ঢাকা ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নতুন প্রজন্ম ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার

রহমান মৃধা
নতুন প্রজন্ম ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার

বর্তমান প্রজন্ম আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি শিক্ষিত, প্রযুক্তিসচেতন এবং ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার। সমাজের উন্নয়ন এবং দেশের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে শুধু ব্যক্তিক উন্নয়ন নয়, প্রয়োজন দেশের প্রতি দায়িত্ববোধের একটি জোরালো অবস্থান। হোক সেটি রাজনৈতিক পছন্দ বা নেতৃত্বের সাপোর্ট, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই সিদ্ধান্তগুলো যেন আমরা নৈতিকতা, সততা এবং দেশের স্বার্থ মাথায় রেখে নেই। নিজেদের এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আজ গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করছে। বাংলাদেশেও দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের একটি জাগরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে যদি দেশপ্রেম, সততা এবং সাহসিকতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তবে বাংলাদেশ একদিন দুর্নীতিমুক্ত এবং সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

দায়িত্ববান নাগরিক হতে হলে নৈতিকতা এবং সততাই হতে হবে প্রথম ও প্রধান গুণ। দেশপ্রেমিক নাগরিক হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি প্রয়োজন, তা হলো নৈতিক মূল্যবোধের উপর অটল থাকা। ভোটের মাধ্যমে আমরা দেশের নেতৃত্ব নির্বাচন করি, যা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। সামান্য অর্থের বিনিময়ে ভোট বিক্রি করে দেয়া মানে নিজের এবং দেশের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া। দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত দায়িত্ব নিয়ে সঠিক মানুষকে ভোট দেয়া। অনেকেই সুবিধা পাওয়ার জন্য ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের ‘তেল’ মারেন, যা সমাজের ন্যায়ের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করে। সঠিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন নাগরিক কখনো তোষামোদ করে কারো আশীর্বাদ পেতে চায় না; বরং সে সত্য ও সঠিক পথে থাকতে আগ্রহী। আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের অন্যায় ও দুর্নীতি রয়েছে, যা সমাজ এবং দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই একটি সৎ এবং প্রগতিশীল সমাজ গড়তে হলে প্রতিটি অন্যায় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদী হতে হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রয়েছে সত্যের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার। তাই, ভয় বা চাপের কারণে কারো কথা শুনে নীরব থাকার পরিবর্তে, সাহস নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। সৎ নাগরিক কখনো নিজের স্বার্থের জন্য কাউকে তোষামোদ করে না কিংবা নিজের নৈতিকতা বিক্রি করে না। নিজের এবং দেশের উন্নতির জন্য সবসময় সঠিক ও ন্যায়ের পথে থাকে। গণতন্ত্র মানে কেবল ভোট দেয়া নয়, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা ন্যায়, সমতা এবং সবার মতামতকে সমানভাবে সম্মান জানায়। তাই, তরুণ প্রজন্মকে শুধু ভোটের সময় নয়, প্রতিদিনই গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। দেশ এবং সমাজে যখনই কোনো অন্যায় হবে, তখনই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, যা সত্যিকার অর্থে প্রশংসনীয়। এটি সত্যিকারের গণতন্ত্রের এক নতুন মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদিতে আমরা প্রতিদিন নানা ধরনের অন্যায় এবং দুর্নীতির খবর দেখতে পাই, যা সহজেই সবার সামনে তুলে ধরা যায় এবং প্রতিকার চাওয়া যায়। প্রযুক্তির এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের দুর্নীতিমুক্ত একটি ইমেজ তৈরি করার জন্য এক হয়ে কাজ করতে হবে। দুর্নীতি মানে কেবল অর্থের অপচয় নয়, এটি একটি জাতির সম্মান এবং জনগণের আস্থাকেও নষ্ট করে দেয়। সমাজে সঠিক নেতৃত্ব আনতে হলে দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি প্রয়োজন, যা একটি নিরাপদ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের ভিত্তি। তরুণ প্রজন্মের উচিত নিজেদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্বকে নির্বাচিত করা, যারা জাতিকে গর্বিত করতে পারবে এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। আজকের প্রজন্মের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের সাহস, যুক্তি এবং নতুন ধারণা। তারা জানে, সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে কেবল সৎ এবং ন্যায়নিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রয়োজন। তাই, নিজেদের সিদ্ধান্তে এবং আচরণে সদা সত্যের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে এবং কোনো প্রলোভনে নিজের বিবেক এবং নৈতিকতা বিক্রি করা যাবে না। নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিবর্তনের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নতুন প্রজন্মের হাতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। দুর্নীতিমুক্ত, সৎ, এবং গর্বের একটি বাংলাদেশ গড়ার জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হবে, একটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত এবং মানবিক মূল্যবোধে পরিপূর্ণ সমাজ গঠন করা। নিজেদের দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে আমরা যেন কারো প্রলোভনের শিকার না হই। মানুষের জন্ম হয়েছে নিজের জ্ঞান, মূল্যবোধ এবং বিবেক দিয়ে জীবনকে সমৃদ্ধ করার জন্য। সামান্য অর্থ বা প্রলোভনের কারণে যেন আমাদের নৈতিকতা এবং মানবতাকে কখনো বিক্রি করতে না হয়। আমাদের জন্ম হয়েছে সঠিক পথে সাহস নিয়ে চলার জন্য, কারো গোলামি করার জন্য নয়। আসুন, আমাদের দায়িত্ব নিজেরাই বুঝে নিয়ে সৎ ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা আমাদের আশু ও সার্বক্ষণিক কর্তব্য হোক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত