্যবাদী স্বার্থ টিকিয়ে রেখে অর্থনৈতিক লুণ্ঠনের মৌরসি পাট্টা অব্যাহত রাখতে চাইছে। কিন্তু বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যে কোনো মূল্যে ভারতীয় ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সাম্য ও মানবিক মর্যাদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বির্নিমাণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

ষোল বছর ধরে হাজার হাজার মানুষের গুম-খুন, লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি-পাচার, ছাত্র-জনতার উপর গুলির নির্দেশ দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হতাহত করার পরও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কোনো আক্ষেপ বা অনুশোচনা নেই! ভারতে পালিয়ে যাওয়ার দিন থেকেই বাংলাদেশ বিরোধী হুঙ্কার ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টিতে অসন্তোষ এবং তাকে সেখান থেকে রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া থেকে বিরত রাখতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও মানুষ হত্যার পরিকল্পনা ও নির্দেশনাসহ শেখ হাসিনা তার ঘৃণ্য অপপ্রচার চালিয়েই যাচ্ছে। একটি ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে ইসকনের তাণ্ডব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ ও এসিড নিক্ষেপ, রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানিদাতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারী সেজে চট্টগ্রাম আদালত পাড়ায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীদের যোগসাজশ ও অংশগ্রহণের তথ্য ও চিত্র বেরিয়ে এসেছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে ভারত সরকারের বিবৃতি, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাংলাদেশ সীমান্ত অবরোধের হুমকি এবং বাংলাদেশে নৈরাজ্য ও গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির ধারাবাহিক উস্কানি ও সহিংস ঘটনাবলীর সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা একই সূত্রে গাথা। তারা যে সর্বপ্রকারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে ব্যর্থ করে দিতে চায়, তা স্পষ্ট। এহেন বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার মতভেদ ও দূরত্ব ঘুচিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা প্রতিহতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছেন। পতিত স্বৈরাচারের দোসর এবং এজেন্টদের সহযোগিতায় সনাতনী জাগরণ জোট ও ইসকনের মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ডাহা মিথ্যা তথ্য ও বয়ান সৃষ্টি করে সীমান্ত অবরোধসহ ভারতীয় হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র প্রস্তুতের যে কোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও সজাগ থাকতে হবে। ওরা প্রকাশ্য মানুষ হত্যা করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে দেশে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করছে। সেই ফাঁদে পা না দিয়ে ধৈর্য ও সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার সাথে জড়িতদের অনেকে এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকলকে এবং নেপথ্যের ইন্ধনদাতাদের ধরে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে চট্টগ্রামে ছাত্র সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার সাথে জড়িত ও নেপথ্যের কুশীলবদের দ্রুত আটক করে তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিল্পাঞ্চলে নাশকতার অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সর্বত্র গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ছাত্র-জনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে রয়েছে। ভারতীয় হেজিমনি তৎপরতা সম্পর্কে বিশ্বসম্প্রদায়ও অবহিত রয়েছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ মালয়েশিয়ার উন্নয়নের রূপকার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সব ধরনের বিভক্তি এড়িয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন। পতিত স্বৈরাচারের দোসর এবং ভারতীয় অপপ্রচার, উস্কানি, সহিংসতা মোকাবিলা করে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের অভ্যন্তরে ঘাঁপটি মেরে থাকা মুখোশধারি ব্যক্তিরা যেন ভ্রান্ত ন্যারেটিভ সৃষ্টি করে ছাত্র-জনতার ঐক্যে ফাঁটল সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারেও সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। এ ধরনের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সরকার ও প্রশাসন থেকে বের করে দিতে হবে।