উত্তরের হিমেল হাওয়ায় সারা দেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। উত্তরাঞ্চলে এর মাত্রা আরো বেশি। শীতের সাথে সাথে বেড়েছে ঘন কুয়াশা। অবস্থা এমন যে, খোদ রাজধানী ঢাকায় কয়েক দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে গেছে। শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। ঘন কুয়াশা পড়ায় নৌপথে যানচলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এমনকি দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চালকদের গাড়ি চালাতে হচ্ছে। দেশের অন্তত ছয়টি স্থানে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মধ্যে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সকাল ৯টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয় উত্তরের জনপদ হিমালয়ের নিকটবর্তী পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে যে ঘন কুয়াশা বিভিন্ন স্থানে পড়তে শুরু করেছে, একে বলে পরিচালন কুয়াশা। ভারতের দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে এক দীর্ঘ কুয়াশার চাদর বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতেও দেশে দুই সপ্তাহ ধরে কুয়াশা পড়েছিল। পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে কার্যত জবুথবু সারা দেশ। তীব্র শীতে গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষ প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তারা প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে পারছেন না। এতে করে শ্রমজীবী মানুষ অর্থকষ্টে পড়েছেন। দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষের পাশে এখন পর্যন্ত তেমন কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। অতীতে আমরা দেখেছি, দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকারি ত্রাণ-সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ব্যাপক সাহায্য করার নজির রয়েছে। সবাই সাধ্যমতো ক্ষতিগ্রস্ত ও অভাবীদের পাশে দাঁড়াতেন।
কিন্তু দীর্ঘ দেড় দশক দেশে চেপে বসা শেখ হাসিনার অপশাসনে কল্যাণকর এ সংস্কৃতি হারাতে বসেছিল। আসলে হাসিনা জমানায় শাসক শ্রেণির স্বার্থপরতায় পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা হারিয়ে গিয়ে এক নিষ্ঠুর সমাজ কায়েম হয়েছিল। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আমাদের সমাজের এ ইতিবাচক সংস্কৃতি আবার ফিরে এসেছে। এর নজির হিসেবে উল্লেখ করা যায়, নোয়াখালী অঞ্চলে হাসিনার পতনের পর এবার ভারতসৃষ্ট বন্যায় বন্যাকবলিত মানুষের পাশে সময়ক্ষেপণ না করে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে দেশবাসী দাঁড়িয়েছিলেন। এর ফলও পাওয়া যায় তাৎক্ষণিকভাবে। বন্যাকবলিত মানুষ দ্রুততম সময়ে তাদের ক্ষতি কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।
চলমান এই তীব্র শীতে যেসব মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে শীত নিবারণ করতে পারছেন না এবং কাজ করতে পারছেন না তাদের পাশে দাঁড়াতে আমরা যেন কুণ্ঠাবোধ না করি। এজন্য সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন ও ধনিক-বণিক শ্রেণির উদ্যোগ নেয়া মানবতার দাবি বলে আমরা মনে করি।