শিক্ষার অধিকার, সংস্কার জরুরি হওয়ার পরও কোনো অগ্রগতি নেই। বিগত দিনগুলোতে ফ্যাসিবাদ কায়েম হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাণ নেই, বৈষম্যের শিকার প্রতিটা মেধাবী শিক্ষার্থী। একটি সুশৃঙ্খল জাতি তৈরি করতে হলে আমাদের দরকার প্রয়োজনীয় শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা, বাস্তবায়ন দরকার প্রতিটা জায়গায়। কে বাস্তবায়ন করবে, সবাই ক্ষমতার সিঁড়ি পেতে মুখিয়ে আছে, এদেশে সফল শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ডাক্তার, সাংবাদিকদের কি আদৌও মূল্যায়ন হয়? মূল্যায়ন হয় সকল রাজনৈতিক নেতাদের, যাদের সন্তান লন্ডন, আমেরিকাতে পড়াশুনা করে আবার দেশেই এসে পরিবারতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের অগ্রদূত হয়। আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থাটি গঠন হয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে, অভিভাবকরা টাকা খরচ করে, সন্তানকে দেয় প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা। সেই শিক্ষা দিয়ে কেউ হয় বেকারত্বের নায়ক, কেউ হয় দূর্নীতির গুদামঘরের শাসক। আমরা কয়েকজন মানুষ মিলে আজ শিক্ষাব্যবস্থাকে সংস্কার করতে বলি, কে করবে সংস্কার? একটি স্বাধীন দেশে বেকারত্বের জায়গা দখল করে নিয়েছে। বেকারত্ব দিয়ে হচ্ছে সরকারের অর্থনৈতিক আয়। আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার্থী ১৬ শতাংশ, ২০২০ সালে সরকার আশা করছে ২০ শতাংশ, ২০৩০ সালে শিক্ষার্থী বেড়ে ৩০ শতাংশ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার হার ৮.৪৪ শতাংশ। আমাদের কারিগরি শিক্ষাটি একবারে অকেজো মানের হয়ে গেছে। যে ছেলেটি কারিগরি শিক্ষা নিয়ে দেশের বেকারত্ব দূর করবে, সেই ছেলেটি চাকরির জন্য আজকে পরিবারের বোঝা। যে ছেলেটির পেছনে সরকার অর্থ বিনিয়োগ করে দেশের অবদানের চিন্তা করে, সে ছেলেটি আজকে সরকারের বোঝা। কবে হবে আমাদের দেশে স্কিল নিয়ে বের হওয়া প্রকৌশলী। আমরা কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া ভালো প্রকৌশলী আশা করতে পারি না। হাতে-কলমে ট্রেনিংপ্রাপ্ত আমরা কোনো প্রকৌশলী খুঁজে পাচ্ছি না। এই দায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার। আমাদের এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বের হতে হবে। আমাদের প্রতিটা কারিগরি শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি শূন্যতে নামিয়ে আনতে হবে। দক্ষ প্রশিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, নিয়োগের ক্ষেত্রে মুখস্থবিদ্যা ও চলমান প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা বাদ দিতে হবে। হাতে কলমে কাজ পারে এমন প্রশিক্ষক মনিটরিং প্রক্রিয়াতে আনতে হবে এবং শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগ দিতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থ যেভাবে ব্যয় হচ্ছে, তাতে রাষ্ট্রের এই ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে দক্ষ শিক্ষার্থীদের বিদেশে প্রেরণ করতে হবে বিনামূল্যে। আমরা যতদিন কারিগরি শিক্ষার্থীদের জনশক্তি হিসাবে না পাঠাতে পারি, আমাদের অর্থনীতির মুক্তি মিলবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের থেকে যেসব দেশে আমাদের বিষয়ের উপর চাকরি বাজার সৃষ্টি হয়, সেসব দেশের রাষ্ট্রদূতরা তাদের সর্বত্র দিয়ে সে সকল কোম্পানিতে আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রেরণ করা দরকার। রেমিট্যান্স আমাদের দেশের অর্থনীতি মূলশক্তি। সরকারের টার্গেট হওয়া উচিত কারিগরি ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা তৈরি করা।
প্রতিটা কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্রে ভাষা ইনস্টিটিউট চালু করা। শিক্ষার্থীদের ইংলিশ ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক করা, পাশাপাশি অন্য ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে আগ্রহী হিসাবে গড়ে তোলা। মেধার ভিত্তিতে প্রফেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষা জীবন শেষ করে প্রফেশনাল ট্রেনিংপ্রাপ্ত হতে পারে না। আমাদের শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা ১০০ শতাংশ দিয়েই আমরা কাজে পাঠাতে চাই। বিশ্বের এই মন্দা বাজারে আমাদের টিকে থাকতে হলে সরকারকে আধুনিক পরিকল্পনা নিতে হবে। কারিগরি শিক্ষাতে আগ্রাহী করে তুলতে হবে, কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষা এখনো চালু হয়নি। তৃনমূল স্কুল কলেজের অভিভাবকরা মনে করেন কারিগরি শিক্ষা মানে দেশের স্বল্প মেধাবীদের শিক্ষা। এই ভ্রান্ত ধারণা আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিটা কারিগরি শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য সরকারের আধুনিক প্রকল্প নিতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তা, উন্নত রাষ্ট্রগুলো থেকে অনুদান নিয়ে আসতে হবে। কারিগরি শিক্ষা যদি আজকে আমরা আধুনিক করতে ব্যর্থ হই, আগামীর বাংলাদেশ হবে বেকারত্বের জায়গা। আমাদের দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে হাতে কলমে কাজ জানা প্রকৌশলীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। তাদের বাস্তব ধারণা কম, হাতে কলমে জ্ঞান কম, এই ব্যবস্থার জন্য আমরা দায়ী। সরকার কতটুকু একটি শিক্ষার্থীর কাজের পরিধি দেখে নিয়োগ দেয়? একটি লিখিত পরীক্ষা ও ভাইবা দিয়ে একজন প্রকৌশলীকে কোয়ালিফাই করা যায় না। আমাদের পুরো ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করে নিয়ে আসতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার তরুণদের হাত ধরেই হতে হবে, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের থেকেই সংস্কারের প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে, শিক্ষাবিদদের আমরা সংস্কারের রোডমার্চের জন্য ব্যবহার করতে পারি। আমাদের দাবিটা স্পষ্টভাবে বেশি। বিগত সরকারের আমলে কারিগরি শিক্ষার যে ক্ষতিটা হয়েছে, তার সংস্কার আজকে যদি আমরা না করতে পারি আগামীর বাংলাদেশ মৃত্যু হবে এই শিক্ষার্থীর আঘাতে।