ঢাকা ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আত্মসম্মান : অস্তিত্বের অবিনশ্বর রূপ!

রাজু আহমেদ
আত্মসম্মান : অস্তিত্বের অবিনশ্বর রূপ!

আত্মসম্মানের বদলে অন্যকিছুকেই জীবনের আঙিনায় প্রাধান্য দেয়া উচিত নয়। এমনকি ভালোবাসা এবং আত্মসম্মানকে যদি পরস্পরের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানো হয় তবে আত্মসম্মানের দিকেই পা বাড়াতে হবে। জেদণ্ডসাহস, তেজ কিংবা সততা আত্মসম্মান রক্ষার অলঙ্কার। আত্মসম্মান যেহেতু অস্তিত্বের বিকল্প সেহেতু কেবল আত্মসম্মানের জন্য অনেকেই অর্থ এবং ক্ষমতা অর্জনের সুযোগ পেয়েও তা মাড়িয়েছেন। এই মানুষগুলোর বিবেক বিক্রি না হওয়াতে সমাজ-রাষ্ট্র বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। এমনকি শেষমেষ তাদের সম্মানও অটুট থেকেছে।

জীবনে খুব সহজে কারো কাছের হওয়া ঠিক না কিংবা নিজেকে সহজ বানানোও উচিত না। বন্ধুত্বের যত্ন করা আবশ্যক কিন্তু এমন মায়ায় জড়ানো ঠিক হবে না যাতে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে মানসিকভাবে দুমড়েমুচড়ে যেতে হয়। যে পথে মানসিক শান্তি নষ্ট হয়, আত্মিক শুদ্ধতা ভ্রষ্টের হাতছানি পায় সে পথ থেকে যতই আলো ঠিকরে পড়ুক অন্তত আমার জন্য সেই পথটা যুৎসই নয়।

কোনোদিন প্রলোভনে পতিত হলে আত্মসম্মান আত্মসমর্পণে পরিণত হয়। পরাজিত মানুষ দিয়ে কত ধরনের অন্যায় সংঘটিত করা সম্ভব তা নীতি হারানো মানুষ জানে। তখন অন্যের ইচ্ছায় কাজ করতে হয়। নিজের ইচ্ছা, শখণ্ডআহ্লাদ বলতে যখন আর কিছুই থাকে না তখন অস্তিত্বের সংকট তীব্র হয়। আমি যা পছন্দ করি, তা অবশ্যই করবো। তবে যা অপছন্দের তা যে কোনো মূল্য চুকিয়েও আমার দ্বারা করাতে পারবে না- দৃঢ় প্রতিজ্ঞ শপথে থাকতে হবে। এই আত্মসম্মানটুকু রক্ষা করা জীবনে খুব জরুরি। মাথা উঁচু করে বাঁচার আলাদা মানে আছে।

জীবনে সহজ-সরল হওয়ার সাথে সাথে কঠিন হওয়াও জরুরি। কোনো আঘাতে ভেঙে পড়ার পরে, ব্যর্থতার মুখোমুখি হলে আবার যাতে নিজেকে গড়া যায় কিংবা ঘুরে দাঁড়ানো যায়- এটুকু কাঠিন্য-জেদ নিজের মধ্যে থাকা উচিত। আবেগকে কন্ট্রোল করে চলতে হবে। যেহেতু মানবীয় প্রবৃত্তি আছে সেহেতু আবেগ থাকবেই। তবে সেটাকে এমন পাত্রে রাখতে হবে যেখানে আবেগের মূল্য থাকে। যে মানুষকে মূল্যায়ন করতে জানে না তার কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। বুক ভরা দরদের সাথে সাথে মনের মধ্যে ঘৃণার উপস্থিতিও প্রবলভাবে থাকা চাই। অন্যায়-অসত্যকে ঘৃণা করতে না পারলে ব্যক্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। ভালো-মন্দ আলাদা করার বোধ না থাকলে যে যা বলবে তাই করতে হবে, মানতে হবে! যে সম্পর্কে অন্যের দোষে মরিচা ধরেছে- ভাবনাহীনভাবে তা ছেড়ে দেয়া উচিত। অতীত আঁকড়ে রেখে দুঃখ পেলে নিজের প্রতি জুলুম করা হয়। জুলুম মানুষকে জালেমে পরিণত করে। যার পরিণতি ভয়ংকর।

মানুষ নত হবে সম্মানে কাছে। বিনীত হবে প্রজ্ঞায়, যত্নে এবং ভালোবাসায়। যারা ভিক্ষার কাছে মাথা বিক্রি করে তাদের মানুষ বলতে বিবেকের আপত্তি করা উচিত। মানুষ মানুষকে দখল করতে পারে না কিন্তু ভালোবেসে জয় করতে পারে। যারা স্বার্থ ত্যাগ করে একসাথে চলতে চায় তারা সঙ্গী হতে পারে কিন্তু যারা পেছন থেকে টেনে ধরে আটকে রাখতে চায়, অধিকার কেড়ে লয় কিংবা সম্মানহানি করে পথেঘাটে- তাদের সাথে একবিন্দু আপস করা যাবে না। বরং প্রতিবাদ শাণিত করতে হবে।

জীবনে যা পেয়েছি সেসবের জন্য আলহামদুলিল্লাহ। আর যা পাইনি তার জন্য একটুও আফসোস নাই। আমার মঙ্গল-কল্যাণ তো রাজাধিরাজ মালিকের মহাপরিকল্পনার অধীন। আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা-দুর্ঘটনা- কোনোকিছুর জন্যই অন্যকে দায় দেই না কিংবা অভিযোগের আঙুল তুলি না। সমগ্র জীবন ভালোবাসার কাঙাল হয়ে থাকার মধ্যে কৃতিত্ব আছে। আমাদের সম্পদ জমানোর চেয়ে মানুষ জমানো বেশি জরুরি। জীবনের বাকি দিনগুলোতে যতটা সম্ভব বইকে সঙ্গ দিয়ে, অজানা কিছু বিষয় জেনে এবং জীবনকে ভালোবেসে হুট করে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো চাওয়া নাই। কেউ যাতে পিছনে বলতে না পারে, অমুকে খারাপ লোক ছিল- সেই চেষ্টায় একটা জীবনকে ভালো কাজের বিমা হিসেবে নিতে হবে। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই লাভে-মূলে বিনিময় পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত