বাংলাদেশের শীতকাল, বিশেষ করে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, পিকনিক এবং ট্যুরের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময় দেশের আবহাওয়া মনোরম থাকে, গরমের ক্লান্তি বা বর্ষার কাদা-পানিহীন পরিবেশ মানুষকে ঘরের বাইরে যেতে অনুপ্রাণিত করে। স্কুল-কলেজ, অফিস এবং পরিবার এই সময় দলবেঁধে দেশের নানা দর্শনীয় স্থান যেমন সিলেটের জাফলং, বান্দরবানের নীলগিরি, রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন অথবা মহাস্থানগড়সহ ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানগুলোতে ঘুরতে যান। দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘুরতে গিয়ে মানুষ নিজেদের আনন্দে মগ্ন থাকে, তবে অনেকেই পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করে না। ভ্রমণকালে তারা যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক, পলিথিন, পানির বোতল, খাবারের প্যাকেট এবং অন্যান্য বর্জ্য ফেলে যায়, যা স্থানটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে। এসব বর্জ্য মাটিতে মিশতে প্রচুর সময় লাগে এবং এটি সেখানকার পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। শুধু মানুষ নয়, সেখানকার বন্যপ্রাণীও এই বর্জ্যরে শিকার হয়। প্রাকৃতিক স্থানগুলোতে মানুষের অবহেলা এবং পরিবেশ দূষণের ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ছে। সুন্দরবন, যেখানে বাঘ, হরিণ এবং বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুরা নির্ভর করে রয়েছে, সেখানকার দূষণ তাদের আবাসস্থল নষ্ট করছে। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে সৈকতের সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে এবং সাগরের প্রাণী যেমন কচ্ছপ ও মাছ প্রভাবিত হচ্ছে। পার্বত্য এলাকার ঝর্ণা বা নদীগুলোতে পানিদূষণ হলে তা শুধু পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবে না, বরং সেখানকার মানুষকেও স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে ফেলবে। তবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রতিটি ভ্রমণকারীর উচিত দায়িত্বশীল আচরণ করা। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলার বদলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতে হবে। প্লাস্টিকজাত পণ্য কম ব্যবহার করা, পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী ব্যবহার করা এবং স্থানীয় পরিবেশের প্রতি সম্মান দেখানো প্রতিটি ভ্রমণকারীর নৈতিক দায়িত্ব। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের উচিত পর্যটন স্থানগুলোতে কঠোর নিয়ম চালু করা এবং নিয়ম ভঙ্গকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রকৃতি এবং এর সৌন্দর্য আমাদের সম্পদ। এটি নষ্ট করা মানে আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা। পরিবেশ রক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব। তাই যদি আমরা সবাই মিলে সচেতন হই, তাহলে এই দর্শনীয় স্থানগুলোকে শুধু বর্তমানের জন্য নয়, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ।