ঢাকা ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টেকসই উন্নয়ন ও নতুন প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ

মালিহা মেহনাজ
টেকসই উন্নয়ন ও নতুন প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ

টেকসই উন্নয়ন বলতে এমন একটি উন্নয়নকে বোঝায়, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং পরিবেশগত ভারসাম্য একত্রে বজায় রাখা হয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণ, বৈষম্য কমানো এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তবে এ লক্ষ্য অর্জনে নতুন প্রজন্মকে একাধিক সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, এবং সম্পদের অসম ব্যবহার টেকসই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ সমস্যা আরো গভীর। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের বড় চ্যালেঞ্জ। বন্যা, নদীভাঙন, লবণাক্ততার বিস্তার এবং খরার কারণে প্রতিবছর লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে ৫,০০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় (তথ্যসূত্র : পানি উন্নয়ন বোর্ড)।

UNDP-এর তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৭ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুহীন হচ্ছে। এসব সমস্যা কৃষি উৎপাদন হ্রাস এবং খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে। তরুণদের বেকারত্ব টেকসই উন্নয়নের পথে বড় বাধা। দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৪.৩% তরুণ, কিন্তু মানসম্মত শিক্ষার অভাব ও দক্ষতার ঘাটতির কারণে তাদের একটি বড় অংশ বেকার। ILO-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে তরুণ বেকারত্বের হার ছিল ১১.২%। গ্রামীণ অঞ্চলে বৈষম্য এবং প্রযুক্তিগত সুবিধার অভাব নতুন প্রজন্মকে আরো পিছিয়ে দিচ্ছে। UNESCO-এর তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকার ৩৫% শিক্ষার্থী ডিজিটাল প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত। অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং সম্পদের সীমিত ব্যবহার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। পানি, খাদ্য, এবং শক্তি ব্যবহারে দক্ষতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে সম্পদ সংকট আরো প্রকট হবে। অতিরিক্ত ভোগ কমিয়ে এবং টেকসই কৃষি ও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বাড়িয়ে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে।

কোভিড ১৯ মহামারী বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেছে। নতুন প্রজন্মকে স্বাস্থ্য অবকাঠামো উন্নত এবং বৈষম্যহীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতের মহামারী মোকাবিলায় স্বাস্থ্য গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজন। নারী ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর উন্নয়ন এখনও চ্যালেঞ্জ। নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ ৩৬%। লিঙ্গ বৈষম্য এবং সামাজিক বৈষম্য টেকসই উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তরুণ প্রজন্মকে নারী ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক সমতা নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। তরুণরা বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। প্রতি বছর তারা ৪৫টি পরিবেশগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্টার্টআপ, এবং সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণ উদ্যোক্তারা দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। দেশের ৫৬% স্টার্টআপের উদ্যোক্তা ২৫-৩৫ বছর বয়সী তরুণ। বৃক্ষরোপণ, কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচারে তরুণরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। নতুন প্রজন্মের জন্য টেকসই উন্নয়ন অর্জনে চ্যালেঞ্জগুলো জটিল হলেও প্রতিশ্রুতি, উদ্ভাবন, এবং সহযোগিতার মাধ্যমে এগুলো দূর করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, সামাজিক সমতা নিশ্চিত করা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে তারা একটি টেকসই ও ন্যায্য বিশ্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

শিক্ষার্থী শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত