কোনোভাবেই বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। বিগত সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। সরকার পতনের পর সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল; কিন্তু যে লাউ সেই কদু। বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে; কিন্তু কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পার হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। কিছু পণ্যে শুল্ক কমানো হয়েছে। কিছু কাঁচাবাজারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি টিম নজরদারির সময় বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে কিছু দোকানকে জরিমানা করা হয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নিয়মিত বাজার তদারকি করছে, কিন্তু কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। দেশের প্রধান কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দুর্বল অর্থনীতির দেশে এক বড় সমস্যা।
ফলে নিম্ন আয়সম্পন্ন মানুষ ছাড়াও মধ্যবিত্তরাও তাদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজারে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রায় দুই বছর ধরে ভোগ্যপণ্যের বাজারে বেসামাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, আমদানিনির্ভরতা, বাজারে সিন্ডিকেট, মজুতদারির কারণে বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। সর্বোপরি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে বয়ে আনছে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত দুই মাসে মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা নিম্নযাত্রা দেখা গেলেও জনসাধারণের স্বস্তির জায়গা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশেষ করে ডিম, আটা, চাল, ডাল, পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে অনেকটা বেপরোয়াভাবে। অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ‘করপোরেট ব্যসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই’ পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তারা বলছেন চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকার কারণেই ডিমের দাম বেড়েছে। দুই পক্ষের তর্ক হবে, দোষারোপ করবে; কিন্তু মূলত এ দায় কার? সামগ্রিকভাবে বিষয়গুলোর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতা, মেধা ও প্রজ্ঞার অভাব দৃশ্যমান। প্রতিশ্রুতির দিনের তালিকায় দিন যোগ হয়; কিন্তু পণ্যের দাম কমে না। আরো বাড়তি টাকা গুনতে হয় ভোক্তাদের। সর্বাধিক ব্যবহৃত খাদ্যপণ্য- তেল, চিনি ও আলুর দাম কমছে না। চালের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির, বিশেষ করে স্থির আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সরকার পরিবর্তনের ফলে মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছিল, ক্রমেই তা হতাশায় রূপ নিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এটি যদি সত্য হয় তাহলে ব্যর্থতা কাদের? সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলো এখনও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছে না। তারা আন্তরিকভাবে কাজ করলে খুব দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না- বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ছাত্র-জনতার অর্জন অনেকটা ম্লান হয়ে যাবে। বিগত সরকার রাজনৈতিকভাবে যতটা শক্তিশালী ছিল- ঠিক ততটাই ব্যর্থ হয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। টাকার অবমূল্যায়ন ও সিন্ডিকেটের থাবায় পণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। যেকোনো সংকটে পণ্যের দাম একবার বাড়লে, তা কমার কোনো লক্ষণ নেই। আমাদের দেশের সমস্যা বহুমাত্রিক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের মুদ্রানীতি, সিস্টেম পলিসি, সুদনীতি, বিদেশি মুদ্রার ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পলিসি জড়িত।
আমাদের প্রত্যাশা বিগত সরকার যা ১৬ বছরে পারেননি, সেই কঠিন কাজটি এ যুগের তরুণদের দ্বারা অসম্ভব নয়। জনগণের কাছে এখন তারা আস্থার প্রতীক। সবকিছু বিবেচনা করে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙাসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। ভোক্তার স্বার্থ দেখার দায়িত্ব সরকারের। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে সরকারকে পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। জনগণকে স্বস্তি দিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের যে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, তা ভাঙতে কঠোর হওয়া জরুরি।