ঢাকা ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আমাদের অনিয়মে আমাদের কষ্ট

সাঈদ চৌধুরী
আমাদের অনিয়মে আমাদের কষ্ট

কষ্ট পাওয়ার মতো কারণ আমাদের আশপাশে হাজারটি! এই কারণগুলো ওভারটেক করার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই, কারণ আমরা এগুলো থেকে মুক্তি চাই; কিন্তু সে পথে চলতে চাই না! আমরা কখনোই আমাদের শিক্ষাকে সঠিক জায়গায় প্রতিস্থাপিত করতে পারিনি। পিঁপড়ার অনুবীক্ষণিক চেহারা দেখলে আপনি যদি কল্পনা করেন অনেক বড় আকৃতির পিঁপড়া আপনাকে খেতে আসছে তবে আমি নিশ্চিত ভয়ে ঘুমোতে পারবেন না কারণ এই চেহারা ডাইনোসরের চেয়েও ভয়ানক এবং এ ভয় আপনাকে মনস্তাত্বিক শাস্তিও দিতে শুরু করবে। এক সময় এই চিন্তা আপনাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলতে পারে। বাস্তবিক অর্থেও তাই। পিঁপড়ার মুখের ফরমিক এসিড এত বড় আকারে আমাদের উপর ছড়িয়ে পড়লে আমরা সত্যিই বাঁচবো না! গাজীপুরের তরুণ কবি ও লেখক শাহান সাহাবুদ্দিন’র বোনের মেয়ে আমাদের ছোট্ট শিশু রাস্তায় প্রাণ হারালেন কয়েক দিন আগেই। ওর বড় বোনের স্পর্শ পেতে রাস্তায় দৌড় দিতেই ওর রক্তাক্ত দেহ ছিটিয়ে পড়ল সড়কে! নিথর সে দেহ নিয়ে বাবা, মা ও মামার সে কী আহাজারি! আর কোনোদিন ঠিকভাবে আমরা ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে খেতে পারবো এমন মৃত্যুর পর? সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে।

আমরা দেখি কিন্তু নির্বিকার চেয়ে থাকা ছাড়া যেন আমাদের তেমন কিছুই করবার নেই। ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সড়কে মরণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। নিয়মহীনভাবে গতিতে চলে গাড়ি, আইন না মানার প্রবণতাও অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে একদিনে তৈরি হয়নি বরং আমরা এমন পরিস্থিতি পুষে পুষে এ পর্যন্ত এনেছি! রাস্তায় এখন অটো নামক মরণ যান চলে। অটো ট্রেনের আরেকটি অভিজাত প্রতিশব্দ বলা যেতে পারে। লাইন ছাড়া একমাত্র ট্রেন বাংলাদেশেই এভাবে চলে। যার ব্রেক কষলে ব্রেক কষার জায়গা থেকে কমপক্ষে বিশ গজ দূরে গিয়ে ব্রেক হয়! অটোতে কত প্রাণ গেল; কিন্তু অটো বন্ধ করার কথাও আমরা বলার সাহস পাই না! তার প্রমাণ গত সপ্তাহ ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপের কথা বলার পর যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তা থেকে অনুমেয়! কবে কবে আমাদের সমাজে পিঁপড়ার অনুবীক্ষণিক রূপ সামনে চলে এসেছে আমরা তা জানিই না! আমাদের ছোট্ট শিশু মায়ের মুখ এখনো ঘুমোতে দিচ্ছে না কাউকে। তার মধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরে মাটির মায়া পিকনিক স্পটে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) এর দোতলা বাস ঝুলে থাকা বিদ্যুতের উচ্চ ভোল্টের তারে লেগে যায়। উচ্চ ভোল্টের তার এত নিচ দিয়ে যাবে কেন?

নিছক দুর্ঘটনা বলার জন্যই হয়তো তদন্ত কমিটি হবে, আমাদের তৎপরতা সব কিছুই হবে, হচ্ছে। নিছক দুর্ঘটনাই ধরে নিলাম। কিন্তু যারা ঝরে গেলেন? তারা কি একাই ঝরে পড়লেন? প্রতিটি শিক্ষার্থীর সাথে জড়িয়ে আছে তাদের পরিবার। দুর্ঘটনার আগের রাতেও মৃতদের মধ্যে একজন মায়ের সাথে হেসে কথা বলেছেন। কিন্তু পরের দিন সকালে এমন খবর শুনতে হবে কেউ জানে না। মৃত্যু কখন আসবে কেউ জানে না। কিন্তু এমন সব দুর্ঘটনা হচ্ছে আমাদের চারপাশে যার ক্ষেত্র তৈরি করছি আমরাই। রাস্তার জন্য আমরাই জমি দেই না। পৌরসভা থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন কোথায় সমস্যা নেই এ রাস্তার? গ্রামের ভেতরেও রাস্তা আটকে বেশি টাকায় জমি বিক্রির পাঁয়তারা প্রায় ঘরেই দেখা যায়। শুধু তাই নয়, রাস্তা আটকে দিয়ে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য গাজীপুরের শ্রীপুরে কিছু সিন্ডিকেটও তৈরি হয়েছে বর্তমানে! এই শ্রীপুরেই যদি মাওনা চৌরাস্তার ঘিঞ্চি কোনো গলির ভেতর বাড়িতে আগুন লেগে মানুষ মারা গেলেও কি রাস্তা বড় করা সম্ভব হবে?

ঢাকার কেমিক্যাল গুদামগুলো আমরা সরাতে সক্ষম হয়েছি? এখনো পুরান ঢাকায়ই রয়ে গেছে সেই গুদাম, এখনো ভয় রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের! তারপরও যেমন আছে তেমনই। আমরা নিয়ম না মানার প্রতিযোগিতায় নেমেছি। আমরা অভিনয় করে কাঁদি। আমরা মোনাফেক হয়ে যাচ্ছি দিন দিন! কথার সাথে কাজে মিল যেন নেই কোনো। নিজের পক্ষে না এলেই তার বিরোধিতা করি! এভাবেই চলছে। নিয়মের বেড়াজালে ফেলে কোথায় যে নিজেদের দায়ী করছি নিজেরাই জানি না! খেয়াল করে দেখবেন এখন লেখার শেষে যত আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ব্যবহার করতে হয় তা আগে করতে হতো না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত