গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৯৪ ধারায় সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আইনি বিধান ব্যক্ত করা হয়েছে। এই ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট’ নামে বাংলাদেশের একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকিবে এবং আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ লইয়া তাহা গঠিত হইবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনসভা, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগ সম্মিলিতভাবে কাজ করে থাকে।
জেলা ও মেট্রোপলিটন এরিয়াতে অধস্তন আদালতগুলো ও দেওয়ানী এবং ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করে থাকে।
আমাদের দেশে দণ্ডবিধি আইন, ফৌজদারী কার্যবিধি আইন, সাক্ষ্য আইন ও অন্যান্য কিছু আইন-এর ভিত্তিতে ঈৎরসরহধষ ঔঁংঃরপব ঝুংুবস প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। সমাজে সংঘটিত অপরাধগুলো রোধকল্পে এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম ১৮৬০ সালে দণ্ডবিধি আইন (১৮৬০ সালের ৪৫ নং আইন) নামে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। এই দণ্ডবিধি আইনে সমাজে সংঘটনযোগ্য সকল প্রকার অপরাধের বিস্তারিত সংজ্ঞা দেয়া আছে এবং সংজ্ঞায়িত প্রত্যেক অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত) নির্ধারণ করিয়া দেয়া হইয়াছে। সংঘটিত অপরাধের জন্য অপরাধের মাত্রা ও গুরুত্ব অনুসারে একটি বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করা হইয়া থাকে। কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করিয়া অপরাধের তদন্তকার্য চলিবে, তদন্তে পুলিশের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা করার পদ্ধতি নির্ধারণ করিয়া ১৮৯৮ সালে ফৌজদারী কার্যবিধি আইন (১৮৯৮ সালের ৫ নং আইন) নামে একটি পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতিগত আইন প্রবর্তন করা হয়। এই আইনে বর্ণিত পদ্ধতি ও সাক্ষ্য আইনের সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো পালন করিয়া দণ্ডবিধি আইনের আওতাভুক্ত এবং ক্ষেত্রমতে অন্যান্য আইন এর আওতাভুক্ত অপরাধগুলোর তদন্ত ও বিচারকার্য নিষ্পত্তি করা হয়।
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনে অপরাধকে দুইভাগে বিভক্ত করা হইয়াছে। একটি হইল আমলযোগ্য অপরাধ এবং অপরটি হইল আমল-অযোগ্য অপরাধ। আমলযোগ্য অপরাধ এবং আমলযোগ্য মামলায় মামলা দায়েরের সাথে সাথেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা ও এ সম্পর্কিত বিষয়গুলো হইল আমাদের বিবেচ্য বিষয়। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪ (১) (চ) ধারায় আমলযোগ্য অপরাধ ও আমলযোগ্য মামলা সংজ্ঞায়িত করা হইয়াছে।
সমাজে দিন দিন বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়েই চলেছে। অপরাধ সংঘটনের জন্য অধুনা অপরাধীরা উন্নত হাতিয়ার ও কৌশল ব্যবহার করছে। তবুও সময়ের সঙ্গে অপরাধের ব্যাপ্তির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা সেই সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অপরাধ সংঘটনের ধরন ও কৌশল বদলাচ্ছে, এখন অপরাধ হচ্ছে ডিজিটালাইজড ও সংঘটিত। ফরেনসিক বিজ্ঞান আইনগত বিষয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা তথা রসায়নবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, জীববিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞানসহ প্রকৌশলের মতো একাধিক শাখায় এর ব্যবহার জড়িত। ফরেনসিক বিজ্ঞান হলো-
আইনে বিজ্ঞানের প্রয়োগ, যা আইনি দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য বিজ্ঞানের ব্যবহার তথা আইনি ব্যবস্থায় বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বাস্তবায়নকে অন্তর্ভুক্ত করে। বেশিরভাগ সময় ফরেনসিক বিজ্ঞান দেওয়ানি মামলার তুলনায় ফৌজদারি মামলা তদন্ত ও সমাধানের জন্য অধিক ব্যবহৃত হয়। যদিও আইনে বিজ্ঞানের ব্যবহার অনেক প্রাচীন। তবে বিগত প্রায় ১০০ বছর ধরে অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আঙুলের ছাপ ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৮৯২ সালে প্রথম ফিঙ্গার প্রিন্ট ডাটাবেজ প্রয়োগ করে একটি হত্যা মামলায় রক্তাক্ত আঙুলের ছাপ দ্বারা আর্জেন্টিনায় অপরাধীকে ধরতে সাহায্য করেছিল। এ ছাড়াও ব্রিটিশ ও চাইনিজরা ফৌজদারি মামলায় ফরেনসিকের ব্যাপক ব্যবহার করে। ফরেনসিক আলামত পরীক্ষার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি-ব্যক্তিগণের বা একটি বস্তুর মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করে, যা প্রকৃতপক্ষে ক্রাইমসিনে কী ঘটনা ঘটেছিল তার পূর্ণ দৃশ্য রূপায়ণে সহায়তা করে।
কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর, অপরাধস্থানে অপরাধী বিভিন্ন ধরনের আলামত অজ্ঞাতসারেই রেখে যায়। এ কারণে ফরেনসিক বিজ্ঞানের পথ প্রদর্শক স্যার ড. এডমন্ড লকার্ড বলেছেন, অপরাধে বিভিন্ন ধরনের আলামত পাওয়া যেতে পারে যেমন- রক্ত, বীর্য, প্রস্রাব, যোনি নিঃসৃত সোয়াব, লালা, বমি, চুল, ফাইবার, আঙুলের ছাপ, পায়ের ছাপ, দাঁতের চিহ্ন-ছাপ, ওষুধ, আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদ, কাচ, চুল, ভিসেরা, পেট্রোলিয়াম পণ্য দাগ, পাউডার জাতীয় পদার্থের অবশিষ্টাংশ, মাটি, টুলমার্ক, তার, সিরিয়াল নম্বর, কাঠ, পরাগ, অন্যান্য উদ্ভিদজ্জ পদার্থ, যা অপরাধের দৃশ্যের সঙ্গে একজন ব্যক্তি, ব্যক্তিবর্গ বা বস্তুর সঙ্গে সংযোগ করতে পারে। এ ছাড়াও এই আলামত প্রমাণ হিসেবে বিচারব্যবস্থায় কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়। তিনটি উৎস থেকে আলামত পাওয়া যেতে পারে- ১. ভিকটিমের ক্রাইমসিন থেকে ২. সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছ থেকে ও ৩. তার পরিবেশ থেকে।
সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফরেনসিক ক্রাইমসিন টিমের সাহায্যে আলামত সংগ্রহ করে থাকে। তবে বাংলাদেশে ক্রাইমসিনে প্রধানত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ফরেনসিক টিমের দক্ষ সদস্যরাই আলামত সংগ্রহ করেন, প্রয়োজনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। অনেক দেশে আইনি অনুসন্ধান প্রতিবেদনে তদন্তকারী অফিসার ব্যতিরেকেও অনেক ক্ষেত্রে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদেরও স্বাক্ষর থাকে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা প্রাপ্ত আলামত বিশ্লেষণ দ্বারা অপরাধী, ভিকটিম এবং নিখোঁজ ব্যক্তিকে সহজেই শনাক্ত করেন। যখনই কোনো অপরাধ সংঘটিত হয় এবং প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায় না, তখন ক্রাইমসিন থেকে প্রাপ্ত অপরাধীর আঙুলের ছাপ, পায়ের ছাপ, হাতের তালু, টুলমার্ক, ট্রেসমার্ক ফরেনসিক বিজ্ঞানের সাহায্যে বিশ্লেষণের মাধ্যমে অপরাধীকে শনাক্ত করা সহজ করে তোলে।
ফরেনসিক বিজ্ঞান বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারি মামলা যেমন- ধর্ষণ, দুর্ঘটনা সম্পর্কিত সব ঘটনা, নিখোঁজ ব্যক্তি অপহরণ, হত্যা, প্রতারণা, আত্মহত্যা, জালিয়াতি ইত্যাদি সমাধানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং অপরাধ সম্পর্কিত সব প্রশ্নের সমাধান করা হয় যেমন-কারা অপরাধ করেছে? অপরাধ কখন ঘটেছে? অপরাধ কীভাবে ঘটল? অপরাধ কেন ঘটল? বর্তমানে ফরেনসিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্র বিস্তৃত, যেখানে নানা ডিসিপ্লিনের বিশেষজ্ঞ থাকে, যেমন-ডিএনএ বিশ্লেষণ, ড্রাগ কেমিস্ট্র্রি, পেইন্ট এবং গ্লাস অ্যানালাইসিস, টক্সিকোলজি, আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ, রক্তের দাগের প্যাটার্ন বিশ্লেষণ, আগ্নেয়াস্ত্র পরীক্ষা এবং ব্যালিস্টিকস, টুলমার্ক বিশ্লেষণ, সেরোলজি চুল এবং ফাইবার বিশ্লেষণ, প্রশ্নযুক্ত নথি, নৃতত্ত্ব, ওডেনটোলজি, এপিডেমিওলজি, ফুটওয়ার, এবং টায়ারমার্ক বিশ্লেষণ, ডিজিটাল অডিও-ভিডিও এবং ফটো অ্যানালাইসিস ইত্যাদি।
ফরেনসিক বিজ্ঞান যত উৎকর্ষ লাভ করবে ভুক্তভোগীরা তত বেশি ন্যায়বিচার পাবে, সঙ্গে সঙ্গে আমরাও একটা শান্তিপূর্ণ সমাজে বসবাস প্রত্যাশা করতে পারব। বর্তমানে ফরেনসিক বিজ্ঞান মানবিক বিষয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রস মানবিক উদ্দেশ্যে ফরেনসিক বিজ্ঞান ব্যবহার করে সশস্ত্র সংঘাত, বড় ধরনের প্রাকৃতিক-কৃত্রিম বিপর্যয় বা অভিবাসনের পরে নিখোঁজ ব্যক্তিদের শনাক্ত কিংবা অবস্থান স্পষ্ট করতে ব্যবহার করছে। এ ছাড়াও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের জন্য ফরেনসিক তদন্তের গুরুত্বকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘মিনোসোটা প্রটোকল’ নামে একটি ম্যানুয়াল তৈরির মাধ্যমে মানবিক বিষয়ে ফরেনসিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকার করেছে। বাংলাদেশে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় ফরেনসিক আলামতের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনি কাঠামো হলো- ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮, সাক্ষ্য আইন-১৮৭২, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮, ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) আইন-২০১৪, ভোক্তা সুরক্ষা আইন-২০০৯, খাদ্য নিরাপত্তা আইন-২০১৩, বেঙ্গল পুলিশ রেজুলেশন-১৯৪৩, অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০২, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২, ক্রেতা সংরক্ষণ আইন-২০০৯।
ফরেনসিক আলামতের কাঙ্ক্ষিত বিশ্লেষণের ফলাফল অনেক নিয়ামকের ওপর নির্ভর করে। তবে আলামত সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং পরীক্ষণ এর যেকোনো অংশে ত্রুটির কারণে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। যেসব কারণে আলামত কাঙ্ক্ষিত ফলাফল কখনো কখনো পাওয়া সম্ভব হয় না তা হলো-১. অপরাধের দৃশ্য সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হওয়া ২. সঠিকভাবে প্রটোকল মেনে আলামত সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়া ৩. মিরান্ডা সতর্কতা না মানা উপরন্তু অন্যান্য সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা ৪. অনুমোদিত ব্যক্তির সংখ্যা সীমাবদ্ধতায় রাখতে না পারা ৫. আলামতে যথাযথ ‘চেইন অব সেফটি’ বজায় না রাখা ৬. দূষণ কমানোর জন্য সুরক্ষার ব্যবহার না করা ৭. আলামতের সংগ্রহের সঠিক ডকুমেন্টেশন না রাখা বা না জানা।
ফরেনসিক বিজ্ঞান বিচারব্যবস্থাকে এমন প্রমাণ সরবরাহ করে, যা একজন সন্দেহভাজনকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও দোষী সাব্যস্ত করতে সাহায্য করে। সর্বোপরি পক্ষপাতিত্ব বা অবিচার ছাড়াই দোষী সাব্যস্ত হওয়া বা অব্যাহতি দেয়াই ফরেনসিকের সঙ্গে আইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এ ক্ষেত্রে উচ্চ প্রযুক্তির সরঞ্জাম ব্যবহার করে ফরেনসিক বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন অপরাধীকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করতে পারে, যা বিচারব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত ও বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা আরো বৃদ্ধি করতে পারে।
আধুনিক যুগে অপরাধের হার বৃদ্ধির সঙ্গে কৌশলও বদলেছে এবং অপরাধে প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এটি প্রাসঙ্গিক যে ক্রমবর্ধমান এ ধরনের অপরাধের মোকাবিলার জন্য ফরেনসিকে সব ডিসিপ্লিনে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ যেমন প্রয়োজন, সেই সঙ্গে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ও তার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
সামগ্রিকভাবে ফরেনসিক বিজ্ঞান অপরাধ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্য প্রদান করে, যা অনেক মামলার নিষ্পত্তিতে অবদানসহ ভিকটিম ও তাদের পরিবারকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সাহায্য করতে পারে। ফরেনসিকের অন্যান্য শাখার মতো ফরেনসিক রসায়ন প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার দ্বারা বড় ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ ও সমাধানে সহায়তা করে সমাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যায়।
ফরেনসিক রসায়নবিদরা ফৌজদারি তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক সহায়তা প্রদান করে, অজানা পদার্থকে শনাক্ত করে সেগুলোকে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কিংবা নির্দোষকে মুক্ত করতে সহায়তা করেন। তারা অপরাধ সমাধানে এবং কেউ অপরাধ করেছে কি না, তা নির্ধারণে সহায়তা প্রদান করে আইনি প্রক্রিয়া সমর্থন করার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ প্রদানের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ফরেনসিক বিজ্ঞান অপরাধ তদন্তে এবং বিচারব্যবস্থার মেরুদণ্ড। ফৌজদারি এবং আইনি ব্যবস্থায় ফরেনসিক বিজ্ঞানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে, যা ব্যতিরেকে প্রকৃতপক্ষে অপরাধ বিজ্ঞানের ধাঁধা অসম্পূর্ণ। ক্রাইমসিন-অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে অক্ষত আলামত সংগৃহীত না হলে কিংবা সংগৃহীত হলেও দূষণ বা অন্যান্য কারণে আলামত আংশিক-পূর্ণভাবে ধ্বংস করা অথবা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে অপরাধের প্রকৃত দৃশ্য প্রস্ফুটন কঠিন, পরিণতি হলো অপরাধীরা শাস্তির হাত থেকে যেমন রেহাই পাওয়ার আশঙ্কা, তেমনি সন্দেহ থেকে নির্দোষ ব্যক্তিতে মুক্ত করাও কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। অপরাধদৃশ্য থেকে প্রাপ্ত অক্ষত আলামতই পারে অপরাধের প্রকৃত স্টোরি রচনা ও ফরেনসিক বিজ্ঞানকে নির্ভরযোগ্য করতে। অনেকে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ফরেনসিক বিজ্ঞানের সাহায্য ব্যতিরেকে পৃথিবীতে খুনি, চোর, মাদকপাচারকারী এবং ধর্ষকরা মুক্তভাবে বিচরণ করবে। ফরেনসিকের বিবর্তন বিজ্ঞান মৌখিক সাক্ষ্যের সীমা অতিক্রম করবে এবং একুশ শতকের বিচারব্যবস্থায় যথাযথ সহায়তা প্রদান করবে-এটাই সবার প্রত্যাশা।
বাংলাদেশে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ফরেনসিক মেডিসিন ও টক্সিকোলজী বিভাগে মেডিকেল এর ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো ও পরীক্ষা নেয়ার পাশাপাশি মেডিকোলিগ্যাল অটোপসি ও মেডিকোলিগ্যাল পরীক্ষা করে রিপোর্ট প্রদান করে বিচারব্যবস্থায় ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। তেমনি মেডিকোলিগ্যাল অটোপসি ও মেডিকোলিগ্যাল পরীক্ষা করে রিপোর্ট প্রদান সদর হাসপাতাল গুলোতেও করা হয়। এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় ডিএফএম, এমসিপিএস এবং এফসিপিএসের মতো ডিগ্রিগুলো চালু আছে। শাহবাগে অবস্থিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউ তে এমডি ডিগ্রি তে প্রফেসর ডা: মো: শাহ আলম স্যার এর সুনিপুণ নেতৃত্বে ১ম, ২য় ও ৩য় ব্যাচ অধ্যয়নরত। আশা করি, এই বিশ্ববিদ্যালয় এ আধুনিক মর্গ ও উন্নত ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে যেমনি বিচারব্যবস্থা ত্বরান্বিত হবে, তেমনি গবেষণায় ও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ।
চিকিৎসক, গবেষক ও লেখক