চি ঠি প ত্র

শীতে পথশিশুদের পাশে দাঁড়াই

নবাব শাহজাদা

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শীতকাল একশ্রেণির মানুষের জন্য উৎসব, আরেক শ্রেণির জন্য দুঃস্বপ্ন। শীতের আগমনে ঢাকা শহরে জীবনের একটি নতুন রূপ দেখা যায়। কেউ গরম চায়ের কাপে উষ্ণতা খুঁজে নেয়, কেউবা জ্যাকেট, মাফলার পরে শীত উপভোগ করে। কিন্তু এই শহরেই এমন একটি জনগোষ্ঠী রয়েছে যাদের কাছে শীতকাল একটি বিভীষিকা। তারা পথশিশু, যাদের জীবনের প্রতিটি দিন লড়াইয়ে ভরা। ফুটপাথে, রেলস্টেশনে, বাসস্ট্যান্ডে কিংবা উন্মুক্ত আকাশের নিচে যাদের দিনরাত কাটে, শীত তাদের জন্য বেঁচে থাকার আরো একটি চ্যালেঞ্জ। ঢাকার পথশিশুদের সংখ্যা প্রায় কয়েক লাখ। তাদের বেশিরভাগই বস্ত্র, আশ্রয় ও খাদ্যের অভাবে ভুগছে। বিশেষ করে শীতের সময় তাদের কষ্ট চরমে পৌঁছায়। ভাঙা ফুটপাথ কিংবা পলিথিনের নিচে রাত কাটানো এই শিশুদের অনেকেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের কেউ কেউ শীতবস্ত্রের অভাবে অকালেই মৃত্যুবরণ করে। সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, হাইপোথারমিয়া ইত্যাদি রোগ তাদের নিয়মিত সঙ্গী। পথশিশুদের এই অবস্থার পেছনে প্রধান কারণ হলো পরিবার ও সমাজের অসচেতনতা। অধিকাংশ পথশিশুই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। কিছু শিশু অনাথ, আবার কেউবা দারিদ্র্যের শিকার হয়ে পরিবারের পক্ষে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় না। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সমাজের উদাসীনতা এবং সরকারের সীমিত উদ্যোগ। শীতকালে পথশিশুদের সাহায্য করার জন্য ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহরের বিত্তবান ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর উচিত পথশিশুদের মাঝে কম্বল, সোয়েটার, মাফলার, গরম কাপড় বিতরণ করা। পথশিশুদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে তারা উষ্ণ জায়গায় রাত কাটাতে পারবে। শীতে সাধারণ রোগবালাই থেকে তাদের সুরক্ষিত রাখতে সেবা কেন্দ্র বা মোবাইল মেডিকেল ইউনিট স্থাপন করা প্রয়োজন। সরকারকে পথশিশুদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। মানবতার হাত বাড়িয়ে দিন। আমাদের সমাজে এখনও অনেক মানুষ আছেন, যারা অন্যদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ান। এই শীতে এমন মানবিক উদ্যোগ আরও বাড়ানো প্রয়োজন। আপনি হয়তো ভাবছেন, ‘আমার একটি সাহায্যে কী হবে?’ কিন্তু একটি শীতবস্ত্র, একটি খাবারের প্যাকেট কিংবা একটি সহানুভূতির হাত একটি শিশুর জীবন বাঁচাতে পারে। পথশিশুদের দুঃখ-কষ্ট দূর করা শুধু সরকারের নয়, আমাদের সবার দায়িত্ব। ঢাকা শহরের প্রতিটি মানুষ যদি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসে, তবে এই শিশুগুলোর জীবনও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। আসুন, আমরা সবাই মিলে শীতার্ত পথশিশুদের জন্য একটি উষ্ণ পৃথিবী গড়ে তুলি।

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ