ঢাকা ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাকিস্তান-আফগানিস্তান যুদ্ধ, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে অস্থিরতা

অভিজিৎ বড়ুয়া অভি
পাকিস্তান-আফগানিস্তান যুদ্ধ, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে অস্থিরতা

পাকিস্তান আফগানিস্তানে বিমান হামলার পর উত্তেজনা বেড়েছে। পাকিস্তান একসময় আফগানিস্তানে তালেবানদের বন্ধু ছিল। এখন তাদের সম্পর্ক আন্তঃসীমান্ত সহিংসতায় উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান হামলা উত্তেজনাকে তীব্র করেছে। তালেবানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গি পাকিস্তানি বিমান হামলায় মারা গেছে। আর পাল্টা সীমান্ত জেলায় ১৬ জন পাকিস্তানি সামরিক সদস্য তালেবানদের অতর্কিত হামলায় হত্যা হয়েছে। আফগানিস্তানের তালেবান সরকার বলেছে যে পাকিস্তানি শরণার্থী পরিবারসহ হামলায় কয়েক ডজন বেসামরিক লোক মারা গেছে। তালেবান সরকার আফগান সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসাবে পাকিস্তানি বিমান হামলার জন্য নিন্দা করেছে এবং বলেছে যে, তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ‘বেশ কয়েকটি পয়েন্টে’ আক্রমণ করে প্রতিশোধ নিয়েছে। পাকিস্তানের কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ওই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর, আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলায় ওয়াজিরিস্তান অঞ্চলের শরণার্থীদের একটি জেলায় নারী ও শিশু সহ ৪৬ জন নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ বলেছে যে, বিমান হামলায় কমপক্ষে ২০ শিশু নিহত হয়েছে এবং আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন বা ইউনামা দায়ীদের শাস্তি দাবি জানিয়ে ঘটনার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ কেন আফগানিস্তানে হামলা চালাল পাকিস্তান? সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, বর্তমানে পাকিস্তানের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) জঙ্গিরা। পাকিস্তানের বালুচিস্তান-সহ নানা জায়গায় এই সংগঠনের হামলায় বিরাট ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে পাকিস্তানকে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি)-এর আওতায় রাস্তা তৈরির কাজও ব্যাহত হচ্ছে এই টিটিপি জঙ্গিদের কারণে। লাগাতার জঙ্গি হামলাও জারি রয়েছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, এই সংগঠনের জঙ্গিরা পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ছে। ওয়াজিরিস্তানের শরণার্থীরাই এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। মনে করা হচ্ছে এর জেরেই হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে আফগানিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর এটি তৃতীয় বড় অভিযান এবং গত বছরে দ্বিতীয়টিও ছিল বিমান হামলা। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা তালেবানদের টি.টি.পি-কে আশ্রয় দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে। যা তালেবান নেতারা অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা আফগানিস্তানে অনুপ্রবেশকে টিটিপি প্রতিরোধের জন্য অপরিহার্য ছিল বলে মনে করে। কারণ পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বলেছে, বেইজিংয়ের অবকাঠামো বিনিয়োগ কর্মসূচি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে প্রকল্পে জড়িত পাকিস্তানি নাগরিক এবং সৈন্যদের পাশাপাশি চীনা নাগরিকদের ওপর হামলা প্রতিরোধের জন্য এই অভিযান অপরিহার্য ছিল। ‘এটি আমাদের জন্য একটি সীমারেখা, যদি টিটিপি সেখান (আফগানিস্তান) থেকে মামলা করে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা যে কোনো মূল্যে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ গত শুক্রবার সরকারি মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় আফগানিস্তানের কথা উল্লেখ করে এই কথা বলেছেন।

আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়ায় দায়িত্ব পালনকারী প্রাক্তন সিনিয়র পুলিশ অফিসার সৈয়দ আখতার আলি শাহ বলেছেন, ‘পাকিস্তানি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী অভিযান চালানোর ফলে তালেবানদের আক্রমণের বৃদ্ধি উভয় দেশের নেতাদের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে।’ কারণ পাকিস্তানের সরকারকে অবশ্যই তার জনগণকে দেখাতে হবে যে, তারা আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম। এমনকি পাকিস্তানের দুর্বল শাসন, একাধিক সংকটের মুখোমুখি এবং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই তাকে করতে হচ্ছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে একটি সীমান্ত চৌকিতে তালেবানের হামলার পর পাকিস্তান, আফগানদের উপর আক্রম করে এবং আট লক্ষ এরও বেশি লোককে আফগানিস্তানে পুশব্যক করে। তালেবানকে চাপ দিতে পাকিস্তান স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। পাকিস্তান দাবি করেছে যে, তালেবানরা টিটিপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। কিন্তু তালেবান আফগানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছে। তালেবানরা আশঙ্কা করছে যে টিটিপির উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি সর্বাত্মক আক্রমণ করতে পারে। টিটিপি সংগঠনটি জিহাদিতে বিশ্বাসী এবং জঙ্গি গোষ্ঠী, যা আইএসআইএসকে নামে পরিচিত। যারা বর্তমানে তালেবান প্রশাসনের জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার কাবুলে আশরাফ ঘানির প্রশাসনের পতনের সূচনা করেছিল, যাকে পাকিস্তান সরকার পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সমর্থনকারী হিসাবে দেখে। উপরন্তু, পাকিস্তান আশাবাদী ছিল যে নতুন তালেবান শাসন টিটিপির লাগাম টেনে ধরবে। তারা আশা করেছিল যে তালেবানরা মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে যে গোপন সমর্থন দিয়েছিল তার জন্য পাকিস্তানের পক্ষে থাকবে। তবে তালেবানরা তা না করে জঙ্গি গোষ্ঠী টিটিপিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে, যাদের প্রায় ৬,০০০ যোদ্ধা বর্তমানে রয়েছে। তালেবানরা আফগানিস্তান দখলের সময় মার্কিন তৈরি উন্নত অস্ত্র এবং আফগান কারাগার থেকে শত শত যোদ্ধাকেও পেয়েছে। বর্তমানে টিটিপি পাকিস্তানের নিরাপত্তা এবং পুলিশ বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আক্রমণ বাড়িয়েছে। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ বলেছে, টিটিপি পাকিস্তানে ৪৪৪টি সন্ত্রাসী হামলা করেছে, তাতে ১৬১২ জন নিহত হয়েছে।

তবে দুই দেশ পাকিস্তান- আফগানিস্তান সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সর্বশেষ বিমান হামলার একই দিনে, একজন নবনিযুক্ত পাকিস্তানি বিশেষ দূত, মোহাম্মদ সাদিক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি সহ শীর্ষ তালেবান কর্মকর্তাদের সাথে কাবুলে বৈঠক করেছেন। তালেবানরা টিটিপিকে পুনর্বাসনের প্রস্তাব করেছে। যার ফলে মধ্য আফগানিস্তানে জঙ্গিরা, তাদের সীমান্ত অঞ্চল থেকে দূরে সরে যাবে? সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পাকতিকা এবং প্রতিবেশী আফগান প্রদেশে বেশ কয়েকটি পাকিস্তানের অপারেশনের কারণে টিটিপি প্রধান ও অনেক জঙ্গি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ওমর খালিদ খোরাসানি ছিলেন, একজন শীর্ষ কমান্ডার, যিনি ২৯২২ সালে রাস্তার পাশে পাকিস্তানের বোমা হামলায় মারা গিয়েছিলেন। পাকিস্তানি তালেবানের হামলা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে যে রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী, তালেবানে হামলার তীব্র সমালোচনা করেছে ইমরান খান যিনি এখনও কারাগারে রয়েছেন।

প্রায় ২০ বছর ধরে, ৪০ টিরও বেশি দেশের মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সাথে আফগান তালেবানরা লড়াই করেছিল। সেই সময়কালে, তালেবান নেতারা এবং যোদ্ধারা আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলজুড়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছিল, যেমন কোয়েটা, পেশোয়ার এবং পরে করাচিতে। অনেক তালেবান নেতা এবং অনেক যোদ্ধা দারুল উলুম হাক্কানিয়াসহ পাকিস্তানের ইসলামিক ধর্মীয় বিদ্যালয়ের স্নাতক, যেখানে তালেবান আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মুহাম্মদ ওমর পড়াশোনা করেছেন বলে জানা গেছে। এই পটভূমিতে, এই সপ্তাহে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি করেছে, যা ইসলামাবাদ এবং আফগান তালেবানের মধ্যে উত্তেজনার প্রমাণ?

তালেবানরা পাকিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের সীমান্ত এলাকায় টিটিপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো দাবি মেনে নেবে না। কারণ তালেবানরা জানে, এই ধরনের পদক্ষেপ টিটিপির সাথে তালেবানের সম্পর্ককে ব্যাহত করবে এবং ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশের (আইএসকেপি) মতো অন্যান্য চরম গোষ্ঠীর উত্থান ঘটবে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সম্ভবত আফগান ভূখণ্ডে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাবে, কারণে তারা জানে এতে শুধুমাত্র সামান্য আন্তর্জাতিক নিন্দার সম্মুখীন তারা হবে, এর বেশী কিছু নয়। কারণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, দেশের নিরাপত্তার, বেলুচিস্তানে চীনা-বিনিয়োগকৃত অর্থনৈতিক প্রকল্পসহ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং দেশের অবকাঠামো রক্ষায় প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, আফগান ভূখণ্ডে আক্রমণ করে পাকিস্তানি জনগণের কাছে একটি রাজনৈতিক বার্তা দিতে চায় যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শত্রুদের মোকাবিলা করতে সক্ষম।

এদিকে, আফগানিস্তানে তালেবান সরকার জানে যে, সংগঠিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কোনো আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রগুলো থেকে সাহায্য পাবে না। যদিও তালেবান নেতারা ‘প্রতিশোধ’ নেয়ার শপথ করেছেন। তবে এটি স্পষ্ট নয় যে তারা কীভাবে সামরিকভাবে শক্তিশালী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তা করবে বা কৌশল কি হতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানে বেশিরভাগ বাণিজ্য পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে হয়। যাইহোক, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে পাকিস্তানের সামরিক হামলা আফগান জনগণের মধ্যে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলেছে। তাতে পাকিস্তানি পশতুনরা আরো বিচ্ছিন্ন হবে। মার্চ ২০২৪ একজন সিনিয়র তালেবান সামরিক নেতা বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আফগান আকাশসীমার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে, আফগান আকাশে মার্কিন ড্রোনের উপস্থিতি রয়েছে।

তবে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি মোহাম্মদ সাদিক কাবুলে সিনিয়র আফগান কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করার সময় সর্বশেষ বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) এর প্রধানের সফর সহ উভয় দেশই গত দুই বছরে উচ্চণ্ডস্তরের কূটনৈতিক বৈঠকে করেছে। তিন মাস আগে, আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ইসলামাবাদ সফর করেন, যেখানে তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সাথেও আলোচনা করেন। এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, এই বছরের প্রথম ১০ মাসে ১৫০০ টিরও বেশি সহিংস ঘটনায় কমপক্ষে ৯২৪ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৭০ আইন প্রয়োগকারী কর্মী এবং ৩৫১ জন বেসামরিক লোক রয়েছে। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ ২০২৪ সালে ৮৫৬টি হামলার রিপোর্ট করেছে, যা ২০২৩ সালে রেকর্ড করা ৬৪৫টি ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স আফগান মন্ত্রকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে আফগানিস্তান আক্রমণ করেছে যা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রতিশোধের লক্ষ্যে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। বিবৃতিটি পাকিস্তানের দিকে উল্লেখ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আফগান কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এটিকে পাকিস্তানের ভূখণ্ড বলে মনে করি না, তাই আমরা ভূখণ্ডটি নিশ্চিত করতে পারি না, তবে এটি অনুমানিক লাইনের অন্য দিকে ছিল’। আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরে ডুরান্ড লাইনের যুদ্ধ করেছে, যা ১৯ শতকে ব্রিটিশদের দ্বারা চিহ্নিত একটি সীমানা। যা এখন আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানকে আলাদা করেছে এবং উপজাতীয় অঞ্চলগুলির মধ্য দিয়ে গেছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বা তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।

সর্বশেষে বলা চলে, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪-এর গভীর রাতে পাকিস্তানি জেট বিমানগুলি আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের সীমান্তবর্তী বারমাল জেলার অবস্থানগুলো লক্ষ্য করে আক্রমন চালায়। পাকিস্তান বলছে যে, লক্ষ্যবস্তুগুলো পাকিস্তানে বেশিরভাগ সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সন্ত্রাসীদের আস্তানা। যদিও পাকিস্তানি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, বিমান হামলায় ৭১ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার দাবি করেছে যে ৪৬ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু। ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাবির সত্যতা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি, তবে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মিশন ইউএনএএমএ তালেবান সরকারের বেসামরিক হতাহতের দাবিকে সমর্থন করেছে, যার মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। আক্রমণগুলির কারণে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার পাকিস্তানি কূটনীতিকদের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এর পরেই ২৮শে ডিসেম্বর পাকিস্তানি ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ হয়। যদিও সীমান্তে পরিস্থিতি পরবর্তীতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, টিটিপি পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যাওয়ায় উত্তেজনা অব্যাহত ছিল। বেশ হাস্যকরভাবে, সর্বশেষ বিমান হামলা এমন সময়ে হয়েছিল যখন আফগানিস্তানের জন্য সম্প্রতি পুনর্নিযুক্ত বিশেষ প্রতিনিধি মোহাম্মদ সাদিকের নেতৃত্বে একটি পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল কাবুলে ছিল। হামলার সময়, প্রতিনিধি দলটি তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি এবং শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী নুরুল্লাহ আজিজির সঙ্গে বৈঠক করেছে। এমনকি পরের দিনই প্রতিনিধিদলটি তালেবানের রাজনৈতিক বিষয়ক উপ-প্রধানমন্ত্রী মৌলভি আব্দুল কবিরের সাথে তার নির্ধারিত বৈঠকে গিয়েছিলেন। এদিকে আফগানিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানের বিমান হামলার নিন্দা করে ভারত জানাল, অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতার দায় এভাবেই প্রতিবেশী দেশগুলির উপরে চাপিয়ে দেয় ইসলামাবাদ। সোমবার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এপ্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে জানান, ‘আফগানিস্তানে হামলার বিষয়টা আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। কীভাবে মহিলা-শিশু কাউকেই রেয়াত করা হয়নি। বহু অমূল্য জীবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। নিরীহ জনগণের উপরে হামলার আমরা সর্বান্তকরণে নিন্দা করি। নিজেদের অভ্যন্তরীণ গাফিলতির দায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উপরে চাপানো পাকিস্তানের বহু পুরোনো অভ্যাস। এই প্রসঙ্গে আফগান মুখপাত্র কী বলেছেন, সেটাও আমরা নজরে রেখেছি।’

কথা সাহিত্যিক , কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত