বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সবচেয়ে শক্তিশালী উৎস রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এ চালিকশক্তি গেল বছরে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ক্রম হ্রাসমান রিজার্ভে জ্বালানি হিসেবে কাজ করছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রবাসী আয়ে যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তার ওপর ভর করে রিজার্ভ এখন বাড়তে শুরু করেছে। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে টানা ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটির বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এই অঙ্ক ইতিহাসের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। একই সঙ্গে বছরভিত্তিক হিসাবে ২০২৪ সালেও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে প্রবাসী আয়ের অঙ্ক। তবুও প্রবাসী আয় নিয়ে আক্ষেপ আছে সংশ্লিষ্টদের। কারণ এখনো অবৈধ পথে বিপুল রেমিট্যান্স আসছে। গেল বছরে ১১ মাসে ৯ লাখ কর্মী বৈদেশিক শ্রমবাজারে যুক্ত হয়েছেন। সে অনুপাতে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি যথাযথ নয়। অপরদিকে দেড় কোটিরও বেশি শ্রমশক্তির রেমিট্যান্স বৈধ পথে আনতে পারলে বর্তমান অঙ্ক অন্তত দেড়গুণ বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত বছরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে। ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার (২৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন) সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন। এর আগে এত বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স কোনো বছরে আসেনি অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি এক বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে প্রবাসী আয় তার আগের বছরের (২০২৩ সালের) চেয়ে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার বা ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের ১২ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৯২ কোটি (২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন) ডলার। এ ছাড়া ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৬৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। একক মাসে এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আগে কখনো আসেনি। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি ডলার এসেছিল- ওটাই ছিল একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
এছাড়া আগের বছরের একই মাসের তুলনায় গত ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৫ কোটি ডলার বা ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ডলার।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অন্যতম উপাদান হলো প্রবাসী আয়, রাপ্তানি আয় ও বিদেশি ঋণ। তবে এর মধ্যে প্রবাসী আয় ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না, আবার কোনো দায়ও পরিশোধ করতে হয় না। কিন্তু রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতেও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশে রিজার্ভ বাড়ে। অর্থনীতি শক্তিশালী হয়।
গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে, যা বছরের শেষ মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ সময় প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। এর ফলে ২০২৪ সালের সার্বিক পুরো বছরে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে।