ঢাকা ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা

দেখা মিলতে পারে গণতান্ত্রিক সরকার
ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা

নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের যাত্রায় পুরোনো এবং ঘটনাবহুল ২০২৪ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর ২০২৫ সালে পা রাখলো ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রাজনীতির ভাগ্য নির্ধারণের বছর হতে পারে নতুন বছর। এ বছরই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন দেশের মানুষ। দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের হতাশা কাটিয়ে ওঠা মানুষগুলোর প্রত্যাশার ভার বইতে হবে নতুন বছরকে। এ বছরই তারা ভোটের মাঠে অবাধ রাজনীতির চর্চার সুযোগ পাবেন এমনটাই আশা করছেন। অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাবে, বন্ধ হবে টাকা পাচার, ঋণ খেলাপির সংস্কৃতির অবসান হবে। ফেরত আনা হবে পাচারের টাকা। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বন্ধ হবে গুম খুন। সমুন্নত হবে মানবাধিকার। সরকারের কাছে চাওয়ার আছে অনেক কিছু। এরই মধ্যে অনেকেই দাবি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এর কিছু আদায় হয়েছে, প্রক্রিয়াধীন আছে কিছু। সব মিলে দেশবাসীকে কিছু দেয়ার সদিচ্ছা সরকারের আছে তা প্রমাণ হয়ে গেছে। এই প্রাপ্তির রেশ ধরেই বাড়ছে প্রত্যাশা।

লাল-সবুজের বাংলাদেশে ২০২৫ এসেছে সম্পূর্ণ নতুন এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অফুরান সম্ভাবনা নিয়ে। এই পরিবর্তনের পূর্বাভাস কয়েক দিন আগেও ঘুণাক্ষরে টের পাওয়া যায়নি। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংবিধানিক সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই শেখ হাসিনার একচ্ছত্র কর্তৃত্ববাদী শাসন চলে দুর্দান্ত প্রতাপে। পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনকে জঘন্য কারচুপি এবং জবরদস্তির মাধ্যমে প্রহসনে পরিণত করে একটানা দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় ছিলেন। এই সময় বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক দলগুলো শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও অনেক বছর সফল হয়নি। সাধারণ মানুষ যখন ধরেই নিয়েছিল, ‘বিনা ভোটের সরকারই তাদের একমাত্র নিয়তি’ ঠিক তখন সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিরুদ্ধে ছাত্র-যুবকরা আন্দোলন গড়ে তোলেন। যা মোকাবিলায় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে অনেক ছাত্র-তরুণের মৃত্যুর মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে তেড়েফুঁড়ে এসে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে তখতে তাউস থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়।

দায়িত্ব নিয়েই সংস্কারের জন্য ১১টি কমিশন গঠন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক দলগুলো এতে সমর্থন দিয়ে বলে, সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে রাজি। একই সঙ্গে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়নেরও দাবি জানায়। এরইমধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন চেয়ারম্যানসহ বাকি সদস্যরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন। সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচনি ব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করেছে। অনেকেই তাদের কাজ শেষ করে এনেছেন বলেও জানা গেছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব জমা দেবে। এর পরই সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রস্তাবগুলো নিয়ে এবং নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৫ সালেই নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলো আরো একাট্টা। নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচনি ব্যস্থার সংস্কার শেষে যাত্রা শুরু করবে নির্বাচনি ট্রেন-এমনটাই প্রত্যাশা সবার। বিশেষ করে আগামী মার্চে রমজান মাস শেষে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে রাজপথে শামিল হবে।

এবারের নতুন বছরটি বাংলাদেশের জন্যও এক নতুন আশার আলোয় আলোকিত হবে। নতুন বছরে নতুনভাবে দেশের মানুষ পাবে নতুন গণতান্ত্রিক সরকার। সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থার যাত্রা শুরু হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত