রাগ সংবরণ : প্রকৃত বীরত্বের পরিচয়
ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিম
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাগ মানুষের স্বাভাবিক একটি অনুভূতি, তবে এর সঠিক নিয়ন্ত্রণ না থাকলে এটি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, সম্পর্ক এবং কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইসলামে রাগ সংবরণকে এক বিশেষ গুণ হিসেবে দেখা হয়েছে এবং এটি মানুষের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন- যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগ সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। (সুরা আলে ইমরান : ১৩৪)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যারা রাগের সময় সংযম প্রদর্শন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করতে পারে, তারা আল্লাহর কাছে প্রিয়। এই গুণ ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বলবান সেই ব্যক্তি নয়, যে কুস্তিতে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে; বরং সেই ব্যক্তি বলবান, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে।’ (মুসলিম) এই হাদিস আমাদের শেখায়, প্রকৃত শক্তি হলো ধৈর্য ও সহনশীলতায়। ক্রোধের সময় শান্ত থাকা এবং যুক্তিবোধ বজায় রাখা একজন মুসলমানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
ক্রোধকে শয়তানের প্রভাব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাসুল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, রাগান্বিত অবস্থায় ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পাঠ করতে, যাতে শয়তানের প্রভাব কমে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ রাগান্বিত হয়, তবে সে যেন দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়ে এবং বসে থাকলে শুয়ে পড়ে।’ (মুসনাদে আহমদ)।
রাগ মানুষকে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করে। এটি পরিবারে কলহ, সমাজে অস্থিরতা এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। অতিরিক্ত রাগ দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদ, বন্ধুত্বে দূরত্ব এবং পেশাগত জীবনে ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই রাগ সংবরণ করা মানে নিজের প্রতি এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা রাগের সময় ধৈর্য ধারণ করেন এবং অন্যদের ক্ষমা করেন। তারা বুঝতে পারেন যে, প্রতিশোধ নেয়া সাময়িক আনন্দ দিলেও দীর্ঘমেয়াদে তা অনুশোচনা ডেকে আনে। রাগ সংবরণ ব্যক্তির নৈতিক ও সামাজিক গুণাবলির উন্নতি ঘটায়। এটি ব্যক্তিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথে পরিচালিত করে এবং পারস্পরিক সম্পর্ককে দৃঢ় করে। রাগ সংবরণে ধৈর্যশীল হওয়া প্রকৃত বীরত্বের পরিচায়ক। আমাদের উচিত, রাসুল (সা.) এর শিক্ষা অনুসরণ করে জীবনে ধৈর্য, সহনশীলতা এবং ক্ষমার গুণাবলি চর্চা করা, যাতে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি।