দেশে দিন দিন জমির উর্বরতা কমছে। ফলে চালের উৎপাদন খরচ বাড়ছে; কিন্তু কমছে কৃষকের লাভ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জমির উর্বরতা ছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত উর্বরতা শক্তি কিছুটা বেড়ে হয় ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। কিন্তু ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তা ব্যাপকভাবে কমে আসে এবং উর্বরতা শক্তি দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশে। আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে জমির উর্বরতা শক্তি কমে হয়েছে শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১২ সালে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ ছিল ১০ টাকা ৫১ পয়সা। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয় ১১ টাকা ৬৭ পয়সা, ২০১৮ সালে ১২ টাকা ৮৮ পয়সা। এই কয়েক বছরে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্য দিকে এক কেজি চাল বিক্রয় করে লাভ হতো ২০১২ সালে ১৬ টাকা ১৭ পয়সা। এ ছাড়া ২০১৫ সালে ১৬ টাকা ৫২ পয়সা এবং ২০১৮ সালে ১৭ টাকা ৪৮ পয়সা। এ ক্ষেত্রে গড় লাভ আসে ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। মোট উৎপাদন খরচের বিপরীতে লাভের পরিমাণ সময়ের সাথে হ্রাস পাচ্ছে।
কৃষকরা তাদের বিনিয়োগের সুফল পাচ্ছেন কম। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) মাটির উর্বরতা ধরে রাখার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে, কনজারভেশন পদ্ধতিতে জমির চাষ, মাটির পুষ্টি উপাদান ধরে রাখতে পারে এমন ফসলের আবাদ, জৈব সারের প্রয়োগ বাড়ানো, সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক সারের প্রয়োগ প্রভৃতি। আমাদের কৃষকদের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। বাংলাদেশে জমি স্বল্পতার কারণে কৃষকদের সারা বছরে কয়েকবার ফসল ফলাতে হয়। ফলে ফসলি জমির বিশ্রামের কোনো সুযোগ থাকে না। এতে মাটির পলিযুক্ত উর্বর অংশের ক্ষয় হয়, মাটির জৈব উপাদান ও উপকারী অণুজীব ধ্বংস হয়। ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। কৃষকদের মধ্যে মাটি পরীক্ষার প্রচলন নেই বললেই চলে।
কোন মাটিতে কোন পুষ্টি উপাদানের অভাব রয়েছে, তা খুব কম কৃষকই জানেন। মাটি পরীক্ষার কিট সহজলভ্য করলে কৃষকরা সহজেই মাটি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জোগান দিতে পারবেন। এ কাজে কৃষি মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী হতে হবে। দেশে ইউরিয়া সারের ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। এর পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। জৈব সার সহজলভ্য করা এবং কৃষক কীভাবে নিজে জৈবসার তৈরি করতে পারেন, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। মাটির উর্বরতা বাড়াতে ধইঞ্চা, কালোজিরা ও কালাইয়ের মতো ফসলের চাষাবাদ বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করতে হবে। একবিংশ শতাব্দীতে শিল্পবিপ্লবের যুগে বাস করলেও কৃষিই বাংলাদেশের প্রাণ। কৃষির প্রতি অবহেলার সুযোগ নেই। জমির উর্বরতা বাড়াতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন কৃষকের সচেতনতার।