ঢাকা ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যাংক খাত তছনছ

শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন
ব্যাংক খাত তছনছ

ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসন ছিল মূলত অর্থ লুটের মহোৎসবের কাল। একদল ডাকাতের হাতে পড়েছিল দেশ। তারা যে যেভাবে পেরেছে অর্থ লোপাট করেছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসাবে খ্যাত ব্যাংক খাতের। নামে বেনামে ঋণ বিতরণের নামে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে একের পর এক ব্যাংক। এমনকি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রেহাই পায়নি তাদের অর্থলিপ্সা থেকে। সাইবার কারসাজির মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ পর্যন্ত সরিয়ে নেয়া হয়। এভাবে এক সময়ের সমৃদ্ধ ব্যাংকগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। দেশের ইসলামী ধারারসহ প্রায় এক ডজন ব্যাংক এখন এতটা রুগ্ণ যে, এগুলো আর শিরদাঁড়া সোজা করে কখনো দাঁড়াতে পারবে কি না সন্দেহ।

হাসিনার পতন ও পলায়নের পর গত ১৫ বছর ধরে যারা বেপরোয়া লুটপাট ও অর্থপাচারের মাধ্যমে অর্থনীতির সর্বনাশ ঘটিয়েছে; তারাও রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেছে দেশ ছেড়ে। অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চিত্র জানতে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে তাতে হাসিনার সময়ের ব্যাংক খাতকে কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাকহোল) সাথে তুলনা করা হয়েছে। শ্বেতপত্র থেকে জানা যায়, দেশের ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ এখন পৌনে সাত লাখ কোটি টাকা, যে অর্থ দিয়ে ১৩টি মেট্রোরেল বা ২২টি পদ্মা সেতু বানানো যেত। কমিটি আরো জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় সংস্থার সহায়তায় ব্যাংক দখল করা হয়। একটি মাত্র ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়া হয় সাতটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ।

গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসী জানেন, কীভাবে সেনা গোয়েন্দা বিভাগকে পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছিল ব্যাংক দখলের কাজে। রাতের অন্ধকারে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডিকে তুলে নিয়ে জোর করে ব্যাংকের মালিকানা হস্তান্তর করা হয় এস আলমের নামে। রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন প্রকাশ্য ডাকাতির ঘটনা বিশ্বের আর কোনো দেশে কখনো ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলেছে, দেশের আর্থিক খাতে ‘চোরতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আওয়ামী রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, বিচার বিভাগসহ সবাই ছিল সেই চোরতন্ত্রের শরিক। আর সেই চোরেরা গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৮টি বিভিন্ন উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে পাচার করেছে।

শেখ হাসিনার ক্ষমতার দেড় দশকে ব্যাংক খাত সুরক্ষায় আগের সরকারগুলো যেসব বিধিবিধান চালু করে তার সব পাল্টে ফেলা হয়। এভাবে এস আলম, সামিটের মতো গ্রুপগুলোকে অর্থ লোপাটের সুযোগ করে দেয়া হয়। এদের অনেকে বিদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। দেশ ধ্বংস হয়ে গেলে এদের কিছু এসে যায় না। রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের টাকা কীভাবে লোপাট করা হয়েছে আমরা জানি। ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক থেকেও একইভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। ব্যাংকগুলো আক্ষরিক অর্থে ফোকলা হয়ে গেছে। এখন আর উঠে দাঁড়াতে পারছে না। সরকার এসব বিষয়ে সুষ্ঠু সংস্কার ও শৃঙ্খলা ফেরানোর পদক্ষেপ নেবে- এটিই কাম্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত