বর্তমানে দেশে যে সমস্যাটি প্রবল আকার ধারণ করেছে, তা হলো ডেঙ্গু সংক্রমণ। শীত চলে এলেও কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, গত নভেম্বরেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৭৩ জনের। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত এ মাসের সর্বোচ্চ মৃত্যু এটি। অতীতে সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে শুরু করলেও বর্তমানে এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে। ২০২২ সাল থেকে ডেঙ্গু সংক্রমণের মৌসুম পরিবর্তিত হয়ে আসছে। এর পেছনে রয়েছে নানাবিধ কারণ। তার মধ্যে অন্যতমণ্ডবৃষ্টির ধরনে পরিবর্তন ও অপেক্ষাকৃত উষ্ণ তাপমাত্রা। গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ১৯ শতাংশ ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. এরিন মরডেকাই বলেছেন, এশিয়া ও আমেরিকার ২১টি দেশের ডেঙ্গুর প্রকোপ ও জলবায়ুর ওঠানামার নানা তথ্য তারা খতিয়ে দেখেছেন এবং সেখানে ক্রমাগত তাপমাত্রা ও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার মধ্যে স্পষ্ট ও সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। আগে আমরা জানতাম এডিস মশা পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানিতে জন্মে; কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, নোংরা পানিতেও এ মশা ডিম পাড়ে। আগে ধারণা করা হতো এ মশা দিনের বেলা কামড়ায়; কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এ মশা দিন-রাত উভয় সময়েই কামড়াচ্ছে। আগে বর্ষাকালে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকত; কিন্তু এখন প্রায় সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে এ রোগের লক্ষণেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। চিকিৎসকদের মতে, বর্তমানে ডেঙ্গুতে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা ও বমির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এখন ডেঙ্গু হলেই হার্ট, কিডনি ও ব্রেইন আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গুর নতুন লক্ষণগুলোর সঙ্গে অধিকাংশ মানুষ পরিচিত নয়। এ কারণে ডেঙ্গুতে মৃত্যু সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই জ্বর হলেই ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি বেশি তরল খাবার যেমন- স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, লেবুর শরবত ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। জ্বর ভালো হওয়ার পরও ডেঙ্গুজনিত নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে এবং নিয়মিত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায় হলো এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ। এর জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি। কারণ, এডিস মশার উৎপত্তিস্থল হলো আমাদের বাড়ির ভেতর-বাহির, ছাদ ও বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানি। তাই আমাদের উচিত আমাদের বাড়ির আঙিনা সবসময় পরিষ্কার রাখা, বাড়ির আনাচে-কানাচে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় পাত্রগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া। ব্যবহারযোগ্য পাত্র যেমন: ফুলের টব, ড্রাম, বালতি, এয়ার কন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরের নিচের পানি ভর্তি পাত্রে যেন কোনোভাবেই পাঁচ দিনের বেশি পানি জমে না থাকে। মূলত এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সব নাগরিকের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত জরুরি।