নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে সাধারণ মানুষের জীবন কষ্ট ও দুর্ভোগে আবর্তিত হচ্ছে বছর তিনেক ধরে। সদ্যবিদায়ী বছরে অত্যধিক দামে সারা বছর গড় মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে। বাস্তবতা হলো- জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় বাড়লেও মানুষের আয়-রোজগার বাড়েনি। এর মধ্যে দুঃসংবাদ হয়ে হাজির হয়েছে শতাধিক পণ্য ও সেবায় নতুন শুল্ককর। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নতুন করে বাড়তি শুল্ককরে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত, সে সময় শত পণ্যে শুল্ক-ভ্যাট বাড়ানোয় ব্যয় আরেক দফা বেড়ে জনজীবন আরো সঙ্কটময় করে তুলবে। এতে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার খরচ সামাল দেয়া কঠিন হবে। প্রশ্ন উঠেছে, যে কর দেয় না, তার কাছ থেকে আদায়ের উদ্যোগ না নিয়ে অর্থবছরের মধ্যে এসে শুল্ককর বাড়ানো কতটা গ্রহণযোগ্য? যেখানে এমনিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে স্বস্তিতে নেই ভোক্তাসাধারণ। আসলে আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে জনগণের ওপর আরো করের বোঝা চাপাল সরকার। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে শতাধিক পণ্যসেবার ওপর ভ্যাট, সম্পূরক ও আবগারি শুল্ক বাড়াল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর। রেস্তোরাঁ, ওষুধ, সাবান, ডিটারজেন্ট, বিস্কুট, ফল, পোশাক, গৃহস্থালিসহ নানা পণ্যে শুল্ককর বাড়ানো হলো। যেগুলো আবশ্যকীয় পণ্য। এছাড়া টেলিফোন, ইন্টারনেট ও এলপি গ্যাসের মতো কয়েকটি সেবায় শুল্ককর বাড়ানো হয়েছে।
যদিও পণ্য ও সেবায় শুল্ককর বাড়ানোয় নিত্যপণ্যের দর বাড়বে না বলে বারবার আশ্বস্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। কিন্তু রূঢ় বাস্তবতার আলোকে তার কথায় কতটুকু আস্থা রাখা যায়? যেখানে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমালে ভোক্তা তার সুফল পান না, সেখানে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে না- তা কীভাবে বিশ্বাস করবেন ভোক্তাসাধারণ?
শত পণ্যের কর-ভ্যাট বাড়ানো নিয়ে গণমাধ্যমকে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সরকার এসব পণ্যকে নিত্যপণ্য বলে স্বীকার না করলেও এগুলো জীবন-জীবিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এগুলোর ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর প্রভাব পড়বে ভোক্তার ঘাড়ে।
অর্থবছরের মাঝপথে শুল্ককরে এত বড় পরিবর্তন এর আগে হয়েছে কি না, আমাদের জানা নেই। এ ধরনের সিদ্ধান্ত যে মানুষ ভালোভাবে নেবে না এটি সরকারের অজানা নয়। তাই শুল্ককরের পরিমাণ না বাড়িয়ে এর আওতা বাড়ানো উচিত বলে আমরা মনে করি। সরকার সে পথে না হেঁটে যারা নিয়মিত ভ্যাট দিচ্ছেন, তাদের ওপরে আরো বোঝা চাপাল। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যে। বাড়বে কর ফাঁকির প্রবণতাও। সরকারের উচিত, প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি বা কমানো, ভ্যাটব্যবস্থা সহজ করা। পাশাপাশি ভ্যাট কমিয়ে করের আওতা বাড়ানো। সেই সাথে সিন্ডিকেট ভাঙা এবং চাঁদাবাজি কমিয়ে সরবরাহব্যবস্থা ঠিকঠাক করায় মনোযোগ দেয়া। তা না করে করভ্যাট বাড়ানো জনস্বার্থের পরিপন্থি।