বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কোনো প্রতিযোগিতা ছিল না। পরিস্থিতি এমন ছিল, পরিচয় থাকলেই গ্যাস উৎপাদন বা পাওয়ার প্ল্যান্ট করা যেত। তবে এখন থেকে বিনা টেন্ডারে এ খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারবে না। এ তথ্য জানিয়ে গত শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আরো বলেছেন, এবার টেন্ডারের মাধ্যমে তেল আমদানি উন্মুক্ত করায় সরকারের সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা। পাশাপাশি এলএনজি আমদানি উন্মুক্ত করায় বিদেশি বড় কোম্পানিও এখন অংশ নিতে পারছে। এখন থেকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছাড়া বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে আর কোনো প্রকিউরমেন্ট হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জ্বালানি খাতে বিগত সরকারের আমলে কী পরিমাণ দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি হয়েছে, তা অজানা নয়। দেশের সম্পদকে কাজে না লাগিয়ে কমিশনের মোহে বেশি দামে জ্বালানি আমদানি করা হয়েছে। যার বিরোধিতা করেও সংশ্লিষ্টরা অতীতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি আমদানির পরিবর্তে এখন থেকে দেশের সম্পদের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এছাড়া আগামী কয়েক বছরে কিছু প্ল্যান্টের মেয়াদ বা চুক্তি শেষ হবে। তাই নির্মাণাধীন প্ল্যান্টগুলোর কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যথায় ২০৩০ সালের দিকে আবারো ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে খনিজসম্পদ রক্ষা করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকেও নজর দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এ খাতের সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, ডলারের দাম বাড়তে থাকলে এমনিতেই গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়তে থাকবে। সে ক্ষেত্রে কৃষি জমি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে, এটির উৎপাদন লাভজনকও বটে।
দুর্নীতি ও জ্বালানির অপর্যাপ্ততার কারণে বিগত সরকারের আমল থেকেই দেশের শিল্প খাতকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে দেখেছি আমরা। নিকট অতীতেও গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পের উৎপাদন যেমন কমে গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধও হয়ে গেছে, বন্ধের হুমকিতে রয়েছে- এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম নয়। পরিতাপের বিষয়, জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধি তো দূরে থাক, অপচয় কিংবা চুরির মতো কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে ঘটলেও তা বন্ধে উদ্যোগ নিতে দেখিনি আমরা। এর কারণ হচ্ছে, রক্ষকরাই ভক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিগত সরকারের দুর্নীতির বড় উৎস ছিল এ জ্বালানি খাত। এ অবস্থায় যেসব প্রতিষ্ঠানের হাতে এ খাত কুক্ষিগত ছিল কিংবা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।