ঢাকা ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পথশিশুদের প্রতি সদাচরণ করুন

সাদিয়া সুলতানা রিমি
পথশিশুদের প্রতি সদাচরণ করুন

ফুল যে জায়গায় যে অবস্থায় ফুটুক তার সৌকুমার্য সমানভাবে সর্বজনেই সমাদৃত। আর সকল শিশুই নিষ্পাপ ও ফুলের মতো সুন্দর এবং পবিত্র। শিশু শব্দের আগে ‘পথ’ শব্দটি যুক্ত করে এক বিশেষ শ্রেণির শিশুদের আলাদা করে দিয়েছে। পথশিশু শব্দটি সেসব শিশুদের প্রকাশ করে, যাদের কাছে রাস্তাই বিস্তৃত অর্থে বস্তি আর বিভিন্ন রাস্তার পাশে ছোট ছোট পতিত জমিই তাদের আসল ঠিকানা। তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান পথ আর জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস ভিক্ষাবৃত্তি। তারা সরকার বা কোনো সংগঠন অথবা দায়িত্বশীল কোনো প্রাপ্তবয়স্ত কর্তৃক সুরক্ষিত, পথ নির্দেশনা প্রাপ্ত ও পরিচালিত নয়। বর্তমান সমাজে এই পথশিশুরা নানাভাবে বঞ্চিত। না আছে তাদের বাসস্থান না পায় তারা মৌলিক চাহিদার কোনো একটি। শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের কোনো শিক্ষাব্যবস্থা নেই। সমাজে তারা দুঃখ-কষ্ট অবহেলায় বড় হচ্ছে।

পরিস্থিতির শিকার হয়ে আজ পথশিশুরা বিভিন্ন খারাপ কাজ করছে। চুরি, পকেট মারা, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত। কিন্তু সমাজিক দৃষ্টিতে এগুলো অপরাধমূলক কাজ হলেও তারা সুশিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষার অভাবে পরিস্থিতির শিকার আজ। পথশিশুদের উপর সহনশীল হওয়া উচিত আমাদের। তাদের দেখে দূর অবহেলার দৃষ্টি না দিয়ে তাদের সাহায্য করা উচিত।

ঢাকা শহরে ফুটপথ, ওভার ব্রিজের নিচে প্রতিদিন শত শত পথশিশুদের দেখা মেলে। তারা জীবন ও জীবিকা উভয় এই রাস্তায় করে থাকে। তাদের পোশাক, খাবারের এতো জীর্ণ অবস্থা ‘যে তাদের দেখে একশ্রেণির লোক অনেক খারাপ ব্যবহার করে। তারা ভুলে যায় পথশিশুরাও মানুষ, তারা ইচ্ছা করে পথশিশু হয়নি। তারা পরিস্থিতির শিকার।’ বর্তমানে পথশিশুরা অনেক অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িয়ে আছে। এর মূল কারণ সুশিক্ষার অভাব। তারা কোনো রকম প্রাথমিক শিক্ষার আলোই পায়নি। পথশিশুদের নেই কোনো পারিবারিক, সামাজিক শিক্ষা, যার কারণে তারা এই অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু বর্তমানে সুশীল সমাজের কারণেও তারা এক প্রকার অপরাধমূলক কাজ করে। পথশিশুরা নানা রকম পথ বেঁচে নিয়েছে আয় রোজগারের জন্য। কিন্তু কিছু সুশীল মানুষ তাদের নানারকমভাবে হেনস্তা করে, অপমান করে, নিচু মানুষিকতার পরিচয় দেয়। আর এই কতিপয় মানুষের জন্য পথশিশুরা নানা মানসিক চাপে ভোগে এবং অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়। বাংলাদেশে পথশিশুদের স্কুলে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই তাদের সঠিক শিক্ষা লাভের সুযোগ নেই। অথচ, এই শিশুদের জন্য শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের যদি সঠিক শিক্ষা না থাকে, তাহলে তাদের বাকি জীবনটা দুর্বিষহভাবে কাটাতে হবে। সমাজের কিছু মানুষ পথশিশুদের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। যা পথশিশুদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। পথশিশুরা কলম, ফুল, খাবার ইত্যাদি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। অথচ কিছুসংখ্যক মানুষ এই সকল পথশিশুদের সাথে বাজে ব্যবহারসহ মারধর পর্যন্ত করে। কিন্তু এটা ওদের প্রাপ্য নয়। আমাদের উচিত পথশিশুদের উপর সহমর্মিতা হওয়া। ওদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা। সরকারের উচিত পথশিশুদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা। যেসকল এনজিও, পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে সরকারের উচিত সেসকল এনজিও, সংগঠনের পাশে দাঁড়ানো।

খুলে দেন হৃদয়ের বন্ধদুয়ার, বাড়িয়ে দেন দুটি হাত। নেন তুলে তাদের স্নেহের চাদরে পথে যাদের কাটে রাত। মনে রাখতে হবে আপনজনের স্নেহ, মমতা এদের কপালে জোটে না। আমরা পথচারীরা যদি তাদের প্রতি নির্দয় আচরণ করি, তাহলে তারা কোথায় যাবে! তাই আমাদের উচিত ঘর হারাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ভালোমন্দ খেয়াল রাখা নিজেদের সাধ্যমতো। অন্তত তাদের সাথে মার্জিত ব্যবহার করাই হবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও মনুষ্যত্বের উত্তম উদাহরণ।

লেখক : শিক্ষার্থী

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত