স্বাস্থ্যে উদাসীনতা নয় চিকিৎসাসেবায় ভারতনির্ভরতা
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৪ বছরেও আমরা নিজেদের একটি টেকসই স্বাস্থ্য খাত দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এ ক্ষেত্রে বিদেশনির্ভরতা ব্যাপকভাবে রয়ে গেছে। বিশেষ করে ভারতের প্রভাব তীব্র। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে ভারতের প্রভাব দুইভাবে বিদ্যমান। এক. প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক রোগী ভারতে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত. ভারতের অনেক চিকিৎসক বৈধ-অবৈধভাবে এ দেশে অবস্থান করছেন। ফলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে ভারতে। এতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আমাদের স্বাস্থ্য খাত কতটা ভারতনির্ভর তা খোদ ওই দেশের মিডিয়ার খবর থেকে জানা যায়। ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তথ্যের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর, ২০২০ সালে ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাওয়া বিপুলসংখ্যক বিদেশির মধ্যে ৫৪ শতাংশ গেছেন বাংলাদেশ থেকে। ২০০৯ সালে ভারতে চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়া বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশিদের হার ছিল ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তখন ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ মেডিকেল ট্যুরিস্ট নিয়ে এই তালিকায় শীর্ষে ছিল মালদ্বীপ। কিন্তু ২০১৯ সালে ভারতে মেডিকেল ট্যুরিস্টদের মধ্যে বাংলাদেশিদের হার দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ, বিপরীতে মালদ্বীপের হার নেমে আসে মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশে।
অন্যদিকে বছরের পর বছর ভারতীয় চিকিৎসকরা বিনা অনুমতিতে এ দেশে রোগী দেখছেন। বিএমডিসি সূত্র মতে, বর্তমানে ১৫ জন ভারতীয় চিকিৎসক কয়েকটি হাসপাতালে বৈধ অনুমতি নিয়ে আছেন। শতাধিক চিকিৎসক রয়েছেন অবৈধভাবে। দেশে বিদেশি চিকিৎসক কাজ করার বিষয় বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহীনুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে অনেক ভারতীয় চিকিৎসক প্রযুক্তি হস্তান্তরের নামে এ দেশে আসছেন। কেউ আসছেন ভিজিটর ভিসায়। তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ও চেম্বারে বছরের পর বছর রোগী দেখেন। এমন ঘটনাও আছে, কেউ টানা ১২ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে বিনা অনুমতিতে রোগী দেখেছেন। এ অবস্থা চরমে পৌঁছে পতিত স্বৈরাচারের আমলে। দিল্লির তাঁবেদার সরকার ভারতীয় চিকিৎসকদের এখানে প্র্যাকটিসের সুযোগ করে দেয়। দেশের নামি-দামি হাসপাতালে প্রযুক্তি হস্তান্তরের নামে বেশি ভারতীয় চিকিৎসক আনা হয়েছে। যদিও দেশের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, চিকিৎসাপ্রযুক্তি হস্তান্তরে কোনো বিদেশি চিকিৎসককে তিন বছর থাকতে হয় না। সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণই যথেষ্ট।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের বিশেষ শাখার ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, দেশে বৈধভাবে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ৪৫ হাজার। এদিকে অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে কয়েক দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশিদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারির পরও দেশে অবস্থানরত অবৈধ বিদেশিদের এখন পর্যন্ত তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। আইনি দুর্বলতা ও বিদেশি নাগরিকদের সমন্বিত কোনো তথ্যভাণ্ডার না থাকায় বিনা বাধায় বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন অবৈধভাবে থেকে যাওয়া বিদেশিরা। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে সুযোগ দিয়ে দেশের স্বাস্থ্য খাত পুরোপুরি ভারতনির্ভর করেছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে চিকিৎসা খাত স্বাবলম্বী করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিকল্প নেই।