ঢাকা ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রবীণ পেশাদার সেবাকর্মীর গুরুত্ব

হাসান আলী
প্রবীণ পেশাদার সেবাকর্মীর গুরুত্ব

প্রবীণ জীবন নিয়ে উন্নত দেশগুলো যতটা চিন্তা করে আমাদের দেশে ততটা চিন্তা এখনো করে না। আমাদের দেশের প্রবীণরা বেশিরভাগই নিয়তি এবং সন্তাননির্ভর। সমাজ ব্যবস্থায় নানা রকমের পরিবর্তনগুলো মানতে চায় না। নিজেদের সময় কালকে বিবেচনায় নিয়ে মতামত দিতে থাকে। আমরা চাই বা না চাই প্রতিনিয়ত সমাজ পরিবর্তন হয়ে নতুন চিন্তা-ভাবনা সামনে এসে হাজির হচ্ছে। প্রযুক্তির কল্যাণে কাজের ধরন, কর্মক্ষেত্র, কাজের পরিবেশ, পারিশ্রমিক, কাজের ঘণ্টা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। সরকারি সংস্থা এটুআই এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আই এলও) গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পর দেশে ৫৪ লাখ কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। পোশাক খাতে ২৭ লাখ, ফার্নিচারে ১৪ লাখ, কৃষিপণ্য ও পর্যটন খাতে ৬ লাখ করে মোট ১২ লাখ, চামড়া শিল্পে ১ লাখ। অর্থনীতিতে নানা আশঙ্কার পাশাপাশি বিপুল সম্ভাবনাও তৈরি হয়। গবেষকরা সেবা খাতে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়নি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, হিসাব সংরক্ষণ, রোগ নির্নয়, চিকিৎসা পরামর্শ, শল্যচিকিৎসা, কলকারখানায় নিয়ন্ত্রণ, অফিস আদালতে ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ, গণ পরিবহন চলাচল, যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে। মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে যাবে। অন্যদিকে যন্ত্রনির্ভর জীবন মানুষের সামাজিক জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। কাজের জায়গা ঢিলেঢালা ভাব রহিত হয়ে কর্মমুখর হয়ে উঠবে। কাজের চাপ মানুষের পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনকে প্রাণ হীন, সৌজন্য মূলক, হাই, হ্যালোর মধ্যে আটকে দিবে। বস্তুগত অর্জন এবং সুখ ব্যক্তি কেন্দ্রিক জীবনকে চরম নিঃসঙ্গ করার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় হোক আমাদের অবসর জীবনে চলে আসতে হবে। নিজের দায় দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। খাওয়া দাওয়া, চলাফেরা, দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যক্তির উপর চলে আসতে পারে। নির্ভরশীলতা প্রবীণ জীবনে অপরিহার্য একটি বিষয়। অতি প্রবীণরা প্রায়ই নিঃসঙ্গ অবস্থায় বসবাস করেন। যারা ছেলে-মেয়ের সাথে থাকার সুযোগ পান তারাও সন্তানের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আশার তেমন একটা সুযোগ পান না। সন্তানরা তাদের কর্মজীবন, সন্তান সন্ততি, বন্ধু-বান্ধব, সামাজিকতা নিয়ে বেশ খানিকটা ব্যস্ত থাকেন। আত্মতুষ্টির জন্য কেউ কেউ দাবি করেন সন্তানের সাথে তার যাপিত জীবন খুবই আন্তরিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ। এসব দাবি অস্বীকার করার যো নেই। প্রশ্ন হলো কতজনের এমন সৌভাগ্য হয়? এটি প্রমাণিত সত্য যে, মানুষ শেষ পর্যন্ত একা। একা হয়ে যাওয়া কিংবা নিঃসঙ্গ জীবনযাপনকে শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। এটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারা সাহসের বিষয়। এই সাহস সবাই রাখতে পারে বলে মনে হয় না। নিঃসঙ্গ একাকী প্রবীণ জীবনকে শান্তিপূর্ণ ও স্বস্তিদায়ক করতে পেশাদার সেবাকর্মীর প্রয়োজন। অসুস্থ অবস্থায় কিংবা দুর্বল শরীরে দৈনন্দিন কাজকর্ম কারো সাহায্য ছাড়া সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি প্রবীণের মধ্যে কয়েক লাখ প্রবীণ রয়েছে যাদের সেবাকর্মী প্রয়োজন। খুব অল্প সংখ্যক প্রবীণ রয়েছে যারা উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সেবাকর্মী রাখতে পারেন। ভবিষ্যতে সামর্থ্যবান প্রবীণের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। পেশাদার সেবাকর্মীর চাহিদা বাড়বে। সেবাকর্মীর চাহিদা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করি না। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী কমপক্ষে এক বছরের একটি সার্টিফিকেট কোর্স চালু করা দরকার। প্রথম ছয়মাস শ্রেণি কক্ষে তত্ত্বীয় শিক্ষা গ্রহণ এবং বাকি ছয়মাস হাসপাতাল কিংবা সেবাকেন্দ্রে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ শেষে লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ। প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার আয়োজন করে সেবাকর্মীদের লাইসেন্স দিতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত সেবাকর্মীরা হবে পেশাদার সেবাকর্মী। সেবাকর্মীর দায় দায়িত্ব, কর্তব্য, নিরাপত্তা, পারিশ্রমিক, ছুটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা নির্ধারণ করা হবে।

লেখক : কলামিস্ট

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত