ঢাকা ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশজুড়ে চাঁদাবাজি

তালিকা প্রণয়নই যথেষ্ট নয়
দেশজুড়ে চাঁদাবাজি

চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ঢাকা শহরে চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে পুলিশ, ছাত্র ও রমনা মডেল থানা এলাকার নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি জানিয়েছেন, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই এ তালিকা ধরে অভিযান শুরু হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, চাঁদাবাজি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। ফুটপাতে হকারদের বিষয়ে তিনি বলেছেন, হকারদের কাছ থেকেও কাউকে চাঁদা দেয়া যাবে না।

রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব জায়গায় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য চাঁদাবাজির বিষয়টি বহুদিন ধরেই আলোচনায় এলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় কিংবা বেশি আলোচিত হয়, তখন তড়িঘড়ি তদন্ত কমিটি গঠন ও তালিকা প্রণয়ন পর্যন্ত এর গতি সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে। লোকদেখানো ছাড়া আদতে চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। নিত্যপণ্য, বিশেষত কৃষিপণ্যের উচ্চমূল্যের পেছনেও যে চাঁদাবাজি অনেকাংশে দায়ী, সে রহস্য আগেই ভেদ হয়েছে। বস্তুত এমন দুষ্টচক্রের কবলে পড়ে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে এবং এতে ঠকছেন উৎপাদনকারী কৃষক ও রাজধানীর খুচরা বাজারের সাধারণ ক্রেতা। যুগান্তরের অনুসন্ধানে অতীতেও দেখা গেছে, উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য আসতে যে কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। এর সঙ্গে নামে-বেনামে চাঁদাবাজি ওতোপ্রোতভাবে যুক্ত। মহাসড়কে, টার্মিনালে, ফেরিঘাটে, নগরীর প্রবেশপথ- এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে চাঁদা আদায় হয় না। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শুধু বাজারেই যে কত ধরনের চাঁদাবাজ রয়েছে, সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা নিজেই সে কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, বাজারে গেলে দুই-তিন ধরনের চাঁদাবাজ দেখা যায়। এদের ভেতর কিছু (চাঁদাবাজ) আগের সরকারের, কিছু লোক ভবিষ্যৎ সরকারের আর কিছু লোক স্থানীয়। তারা পরস্পর সমঝোতা করে চাঁদাবাজি করেন।

দুঃখজনক হলো, অবৈধ চাঁদাবাজির সঙ্গে কেবল বিশেষ কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত নয় অথবা বিষয়টি কোনো একটি জেলা বা অঞ্চলের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়। বস্তুত অবৈধ চাঁদাবাজির শেকড় দেশজুড়ে বিস্তৃত। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে রাজনীতিকসহ প্রভাবশালীদেরও সম্পৃক্ততা থাকে। এমনকি পুলিশ বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যও যে এসব চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকে, তাও অজানা নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ নিজেই যদি চাঁদা আদায় করে, তাহলে অন্য চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নেবে কীভাবে? আমাদের শেষ কথা হলো, বারবার শুধু চাঁদাবাজদের তালিকা করলেই হবে না, এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর ব্যবস্থাও নিতে হবে। একইসঙ্গে জানার বিষয় রয়েছে, এ তালিকায় আগে যারা ছিল, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা। জানা দরকার, বিগত সরকার পতনের পর সুযোগসন্ধানী যেসব চাঁদাবাজ সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে, তাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে কি না। আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের যেসব ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও চাঁদাবাজি বন্ধের বিষয়টিও রয়েছে। কাজেই শুধু তালিকা প্রণয়ন নয়, চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত