ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পর্যটনের উন্নতিতে দৃষ্টি রাখা জরুরি

পর্যটনের উন্নতিতে দৃষ্টি রাখা জরুরি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তো বটেই, এমনকি এ অঞ্চলের ছোট দেশ ভুটান, মালদ্বীপ, নেপালও পর্যটনকে শিল্প হিসেবে দাঁড় করিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এমন সুযোগ আমাদেরও ছিল। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত পর্যটন কেন্দ্রগুলো সেই সম্ভাবনা জাগিয়ে রাখলেও কার্যত এই ক্ষেত্রটি থেকে আমাদের অর্জন বলতে গেলে আশানুরূপ কিছু নেই।

নিকট অতীতে এক সমীক্ষায় জানা গেছে, পর্যটন শিল্প বিশ্বের একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। আমরা এও দেখছি, বিশ্বের অনেক দেশেই পর্যটন এখন অন্যতম অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচিত। পর্যটনের মতো খাতের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়ে থাকে। কিন্তু অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কেন আমরা এই খাতকে বিকশিত করতে পারলাম না, তা জিজ্ঞাসার কারণ বটে। দায়িত্বশীলদের উদাসীনতাণ্ডঅবহেলা-দায়িত্ব পালনের নিষ্ঠার অভাবে খাগড়াছড়ি পর্যটন করপোরেশনের মোটেলটির যে দুরবস্থা দৃশ্যমান, তা খণ্ডিত চিত্র মাত্র। পর্যটন কর্পোরেশনের এমন অনেক মোটেলের চিত্রই বির্বণ। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি দেশের পর্যটনের অন্যতম ক্ষেত্র। কিন্তু নিরাপত্তাহানিজনিত কারণ তো আছেই, পাশাপাশি মোটেল-হোটেল ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে পর্যটকরা ওই আকর্ষিত স্থানগুলো থেকে কখনো কখনো মুখ ফিরিয়ে নেন।

দেশের পাহাড়ি এলাকা, হাওর অঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পর্যটনের যে সম্ভাবনা রয়েছে এ নিয়ে এরইমধ্যে নানারকম পরিকল্পনাসহ কাগজে-কলমে অনেক উদ্যোগ নেয়া হলেও বস্তুত আশানুরূপ কিছুই দৃশ্যমান হয়নি। আমরা যদি খাতটিকে বিকশিত করতে পারতাম এবং বিশেষ করে সরকারি উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে দেশের পর্যটনকে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হতো তাহলে এর ইতিবাচক প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে অনেকটাই স্ফীত হয়ে উঠত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল অনেকেরই অদূরদর্শিতার পাশাপাশি যথাযথ দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার ঘাটতির ফলে সরকারি সংস্থা পর্যটন কর্পোরেশনের নানামুখী ব্যর্থতা দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। দেশের বিস্তীর্ণ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তো আছেই, শুধু পার্বত্য তিন জেলায় পর্যটককে আকর্ষণ করার প্রকৃতির যে দান রয়েছে তাও কাজে লাগানো যায়নি দায়িত্বশীল অনেকেরই ব্যর্থতার কারণে। পর্যটন খাতে বিকাশে অন্যতম শর্ত নিরাপত্তা এবং প্রশ্নাতীত পরিবেশ। আমাদের পর্যটন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অনেক সময় বয়ে গেছে কিন্তু সংস্থাটি যে উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল তার যে অনেক কিছুই অপূর্ণ রয়ে গেছে এ আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না এবং খাগড়াছড়ির পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেলটি এরই একটি দৃষ্টান্ত মাত্র।

দেশের মোট জিডিপির শতকরা ৪ দশমিক ৪ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। কিন্তু পর্যটন করপোরেশন যদি পরিকল্পিত উপায়ে এর বিকাশ ঘটাতে পারত তাহলে জিডিপিতে এর হারই শুধু বাড়ত না, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও প্রসারিত হতো। খাগড়াছড়ির পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেলটির যে চিত্র প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে- এ থেকেই সহজে অনুমান করা যায়, এই কর্পোরেশনের অন্যান্য মোটেলের অবস্থা কী? আমরা মনে করি, এজন্য সংস্থাটির দায়িত্বশীলদের সবার আগে জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সংকট কাটিয়ে দেশের পর্যটনকে পরিপূর্ণ শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন উদ্যোগ ও এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, এই বার্তা মিলেছিল সংবাদ মাধ্যমেই। কিন্তু এর অগ্রগতি কতটুকু কী, তা আমরা জানি না। আমরা মনে করি, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তরুণ-যুবককে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর করার অবকাশ রয়েছে তেমনি পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেলগুলোর ব্যবস্থাপনা সুচারু করার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে এর উন্নতিতে নজর গভীর করা জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত