গত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ বছরও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর মাত্র কয়েকদিন পরই শুরু হবে নতুন শিক্ষাবর্ষ। নতুন বইয়ের অপেক্ষায় আছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী। অথচ এখনো অধিকাংশ বই ছাপা বাকি রয়েছে।
জানা যায়, নবম-দশম শ্রেণির বেশির ভাগ বই ছাপানোর চুক্তি এখনো সম্পন্ন হয়নি। শুধু প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি বই ছাপানোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাকি সাত শ্রেণির মধ্যে কয়েকটি শ্রেণির আংশিক বই ছাপানো শুরু হয়েছে। এবার স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ কোটি বিনামূল্যের বই ছাপানোর কথা থাকলেও সব মিলিয়ে ১০ কোটি বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়েছে। খরচ সাশ্রয় করতে এবার বই উৎসব না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সাধারণত এ সময়ের মধ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষের সব বই ছাপার কাজ শেষ হয়ে থাকে। অথচ এবার বেশকিছু শ্রেণির বই ছাপা শুরুই হয়নি। এছাড়া বই ছাপানোর জন্য বাজারে কাগজের সংকটও চলছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, কাগজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। জানুয়ারির শুরুতেই সব শ্রেণিতে বই দেয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই প্রাপ্তি নিয়ে এবার যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, এর দায় জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এড়াতে পারে না বলে মনে করি আমরা।
মানসম্মত ও নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়ন যেন একটি অসাধ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অতীতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, মুদ্রণ ও বিতরণের পুরো প্রক্রিয়ায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। এবার যাতে তেমনটি না ঘটে, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত বই সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব না হলে তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের কাজে জটিলতা সৃষ্টি হবে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে।