বর্তমানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বেশ আলোচনার ঝড় উঠেছে। এখানে অভিভাবকরা বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও মতামত দিচ্ছেন।
শিক্ষকরাও তাদের মতামত পেশ করছেন। সবকিছুই বেশ কিছুদিন থেকেই, বলা যায় এক বছর ধরেই পর্যবেক্ষণ করছি। অনেকগুলো বই আমি পড়েছি। আসলে আজকের এই লেখাটা মনে করি সময় হয়ে গেছে, আমি জানান দিতে চাই। আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা। কারো কথা শুনে, কারও কান কথা শুনে, প্ররোচিত হয়ে আমি কখনোই কোনো কথা লিখি না বা বলি না।
আমি যা বুঝি, দেখি এবং শুনি সেটাই হয়তো অভিজ্ঞতা হিসেবে সবার সঙ্গে শেয়ার করি। আমার কথাগুলো যদি মনে হয় আমি আত্ম-প্রচারণা করছি তাহলে ভুল হবে।
কারণ আমি আমার নিজের পরিবারের উদাহরণ দেব; কিন্তু অন্যের নাম ধরে যদি উদাহরণ দেই তাহলে তার গা জ্বালা করতেই পারে।
তাই যেহেতু শিক্ষাবিষয়ক আমার পরিবারের আদ্যপ্রান্তেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী নিয়ে চলা তাই বিষয়গুলো আমি মনে হয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে না বুঝলেও, শতভাগ যদি নাও হয়, ৯০ ভাগ মনে হয় বুঝি এবং জানি। তবে আমার দেশের বড় সমস্যা হচ্ছে যারা এই পাঠ্যক্রমের প্রণেতা যারা কিনা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আছেন তারা বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের বাংলাদেশে নিয়ে এসে প্রযোগের চেষ্টা করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য তাদের সন্তানরা এদেশে পড়াশোনা করে না, তারা মানুষের সন্তানদের উপর পরীক্ষা চালিয়ে সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এভাবে তো একটি দেশের জাতির মেরুদণ্ড তৈরি হতে পারে না। আর বিদেশি কার্যক্রম এদেশে যদি চালাতেই হয় তাহলে ধাপে ধাপে আগানো উচিত। হাতে-কলমে শিক্ষা অবশ্যই বাস্তবধর্মী। এই শিক্ষা মগজে থাকে দীর্ঘদিন। যেসব শিক্ষক-শিক্ষার্থী শিক্ষা দান করে তাদের বেতনের অবস্থা এতটাই নাজুক ফলে কোনো মানুষ এই পেশায় আন্তরিকভাবে আসে না।
বর্তমানে এটাও দেখছি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভালো রেজাল্ট করছে তারা নিজেরাও আর শিক্ষকতায় আসতে চাচ্ছে না। তারা বর্তমান যুগে প্রতিযোগিতার বাজারে অর্থ যেখানে বেশি পাচ্ছে সেখানেই তারা ধাবিত হচ্ছে।
ফলে শিক্ষার মান দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। যদি শিক্ষার মানকে উচ্চ পর্যায়ে রাখতে হয় তাহলে যারা শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে আছে তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। অহেতুক পুরো সিলেবাসটা পাল্টিয়ে দিয়ে হযবরল করার কি মানে। প্রত্যেকটা ক্লাসের সিলেবাস এলোমেলো করে অত সহজ নয়, শিক্ষার মানদণ্ডকে এভাবে ধরে রাখা।
যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক তৈরি করুন। তাদের সম্মানজনক বেতন দিন। অবশ্যই তারা জাতি গঠনে বড় একটা ভূমিকা রাখবে। যে শিক্ষকগুলো শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়, সেই শিক্ষার্থীরা একসময় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি কর্মকর্তা, বড় বড় অফিসার হয়; কিন্তু শিক্ষকের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয় না। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এগুলোকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা দরকার।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট