ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সারা দেশে যেভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছিল, দেশবাসীর সর্বাত্মক সমর্থনে ও সহযোগিতায় প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তা সামাল দিয়ে প্রায় স্বাভাবিক করে এনেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কল্পকাহিনী প্রচার করে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অংশ এর প্রতিকারে মাঠে নেমে দেশ অস্থিতিশীল করে তুলেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের ব্যানারে যে কর্মসূচি পালন করা হয়; তা অস্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কথিত সংগঠনটির মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের গ্রেফতার এবং তৎপরবর্তী জামিন আবেদনের শুনানির দিন আদালতে তার অনুসারীদের হিন্দুত্ববাদী উগ্রতা প্রদর্শিত হয়েছে। সেখানে এক তরুণ আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
দেশব্যাপী কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিকার চাইতে গিয়ে উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আইন লঙ্ঘনের বেপরোয়া প্রবণতা সবাইকে অবাক ও বিস্মিত করেছে। এসব কর্মসূচি যে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট, তা সহজে অনুমেয়। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এর মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে- তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে দেশপ্রেমিক সব জনতার যে সিসা ঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, তার কোনো বিকল্প নেই- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই প্রধান উপদেষ্টার কণ্ঠেও। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সাক্ষাৎকালে এমন আহ্বান জানান তিনি।
ঘটনার পরম্পরায় এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, অতি সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে; এগুলো বিচ্ছিন্ন বলে গুরুত্ব না দেয়ার কোনো অবকাশ নেই; বরং এসব বিশৃঙ্খল ঘটনা একই সুতায় বাঁধা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের পতন যারা মেনে নিতে পারেনি; তারা সবাই সারা দেশে বিশৃঙ্খলা-অরাজগতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে; এটি জোরগলায় বলা যায়। তাই ইসকন ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের কার্যক্রম দেশপ্রেমিক সবার মনে গভীর সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। আমরা মনে করি, দেশের যেকোনো সংকটকালে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা ছাড়া বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্য কোনো পথ নেই। তাই দল-মত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সবাইকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একযোগে কাজ করতে হবে। ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থ একপাশে সরিয়ে রেখে আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিপদ মোকাবিলা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ঝুঁকিতে থাকার অর্থ সবাই বিপদে থাকা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি ও দলের চেয়ে দেশের স্বার্থই বড় কথা। তাই দেশের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে হবে।