ঢাকা ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আসছে না আইন প্রয়োগের বিকল্প নেই

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আসছে না আইন প্রয়োগের বিকল্প নেই

রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ ক্রমেই মারাত্মক হয়ে উঠছে। অবস্থা এত নাজুক যে, সাম্প্রতিক সময়ে ছুটির দিনেও ঢাকার বায়ুদূষণ বিশ্বরেকর্ড করছে। অথচ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যান চলাচল যেমন কম থাকে, তেমনি অনেক অফিস আদালত, কল-কারাখানা বন্ধ থাকায় মানুষ চলাচলও থাকে খুব কম। তারপরও বন্ধের দিনে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরে পরিণত হয়। যেমন- গত সপ্তাহে এই নগরী ছিল বিশ্বের ১২৬টি দেশের মধ্যে বায়ুদূষণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়।

বাতাসের বিশুদ্ধতা মাপা হয় এতে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএমণ্ড২.৫ কতটা আছে তার ভিত্তিতে। গত সপ্তাহে দেখা গেছে, ঢাকার বাতাসে পিএমণ্ড২.৫ এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গ্রহণযোগ্য মানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে যে, বিশেষজ্ঞরা এখন ঢাকাবাসীকে ঘরের বাইরে গেলে করোনাকালের মতো মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। এমনকি খোলা জায়গায় ব্যায়াম না করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। কারণ দূষিত বাতাসে ব্যায়াম করলে সুস্বাস্থ্য অর্জনের পরিবর্তে তা স্বাস্থ্যহানির কারণ হবে।

এখন দেশ চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। উপদেষ্টা হিসেবে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গত চার মাসে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে এমন কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা জানা যায়নি, যা সত্যিকার অর্থে সুফল বয়ে এনেছে। শুধু বায়ুদূষণ নয়, আরো অনেক দিক থেকেই ঢাকা দূষণে জর্জরিত। নদীদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণ, খাদ্যদূষণ, বর্জ্যদূষণ প্রভৃতি। পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা সম্প্রতি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে নতুন আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন। এটি ঠিক যে, শব্দদূষণে নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অতিরিক্ত শব্দের কারণে মনোযোগ দিতে না পারায় অনেকের লেখাপড়াসহ নানা কাজে বিঘ্ন ঘটছে, শারীরিক-মানসিক শৈথিল্য আসছে। কিন্তু নতুন আইন নিয়ে আশাবাদী হওয়ার তেমন কারণ নেই। দেশে প্রচুর আইন আছে, যার প্রয়োগ কখনো হয় না। উপদেষ্টা জানিয়েছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের হাতে ক্ষমতা দেয়া হবে। সবার জানা, পুলিশের হাতে ক্ষমতা দেয়ার অর্থ তাদের উপরি কামানোর আরো একটি সুযোগ তৈরি করে দেয়া। প্রকৃত অর্থে নগরীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ শুধু সরকারের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে না। মানুষের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণও জরুরি। তবে সরকারের পদক্ষেপই এ ক্ষেত্রে মুখ্য। এমনকি সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রেও। বাড়ির সামনে ময়লা ফেলে রাখলে যদি জেল-জরিমানা করা হয় তাহলে পরের দিন থেকে সংশ্লিষ্ট বাড়িওয়ালা সচেতন হয়ে যাবেন। এ কথা বলা অতুক্তি হবে না যে, অতীতে দেখা গেছে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রচার-প্রচারণামূলক কর্মসূচিও জনসচেতনতা তৈরিতে তেমন কাজে আসেনি। শুধু শুধু রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়েছে। সুতরাং জেল-জরিমানার দরকার আছে। লক্ষ্যণীয়, বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশীরাই সব নিয়মণ্ডকানুন যথাযথভাবে মেনে চলেন। তার কারণ আইনের পক্ষপাতহীন প্রয়োগ। এটি করতে হলে সরকারি দফতরগুলোর তৎপরতা শতভাগ বাড়াতে হবে। এর বিকল্প নেই। যানবাহন, ইটভাটা বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা সংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে ঢাকার বায়ুদূষণ অনেক কমে আসবে, এটি নিশ্চিত করে বলা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত