মানুষের জীবনকে সুশৃঙ্খল ও কল্যাণকর করার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁরা মানুষকে এক আল্লাহর দিকে ডেকেছেন এবং যাবতীয় পাপাচার থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু শয়তানের চক্রান্ত সব সময় সক্রিয় ছিল এবং আজও রয়েছে। শয়তান মানুষকে বিভিন্ন গর্হিত কাজে প্রলুব্ধ করে এবং তাদের প্রকৃতিপ্রদত্ত মুসলমানিত্ব থেকে দূরে সরিয়ে ফেলে। তেমনই একটি নিকৃষ্টতম পাপাচার হলো সমকামিতা, যা কওমে লুত (আ:)-এর সময় সর্বপ্রথম প্রচলিত হয়। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ পাপাচারের করুণ ইতিহাস এবং এর পরিণতির বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
কওমে লুত (আ:)-এর ইতিহাস : হজরত লুত (আ:) ছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ:)-এর ভ্রাতুষ্পুত্র। আল্লাহ তাঁকে জর্দান ও বায়তুল মোকাদ্দাসের মধ্যবর্তী সমৃদ্ধ জনপদ সাদ্দূমে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা ছিল ডাকাত, প্রকাশ্য অশ্লীলতার চর্চাকারী এবং সমকামী। লুত (আ:) তাদের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য করার এবং এই গর্হিত কাজ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান। কিন্তু তারা তাঁকে উপহাস করে, এমনকি নিজ জনপদ থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়। অবশেষে আল্লাহর নির্দেশে লুত (আ:) তাঁর মুমিন অনুসারীদের নিয়ে সাদ্দূম ত্যাগ করেন।
ধ্বংসের ভয়াবহ পরিণতি : আল্লাহর ফেরেশতারা সুদর্শন পুরুষের রূপধারণ করে লুত (আ:)-এর বাড়িতে মেহমান হন। পাপাচারী সম্প্রদায় তাদের বিকৃত আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে আক্রমণ চালায়। এ সময় আল্লাহর গজব তাদের উপর নেমে আসে।
হজরত জিব্রাইল (আ:) সাদ্দূম নগরীকে তাঁর ডানা দিয়ে তুলে আকাশে নিয়ে যান এবং উল্টো করে জমিনে ফেলে দেন।
এরপর পাথরের বৃষ্টি বর্ষিত হয়, যা থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। সেই এলাকা আজ মৃত সাগর নামে পরিচিত, যেখানে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব নেই। ইসলামের অবস্থান : পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সমকামিতাকে কবিরা গুনাহ বা জঘণ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মত সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ে ভয় করি, তা হলো সমকামিতা।’ (ইবনু মাজাহ) সাহাবায়ে কেরাম ও মুজতাহিদ ইমামগণ একমত যে, এই অপরাধীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করা উচিত। ইমাম শাফেয়ী (রহিমাহুল্লাহ) এবং ইমাম আবু হানিফা (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, লুত (আ:)-এর সম্প্রদায়ের মতো শাস্তি এই অপরাধীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
সমাজের জন্য শিক্ষা : কওমে লুত (আ:)-এর ধ্বংস একটি বড় নিদর্শন। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন এবং প্রকৃতির বিপরীত পথে চলার ফলাফল কতোটা ভয়াবহ হতে পারে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকপথে চলার তৌফিক দান করুন, গর্হিত কাজ থেকে দূরে রাখুন এবং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সহায়তা করুন। আমিন।
তথ্যসূত্র : তাফসির ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া।
কলামিস্ট, সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ