দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ

আফতাব চৌধুরী

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইহা বাস্তব সত্য যে দেশকে ভালোবাসা মানুষের জন্মগত প্রবৃৃত্তি। আমরা এ সম্পর্কে সচেতন না থাকলেও এটা আমাদের হৃদয়ের গভীরে সুপ্ত থাকে। দেশের অপমান, দেশবাসীর দুঃখ দৈন্যে, দেশের দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে, দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হলে, দেশকে নিয়ে কেউ উপহাস বা কটাক্ষ করলে এ অনুভূতি জেগে ওঠে। যেমন ১৯৭১ সালে এ দেশের হাজার হাজার তরুণ গেরিলা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে। প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল অকাতরে শত শত যুবক। ইহা সত্য দেশের মাটি ও মানুষের জন্যে গভীর মমতা না থাকলে এটা কোনোদিন সম্ভব হতো না। মনীষী জ্যাকসন বলেছেন, ‘যে মায়ের সন্তান দেশের জন্যে জীবন দিয়েছে, তার মাতৃত্বের গৌরব চির ভাস্বর। দেশপ্রেম থাকা চাই বৈদেশিক আগ্রাসনকে প্রতিহত করার জন্যে।

ইতিহাস বার বার এটাই প্রমাণ করেছে যে একটা দেশপ্রেমিক জাতি শত্রুর কাছে কখনো পরাজিত হয় না। সে জাতির অন্তরে জ্বলতে থাকে দেশপ্রেমের আগুন অনির্বাণ শিখার ন্যায়। সারা পৃথিবীর মায়া মমতা, স্নেহ সব একত্রিত করলেও যেমন মায়ের অকৃত্রিম স্নেহের সঙ্গে তুলনা করা যায় না তেমনি সারা পৃথিবীর ঐশ্বর্য- বৈভব ও সৌন্দর্যের সঙ্গে নিজ দেশের কোন তুলনা হতে পারে না। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, দেশপ্রীতি ঈমানেরই অঙ্গ। মানুষ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই তার আপন জীবনকে বিলিয়ে দিতে পারে। মহৎ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আলিঙ্গন করতে পারে মৃত্যুকে। কবি বলেছেন- ‘তুমি দেশকে যথার্থ ভালোবাস তার চরম পরীক্ষা, তুমি দেশের জন্য মরতে পার কি-না।’

এ দেশপ্রেম নিয়ে কোথায় যেন পড়েছিলাম। এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না ‘দেশপ্রেম বাইরের কোনো প্রদর্শনীর বস্তু নয়, দেশপ্রেম মানুষের অন্তরস্থিত ভক্তি শ্রদ্ধায় গড়া। কবিতার কাব্যে, দেশকর্মী তার সমাজসেবায়, গায়ক তার গানে, শিল্পী তার ছবিতে, বৈজ্ঞানিক তার বিজ্ঞান চর্চায়, শিক্ষক তার একনিষ্ঠ শিক্ষকতায় দেশপ্রেমের পরিচয় প্রদান করতে পারেন।’ মনীষী ওয়ালেস রাইস বলেছেন, বুদ্ধিজীবীর কাছে তার দেশ ও সেবিকার কাছে তার রোগীর একই ভূমিকা হওয়া উচিত। শুধু সংগ্রামী রূপ ধারণ করেই আবির্ভূত হয় না দেশপ্রেম। সত্যিকার দেশপ্রেম হচ্ছে দেশকে গড়ে তোলার সাধনা করা। দেশের সচেতন নাগরিকদের কারো অজানা নয় যে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করাটাই কঠিন। দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাটাই দেশবাসীর লক্ষ্য হওয়া উচিত। রাজনৈতিক স্বাধীনতার সাথে সাথে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার স্বপ্নকে সফল করে তোলাও দেশপ্রেমিকের পবিত্র দায়িত্ব। মনীষী জিপি হল্যান্ডের ভাষায় যদি মৃত্যুহীন হতে চাও তবে তোমাকে সৎভাবে দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে। মনীষী এডওয়ার্ড ইয়ং তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসতে পারলে জীবন সুখ ও শান্তিময় হয়ে ওঠে। দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা, গভীর মমত্ববোধ থেকেই মনীষী সিডলি স্মিথ বলেছেন, আমি আমার নিজের দেশে দরিদ্র হিসাবে জীবন কাটাতে চাই, অন্য দেশে সম্পদশালী হয়ে জীবন কাটাতে আমি বিন্দুমাত্র আগ্রহী নই। দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই মনীষী পি জে বেইলির কথায়। তিনি বলেছেন, আমার দেশ আমার নিকট বড় এবং স্বাধীন দেশ আমার হৃদপিণ্ডের মতো, আমার ঠোঁট তাই এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

এ কথাও সত্য যে, প্রকৃত দেশপ্রেমিক ব্যক্তি কখনো সংকীর্ণ মনের পরিচয় দেন না। নিজের দেশকে মনে-প্রাণে ভালোবাসা মানে অন্য দেশের প্রতি শত্রুতা নয়। কাজেই একজন দেশপ্রেমিককে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে সহমর্মিতাবোধ জাগ্রত রেখেই নিজের দেশকে ভালোবাসতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রকৃত দেশপ্রেম নিজের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে বৃহৎ পৃথিবীর মাঝে নিজকে ছড়িয়ে দেয়। মনীষী ডি স্টায়েলের বাণী হচ্ছে, ‘অন্যের দেশকে যত বেশি করে দেখা যায়, নিজের দেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসাটা ততই বেড়ে যায়।’ মনীষী জর্জ রো-এর ভাষায় যে কখনো বিদেশ যায়নি সে কখনো দেশের মমত্ব বুঝতে পারে না।

একজন সাংবাদিক ও লেখক হিসাবে, দেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসা রয়েছে এমন একটা মনোভাবকে হৃদয়ে ধারণ করেই আমরা দেশে বসবাস করি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে দেশের প্রতি আমাদের কোনো মমত্ববোধ আছে কি? আমরা কি দেশের উপকার-অপকার, লাভণ্ডক্ষতি, সুনামণ্ডদুর্নাম, শত্রু-মিত্র ইত্যাদি নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করি? আজ হরতালের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, এমনকি অনেক লেখালেখি হচ্ছে। কেউ বলছেন, হরতাল রাজনৈতিক প্রতিবাদের একটি উপায় ও কৌশল। গেল সপ্তাহে ঢাকা থেকে প্রকাশিত এক পত্রিকায় একজন লেখকের লেখায় দেখলাম, হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত। আমি দ্বিমত পোষণ করে বলি- হরতাল উপনিবেশিক জামানায় এবং বিদেশি শাসকদের বেলায় শক্তিশালী অস্ত্র ছিল। নিজের দেশের বেলায় বিশ্বায়নের যুগে ইহা পুরাতন ধ্যান-ধারণা। হরতাল জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের রক্ত ক্ষরণের মাধ্যমে দেশের প্রচুর ক্ষতি করে। এ ক্ষতির বোঝা জাতিকে বহন করতে হয় হরতালকারী রাজনৈতিক দলকে নয়। হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, গাড়ি ভাঙচুর, উগ্র মিটিং, মিছিল সংস্কৃতি আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় হউক। প্রতিটি হরতাল, মানববন্ধন, গণ অনশন শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া যায়। আমার প্রশ্ন হরতাল যদি প্রতিবাদের ভাষা হয়ে থাকে তাহলে হরতালের নামে আমরা যে সম্পদ বিনষ্ট করি তাতে ক্ষতি হচ্ছে কার? এ সম্পদ কি কোন ব্যক্তি বিশেষের বা রাজনৈতিক দলের? এ সম্পদ দেশের, সমগ্র জাতির।

হরতালে শুধু দেশের সম্পদ নয়, অনেক সময় এতে একাধিক জীবনেরও অবসান ঘটে থাকে। এছাড়াও হরতালের কারণে আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন মনে করছি যে, হরতালের লাভ লোকসানের বর্ণনা করতে গিয়ে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ সমর্থন করছি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতি করি না এবং কোনো উচ্চাভিলাষও আমার নেই। তবে আমি রাজনীতি সচেতন। এটা কারো অজানা নয় যে, বর্তমানে যারা সরকারি দলে তারা এক সময় বিরোধী দলে ছিলেন আর বর্তমান বিরোধী দল ছিলো এক সময় সরকারি দলে। বর্তমান সরকারি দল ভবিষ্যতে হয়তো পুনরায় বিরোধী দলের ভূমিকা নিতে পারে এবং বর্তমান বিরোধী দলকে জনগণ হয়তো আবার সরকার গঠনের সুযোগ দিতে পারে। তাই ক্ষয়-ক্ষতির বর্ণনা কোনো পক্ষ বিপক্ষের হতে পারে না।

হরতাল প্রতিবাদের ভাষা একথাও যেমন সত্য, হরতাল দেশের বিপুল ক্ষতি সাধন করে এ সত্যকেও আমরা অস্বীকার করতে পারি না। বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে হরতালের দৃশ্য নিজ চোখে নাই বা দেখলাম কিন্তু আমাদের এ সিলেট, ঢাকা ও চট্রগ্রামে হরতালের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হতে আমি দেখেছি। অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিতরা অনুধাবন করতে না পারলেও, জ্ঞানপাপীরা বুঝেও না বোঝার ভান করলে, রাজনীতিবিদরা বিপুল ক্ষয়-ক্ষতির গুরুত্ব প্রদান না করলেও, দেশের সচেতন নাগরিকরা বুঝতে পারে, যে রাজনৈতিক দলের হরতাল আহ্বান জান ও মালের অপূরণীয় ক্ষতি ছাড়া দেশের কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না, ইট পাটকেল নিক্ষেপ আর যানবাহন ভাঙচুর দেশেরই ক্ষতি হয়, এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। এ পরম সত্যটি আমাদের দেশের সর্বস্তরের জনগণ তখনই অনুধাবন করতে পারবে যখন তারা সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, নিজের দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবাসতে পারবে। মনীষী ব্রাউনিং বলেছেন, ‘একমাত্র নিজের দেশকেই অন্ধের মতো ভালোবাসা যায়।’ মনীষী ভার্জিলের ভাষায়, ‘সে সবচেয়ে সুখী যে নিজের দেশকে স্বর্গের মতো ভালোবাসে’। জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায়, ‘দেশকে ভালো না বাসলে তাকে ভালো করে জানার ধৈর্য থাকে না, আর দেশকে না জানলে ভালো করতে চাইলেও ভালো করা যায় না।’ মনীষী জর্জ ক্যানিং কলেছেন, ‘দেশের জন্য এক বিন্দু রক্তদান করার মতো মহৎ কাজ আর কিছুতেই নেই।’

আমাদের শ্রদ্ধাভাজন প্রচারবিমুখ সফল কুটনীতিক ও রাজনীতিবিদ মরহুম আবুল মাল আব্দুল মুহিত এ নশ্বর পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছেন ক’বছর আগে। তিনি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। সেদিন এক লেখায় দেখলাম আবুল মাল আব্দুল মুহিত সম্পর্কে লিখতে গিয়ে একজন লেখক একটি অংশে উল্লেখ করেছেন- আবুল মাল আব্দুল মুহিত যখন জীবিত ছিলেন তখন তিনি প্রচুর সভা সমিতিতে যেতেন। অনেক সময় জনগনের চাপে বাধ্য হয়েই যেতে হতো তাকে। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তিনি বলতেন কম, শুনতেন বেশি। আর অল্প কথায় যা বলতেন তা ছিল মাস্টারপিস। চট্ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অথবা গবেষণাধর্মী কোনো প্রতিষ্ঠানে গেলে তিনি মানুষ হওয়ার কথা বলতেন, শেকড়ের উৎস খুঁজতে বলতেন দেশকে ভালোবেসে। মরহুম মুহিত সাহেব সম্পর্কে লেখার এ অংশটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছি।

মুহিত সাহেবের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল চমৎকার। তিনি আমাকে ভালবাসতেন, আদর করতেন আমি তাকে গভীর শ্রদ্ধা করতাম। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি প্রায়ই দেশের সার্বিক হাল অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতেন। উন্নয়নের কথা বলতেন। তার মধ্যে সত্যি সত্যি দেশপ্রেম ছিল যা আমি অন্তর দিয়ে অনুভব করতে সক্ষম হয়েছি। আজকাল দেশকে ভালবাসার প্রতি কাউকে উৎসাহিত অনুপ্রাণিত করতে দেখিনা। রাজনীতিবিদরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের দলের কথা বলেন। গুণকীর্তন করতে থাকেন তাদের দলনেতার স্কুল, কলেজে যদিও দেশপ্রেমের উপর ছাত্র-ছাত্রীদের রচনা লিখতে বলা হয় তা শুধু লেখার জন্য লেখা। গ্রোথিত হয় না। শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের নয়, দেশপ্রেম আমাদের কারো মনকে নাড়া দেয় না। দেশের প্রতি মমত্ববোধ আমাদের আবেগপ্রবণ করে না। যদি তাই হতো হরতাল ডাকা হলে অনেকেই ভ্রমনে যাওয়ার কথা চিন্তা করতেন না। কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, মাধবকুন্ড, শ্রীমঙ্গলের চা বাগান, সৈকত, শিশু পার্ক ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে এত লোকের ভিড়ে হতো না, হরতালকে ছুটির মতো উপভোগ্য মনে করে কাঁচা বাজারে উপচে পড়া লোকের ভিড় হতো না, ঘরের গিন্নীকে কেউ খিচুড়ি, পোলাও করার নিবেদন রাখতো না, দেশের এক শ্রেণির মানুষকে হরতালের উপোস থাকতে হবে এ চরম সত্যটি বেমালুম ভুলে যেত না, হরতালে দেশের জান ও মালের অপূরণীয় ক্ষতিকে কেউ উপেক্ষা করতে পারত না। তাই আমাদের দেশে আজ মুহিত সাহেবের মতো লোকের বড় বেশি প্রয়োজন অনুভব করি। তিনি সব সময়ই আমাদেরকে দেশের প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত করার কথা বলতেন। ছাত্র-ছাত্রীদের রাজনীতি না করে নিজেদের পড়াশুনায় মনোনিবেশ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ গড়ার পরামর্শ দিতেন। দেশকে ভালবাসার কথা বলতেন, আমাদেরকে প্রকৃত মানুষ হওয়ার উপদেশ দিতেন, আমাদের মনুষ্যত্ববোধকে জাগিয়ে তোলার কথা বলতেন। কবির ভাষায় বলতে গেলে- স্বদেশের উপকারে নেই যার মনকে বলে মানুষ তারে? পশু সেই জন।

দেশের উপকারে যিনি নিবেদিত প্রাণ তিনিই প্রকৃত মানুষ। পক্ষান্তরে দেশপ্রেমহীন আত্মকেন্দ্রিক যিনি, তিনি নিঃসন্দেহে অধমের সমান। সমাজ জীবনে প্রতিনিয়ত এহেন মুর্খের মত বিবেকবর্জিত অমানুষ দেখতেন বলেই হয়তো দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ আমাদের পুর্বসুরি রাজনৈতিক নেতারা প্রথমে মানুষ হওয়ার কথাই বলতেন। কিন্তু সে আদর্শবান পুরুষ বা রাজনৈতিক নেতা আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। তাই তাঁদের মূল্যবান কথাগুলো স্মরণীয় ও বরণীয় বাণীতে পরিণত হয়েছে। আমরা সবাই নিজেদেরকে যতই লেখক, জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক বা সচেতন নাগরিক হিসাবে দাবী করি না কেন, আমাদের উচিত হবে আমাদের চিন্তা-চেতনায় সেসব ব্যক্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখা, তাদের স্মরণ করা।

দেশের সদা প্রহরী হচ্ছে দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ রাজনীতিবিদরা। রাজনীতিবিদদের প্রথম এবং প্রধান শর্তই হল দেশপ্রেম। আমাদের দেশে বিভিন্ন দলের অনেক রাজনীতিবিদরা মহত্তর, বৃহত্তর কল্যাণ বোধ থেকে ভ্রষ্ট। এ দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় স্বার্থই প্রধান হয়ে দেখা দেয়। দেশের সকল রাজনীতিবিদকে কথায় ও কাজে সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক হতে হবে।

রাজনীতিবিদদের সার্বিক কর্মকান্ডের উপরেই এ দেশের ভবিষ্যত নির্ভরশীল। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি রাজনীতিকে ব্যবসা বা পেশা হিসাবে নয়, সেবা হিসাবে নিতে পারলেই দেশের বর্তমান ভয়াবহ অবস্থার অবসান হবে, দেশের মঙ্গলে দেশের সকল নাগরিকেরও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশকে প্রাণাধিক ভালবাসতে হবে এবং শুধু ভালবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবেনা, দেশসেবায় ব্রতী হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে দেশপ্রেম নয় কোন নিছক বিমূত আদর্শ, নয় কতগুলো প্রাণহীন শব্দের সমাহার। আর তাই মনীষী এডইউন আরলডের বাণীটির সুরে সুর মিলিয়ে এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মুখ থেকে সোচ্চার কণ্ঠে উচ্চারিত হোক- জীবনকে ভালোবাসি সত্য কিন্তু দেশের চেয়ে বেশি নয়।

সাংবাদিক-কলামিস্ট