ঘরে-বাইরে সব জায়গায় ছিলো নানা প্রতিবন্ধকতা। ছিলো নানা অপপ্রচার। একদিকে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র অন্যদিকে পুরো রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে পথরোধের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। কণ্ঠরোধে বিচার বিভাগকেও কাজে লাগানো হয়। তবে সেসবকে পেছনে ঠেলে দিয়ে তিনি এগিয়ে গেছেন অবিচল লক্ষ্যে। বুকের ভেতর দেশপ্রেমকে লালন করে দেশের গণতন্ত্র আর মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করেছেন সবসময়ে। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওয়ান ইলেভেন থেকে তিনি নির্বাসিত জীবন পার করছেন লন্ডনে। সেখান থেকেই তিনি যেমন দলের সবচেয়ে দুর্দিনে হাল ধরেছেন, নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন, তেমনি আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করেছেন অতি গোপনে। প্রচার বিমুখতায় তার অনেক কাজই রয়ে গেছে আড়ালে। আবার আদালত কর্তৃক তার বক্তব্য-বিবৃতি, কার্যক্রম প্রচারে আইনি বাধ্যবাধকতায় এতোদিন সেটা কারো জানার সুযোগও ছিলো না।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। বাবার আদর্শে ভর করে আর খালেদা জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজকের তারেক রহমান বেড়ে উঠেছেন। তবে তার এই পথ কখনোই মসৃণ ছিলো না। নানা অপবাদ, নির্যাতন আর দেশি-বিদেশি নানামুখি ষড়যন্ত্র মোকাবিলার মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনন্য উচ্চতায়। সময়ে প্রয়োজনে তিনিই এখন দেশের হাল ধরার অপেক্ষায়। সময়ের প্রয়োজনে যেমনটা তাকে পুরো দলের কাণ্ডারি হতে হয়েছিলো, নেতৃত্ব দিতে হয়েছিলো ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে এখন সেই সময়ের প্রয়োজনেই তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে অপেক্ষায় পুরো দেশ।
তার এই দীর্ঘ পথচলায় অনেক চড়াই-উৎরাই পারি দিতে হয়েছে। ধাপে ধাপে তিনি এগিয়ে গেছেন। যখন সবাই ধরে নিয়েছিলো- বিএনপিকে দিয়ে আর কিছু হবে না। তখন তিনি পুরো দেশে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ ঘটিয়ে একটি জাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন। আন্দোলনকে তিনি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর এক দফার আন্দোলনকে টেনে নিয়ে গেছেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের দিকে। দেশের সকল জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে ডান-বাম আর ইসলামপন্থি দলগুলোকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে পুরোধা হিসেবে কাজ করেছেন তারেক রহমান। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে দলীয় নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন তার ম্যাজিক নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সরকারকে সহযোগিতা করতে নানামুখী কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিজের নেতৃত্ব ক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন তারেক রহমান।
এখন তিনি দেশ গঠনে পুরো দলকে মাঠে নামিয়েছেন। সেখানে দেশপ্রেম নিয়ে যেমন আছে কঠোরতা, একাগ্রতা আর তেমনি আছে মানবিকতা। দখল, চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি কাউকেই ছাড় দিতে নারাজ। যেখানেই অভিযোগ সেখানেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। অন্যদিকে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা জীবন দিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন তাদের পাশে থাকছেন অকৃত্রিমভাবে। তিনি সারা দেশে কাজ করছেন আর্ত মানবতার সেবায়। প্রচারবিমুখ হওয়ায় যা কখনো সামনে আসেনি। তিনি নিজেও এসব কাজ প্রকাশ্যে আনতে চান না।
দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরে অসহায় সাধারণ মানুষের জন্য নানা ধরনের সেবা কার্যক্রমে যুক্ত তিনি। বিদেশে অবস্থান করলেও এসব কর্মকাণ্ড তিনি নিজেই সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তদারকি করেন। চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ক্ষমতায় থেকেও তিনি এরকমভাবেই আড়ালে-আবডালে কাজ করে গেছেন। তবে সেসব সামনে না আসলেও গুজবে আর অপপ্রচারের দেয়াল তুলে দেয়ার চেষ্টা সবসময় ছিলো ষড়যন্ত্রকারীদের। যদিও সেসবে তিনি মোটেও তোয়াক্কা করেননি। বিচলিত হননি। সংবাদ মাধ্যমের অবারিত মুক্ত স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন বলে সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছিলেন তার প্রতিপক্ষরা। এখনো থেমে নেই সেই ষড়যন্ত্র। তবে কোনো কিছুতেই তারেক রহমানের আদর্শিক পথচলা রোধ সম্ভব হয়নি।
তারেক রহমান কাজ করেছেন পরিবেশ নিয়ে, তিনি দেশের কৃষি ও কৃষক নিয়ে কাজ করেছেন মাঠে থেকে। সম্ভাবনার আশার আলো দেখিয়েছেন। দেশের বনাঞ্চল রক্ষায় এবং কার্বন নিঃস্বরণ কমিয়ে আনতে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ে শুধু ঢাকাতেই এক লাখ নিম গাছ লাগিয়েছিলেন। বগুড়া খোকন পার্কে শত বছরের পুরনো একটি জয়তুন গাছ ছিল। সেই গাছটি কাটার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তখন। সেটি জানার পর তারেক রহমান গাছটি রেখেই পার্ক নির্মাণের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন গাছটির রক্ষা হলেও কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পার্কটি নতুন করে করার নামে গাছটি কেটে ফেলেছেন। বগুড়ায় রাস্তায় ডিভাইডার করে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। তিনি নিজের হাতে কিছু গাছ লাগিয়েছিলেন সেখানে। নির্বাসনে থাকার পরও বিভিন্ন সময়ে দলগত একই কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মীদের দিয়ে। প্রকৃতি এবং প্রাণী নিয়ে চিন্তা করেন তারেক রহমান।
আর্ত মানবতায় তিনি সবসময়ে ছিলেন নমনীয়। ২০০৪ সালে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে নভেম্বর মাসে বনানী ১১ নাম্বার সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময়ে খেয়াল করলেন- রাস্তার ধারে দুই মেয়েসহ একজন মধ্যবয়ষ্ক নারী রক্তবমি করছেন। আর মেয়েরা মানুষের কাছে হাত পাতছেন সাহায্যের আশায়। কিছুদুর এগিয়ে তিনি গাড়ি থামান এবং একজনকে পাঠান বিষয়টির খোঁজ জানতে। জানা গেছে, দিনাজপুর থেকে চিকিৎসার জন্য মা’কে নিয়ে দুই মেয়ে ঢাকায় এসেছেন। তবে ব্যায়বহুল চিকিৎসার খরচ জোগাতে অসুস্থ মাকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা। তারেক রহমান তাৎক্ষণিক তাদের কাছে সংবাদ পাঠান- চিকিৎসার পুরো ব্যয় বহন করলে তারা করবেন কি না। অসুস্থ ওই নারী রাজি হলে তার পুরো চিকিৎসার ব্যয় বহন করেন তারেক রহমান। সুস্থ হওয়ার পর আবারো ওই পরিবারের কাছে বার্তা পাঠানো হয়- তারা কি গ্রামের বাড়িতে যাবেন নাকি ঢাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করবেন। যদি গ্রামে যান তাহলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পরিবারটি গ্রামে যেতে রাজি হওয়ায় তাদের দিনাজপুরে নিজের খরচে একটি মুদি দোকান করে দেয়া হয়। পুরো এই প্রক্রিয়ায় ওই পরিবারটি জানতে পারেননি কে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, কে সহায়তা করেছেন। তারেক রহমানই তা জানতে দিতে চাননি। শুধুমাত্র ভালোবাসার আত্মতৃপ্তির জন্যই তিনি এসব কাজ করে যাচ্ছেন। তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় মাদ্রাসা, হাসপাতাল। নিজ উদ্যোগেই এগুলোর খরচ বহন করছেন তিনি। অনেকেই জানেন না তারেক রহমান সরাসরি এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।
ওয়ান ইলেভেন পরবর্তি সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যখন বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালু করা হয় তখন চিকিৎসার জন্য তারেক রহমান লন্ডনে। এর মধ্যেও তিনি নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে প্রথমে গোপনে পরে একটি সেল গঠন করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সেই সেলের অধীনে এখনো প্রতি বছর দুই ঈদ ছাড়াও বিভিন্ন দিবসে প্রায় ১৩০০ গুম খুনের শিকার পরিবারের পাশে দাড়ান তিনি। এসব পরিবারের মধ্যে ৪৩টি পরিবারের পুরো দায়িত্ব তিনি একা কাঁধে নিয়ে চলছেন। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এসব পরিবারের মধ্যে ৪ জন মেডিকেলপড়ুয়া শিক্ষার্থী রয়েছেন বর্তমানে। তার সহযোগিতায় ১২ জন এমবিবিএস পাশ করে আজ চিকিৎসক হয়েছেন। সাতজন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। সবচেয়ে সাফল্যগাথা দুইজন সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে। অর্থাভাবে মেধাবী দুই ভাইয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার সংবাদ প্রচারের পর তা নজরে আসে তারেক রহমানের। কোন দল, কোন মতাদর্শ সেদিকে খেয়াল না করে তাৎক্ষণিক তিনি ওই দুই ভাইয়ের দায়িত্ব তুলে নেন। ২০০৯ সাল থেকে তাদের পড়াশুনাসহ সকল কিছুর দায়িত্ব তিনি পালন করেন। আজ ওই দুই ভাই সেনাবাহিনীর গর্বিত কর্মকর্তা। আজ গর্বভরে দেশের সেবায় এসব চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা সেনা কর্মকর্তা কাজ করছেন। অথচ তাদের অনেকেই জানেন না- তাদের পাশে কে দাঁড়িয়েছিলেন। কখনো জানানোর প্রয়োজনও মনে করেননি তারেক রহমান। সবার অগোচরে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ওইসব মেধাবীদের দিকে। যার বদান্যতায় আজ দেশের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে অনেকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
পত্রিকার সংবাদ প্রকাশের পর ক্যান্সার আক্রান্ত দুই শিশু ও এক নারীর পুরো চিকিৎসার ব্যায়ভার বহন করছেন তারেক রহমান। আন্দোলন-সংগ্রামে পঙ্গুত্ব বরণ করা নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অসহায় মানুষের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন করেছেন ২৮ জনের। ২০০৩ সালে আওয়ামী লীগের হরতাল চলাকালীন ওই দলের নেতাকর্মীদের দেয়া আগুনে সিএনজি চালকের পুরো চিকিৎসা এবং পরিবারের ভরণপোষণ তিনি ব্যয় করেন। জন্মগতভাবে হার্ট ছিদ্র শিশুদের চিকিৎসা, ভাল্ব সংযোজনের ব্যয়ভার তিনি বহন করেছেন অন্তত ৪০ জনের।
বগুড়ার গাবতলী থানায় লাঠিগঞ্জের তিন মাথার মোড়ে অন্ধ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় গরীব ও অসহায় ছাত্রদের চক্ষু চিকিৎসায় হাত বাড়িয়ে দেন তারেক রহমান। ২০১১ সালে তিনি ওই মাদ্রাসার অন্ধ শিক্ষার্থীদের সংবাদ পাওয়ার পরপরই তিনি তিনি এ উদ্যোগ নেন। শুধু চিকিৎসাই নয়, মাদ্রাসা পরিচালনায় তিনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। একই এলাকার হাফিজিয়া নুরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানার দায়িত্বও তিনি নিজ হাতে পরিচালনা করছেন। সারা দেশে এরকম আরো ৫টি এতিমখানার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
অসহায় পরিবারকে নিজের উদ্যোগে ৫টি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। এরমধ্যে ৩টি ঘরের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি দুটি ঘরের কাজ চলছে। এরমধ্যে বগুড়াতে দুটি, লক্ষ্মীপুর এবং রাজবাড়ীতে একটি করে। বাকি দুটির একটি লালমনিরহাটে এবং আরেকটি ফেনীতে। কুষ্টিয়ায় দুইজন রিকশাচালককে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। গুম-খুনের শিকার অসহায় পরিবারের মেয়েদের লেখাপড়ার দায়িত্ব পালনের পর তাদের বিয়ে দেয়ার মহতী কাজের দায়িত্বও নিজ কাঁধে তুলে নেন তারেক রহমান। সম্প্রতি মহা ধুমধাম করে বিয়ে দেন সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর কাশিয়ান ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মরহুম অলিউল্লা মোল্লা অলির বড় মেয়েকে। আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে অলিউল্লা নিহত হয়েছিলেন। এরকমভাবে ফেনীসহ আরো অনেক জায়গায় তিনি এ বিবাহ দেন।
তারেক রহমান তার মহতি কাজের আরেক দুয়ার খুলেছেন জুলাই-আগস্টে আহত-নিহত ছাত্র-জনতার পাশে দাড়ানোর মধ্য দিয়ে। আহতদের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহনের পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের পাশেও দাঁড়াচ্ছেন অকৃত্রিমভাবে। ‘আমারা বিএনপি পরিবার’র পক্ষ থেকে এরই মধ্যে দেড় শতাধিক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
যে প্রক্রিয়া তিনি চলমান রেখেছেন। খুব দ্রুততার সাথে তিনি গণঅভ্যুত্থানে নিহত প্রত্যেক পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। ওই আন্দোলনে গুলিতে নিহত ময়মনসিংহের শহীদ হাফেজ মো. সাদেকের পরিবারকে একটি দোকান করে দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আমরা বিএনপি পরিবারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান। সাদেকের পরিবারকে এই দোকান বুঝিয়ে দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
দিনাজপুরে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দিনমজুর আব্দুর রশিদ। তাকে দিনাজপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হলে সেখানে স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে না পেরে মাত্র ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তিন দিনের নবজাতককে বিক্রি করে দিয়েছিলেন স্ত্রী রত্না বেগম। এমন সংবাদ জানামাত্র তারেক রহমানের নির্দেশনায় ঢাকা থেকে ছুটে যান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আরো অনেকে। আমরা বিএনপি পরিবারের পক্ষ থেকে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ায় দলটি।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে পুলিশি নির্যাতনে নিহত যুবদল নেতা ফেরদৌসের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। একখণ্ড জমি কিনে ও মাটি ভরাট করে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন তিনি। নিহতের স্ত্রী জেসমিন আক্তার ও দুই সন্তানের নিরাপদ আবাসস্থল করে দেওয়ায়, ওই পরিবারের দায়িত্ব নিজে তুলে নেয়ায় খুশি সবাই। নিহতের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, তারেক রহমান তাদের মাথার ছায়া হিসেবে কাজ করছেন। তার স্বামীকে হত্যার পর যখন চারিদিকে অন্ধকার ধেয়ে আসছিলো তখনই তিনি অভিভাবক হিসেবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন সন্তানদের নিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই হয়েছে।
তারেক রহমান ১৯৬৭ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে তিনি বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটির সদস্য হিসেবে রাজনীতির পথচলা শুরু। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনে যোগ দেয়ার আগে থেকেই তারেক রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারেক তার মা খালেদা জিয়ার সহচর হিসেবে সারা দেশের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তারেক রহমান বেগম জিয়ার প্রচারণা কার্যক্রমের পাশাপাশি পৃথক পরিকল্পনায় দেশব্যাপী নির্বাচনি প্রচারণা চালান। মূলত ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তার অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতিতে তারেক রহমানের সক্রিয় আগমন ঘটে।
২০০২ সালে তারেক রহমান দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্মপ্রাপ্ত হন। দলের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে নিয়োগ লাভের পরপরই তারেক রহমান দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সাথে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। মূল সংগঠন সহ সহযোগী সংগঠন যেমন জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে তৃণমূল সভা আয়োজন করেন। মূলত এই জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মাঝে তারেক রহমান শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিতি থেকে বেরিয়ে এসে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার এই সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বিরোধী পক্ষ অপপ্রচার শুরু করে। রিসার্চ সেল হিসেবে পরিচালিত ‘হাওয়া ভবন’কে নিয়ে তখন নানান মুখরোচক গল্প প্রচার করতে থাকেন তারা। তবে এর কোনটারই ভিত্তি ছিলো না। ওয়ান ইলেভেন প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে তার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টস্থ মইনুল রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ওই সময়ে ১৪টি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে তখন তার উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়। শারীরিক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে প্রথমে তিনি তৎকালীন পিজি হাসপাতালে এবং পরে লন্ডনে চলে যান।
২০০৯ সালের বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ২০১৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তাকে একই পদে বহাল রেখে দায়িত্বের পরিধি বাড়ানো হয়। ২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর গঠনতন্ত্র মোতাবেক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কান্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আরো অর্ধ শতাধিক মামলা করে।
বেশ কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিও ঘোষণা করা হয়। যদিও একটি মামলায় বেকসুর খালাস দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এ বিচারক মোতাহার হোসেন। এর মাধ্যমেই ওই সময়ে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিচার ও শাস্তি ঘোষণার প্রকৃত চিত্র অনুধাবন করা যায়।