ফ্যাশন শো কথাটা শুনলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে একদল তরুণ-তরুণী ঝলমলে পোশাকে মঞ্চে হাঁটছে। নানান ডিজাইনের পোশাক পরা তরুণ-তরুণী আমাদের মনে দোলা দেয়। ফ্যাশন শোতে দেখা পোশাক ব্যক্তিগত জীবনে কতটুকু সময় মানুষ পরে কিংবা আদৌ পরার সুযোগ পায় কি না এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
আমার কাছে ফ্যাশন মানে ব্যক্তিকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা। আরামদায়ক, রুচিসম্মত, মানসম্পন্ন, স্বাস্থ্যকর,দৃষ্টি নন্দন পোশাক মানুষের শরীরে এবং মনে আনন্দ দেয়। পোশাকের বাইরে জুতা, জুয়েলারি, চুল দাঁড়ি, ঘড়ি, ফ্যাশনের অংশ। মানুষ যেমন নিজেকে সন্তুষ্ট করতে চায় এবং একইভাবে অন্যকেও সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে। কিন্তু নিজেকে অথবা অন্যকে সন্তুষ্ট করা পৃথিবীর অন্যতম কঠিন কাজ। সন্তুষ্ট হবার প্রবণতা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।
বাংলাদেশের মানুষ বার্ধক্যে উপনীত হলে পোশাক আশাক নিয়ে অনাগ্রহী হতে দেখা যায়।
নিজে মার্কেটে গিয়ে দোকান থেকে পছন্দ মতো জামা জুতা, জুয়েলারি, চশমা, ঘড়ি কিনতে চায় না। ছেলে-মেয়ে কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের অনুরোধে মার্কেটে গেলেও নিজ থেকে আগ্রহ করে কিনতে চায় না বরং বেশি পোশাক নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে। মূলত: প্রবীণের প্রতিদিন নিয়ম করে বাইরে বেরুনোর তাড়া থাকে না। অবসর জীবনে কাজ কর্মের চাপ কম থাকায় ঘরের বাইরে বেরনোর তেমন একটা দরকারও হয় না। ঘরে পরার পোশাক অনেকেরই কয়েকটা বেশি থাকে।
আমরা প্রবীণের ফ্যাশন শো করতে চাই এই কারণে যে, যাতে করে প্রবীণরা জানতে পারে কখন কোথায় কোন ধরনের পোশাক আশাক, জামা-জুতা পরতে পরতে হয়। ধারণা দিতে চাই অতীতে আমাদের প্রবীণরা কেমন পোশাক পরিধান করত এবং এখন কেমন পরেন।
ফ্যাশন মানুষের জীবনে কেমন প্রভাব ফেলে এ বিষয়ে উপস্থিত নারী-পুরুষের মতামত উপলব্ধি বিবেচনা পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে চাই।
রাতের পোশাক ঢিলেঢালা সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ঘুমানোর আগে দাঁত মেজে, হাত-পা পরিষ্কার করে শরীরে ময়েশ্চারাইজার মেখে নরম সূতি কাপড়ের পায়জামা, গায়ে জামা দিয়ে বিছানায় যেতে হবে। আরামদায়ক বিছানায় একটি গভীর ঘুম মানুষের শরীর মন ভালো করতে প্রধান ভূমিকা রাখে।
প্রবীণরা বেশিরভাগ সময় বাসায় কাটায়। বাসায় আমরা সাধারণত সস্তা ও নিম্নমানের পুরোনো কাপড় চোপড় ও জুতা পরিধান করি। এসব নিম্ন মানের জামা জুতা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। নিম্নমানের ক্ষয় হয়ে যাওয়া জুতা পায়ে মেছ, দাগ, চুলকানি, চর্মরোগ হতে পারে। দীর্ঘ ব্যবহারে অসমতল জুতা হাঁটা চলায় ভারসাম্য রক্ষা হয় না। ফ্যাশন শোতে আমরা দেখাতে চাই বাসায় পরার মান সম্মত আরাম দায়ক পোশাক। সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে কখন কেমন পোশাক পরিধানে করলে আপনাকে সুন্দর এবং মানানসই হবে সে বিষয়ে ধারণা দিতে।
প্রবীণরা হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে পোশাক খুলতে কিংবা সেবা নিতে বিড়ম্বনায় পড়েন। আমরা মেডিক্যাল ড্রেস ফ্যাশন শোতে দেখাতে চাই যাতে করে প্রবীণ আগ্রহ করে এসব পোশাক পরিধান করেন। সকাল বিকেলে হাঁটতে যাওয়া কিংবা হাল্কা ব্যায়ামে কেমন পোশাক হবে সেসব নিয়ে ও আলোচনা থাকবে।
ফ্যাশন সচেতন মানুষের হাত ঘড়ি, চশমা, হাতের লাঠি, ক্র্যাচ ইত্যাদিতে রুচি বোধের পরিচয় দেন। অনেক প্রবীণ এক ঘড়ি এবং একজোড়া চশমা দিয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন। চশমা কয়েক জোড়া থাকা ভালো মাঝে মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা যায়।
প্রবীণ ফ্যাশন শো আমাদের কে ফ্যাশন শো সম্পর্কে প্রচলিত ভাবনা বদলে দিতে সাহায্য করবে। প্রবীণের ফ্যাশন সময়ের দাবি আমরা এটা উপেক্ষা করতে পারি না।
লেখক : কলামিস্ট