ঢাকা ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলা একাডেমি পুরস্কার দলীয় বিবেচনা নাকি প্রকৃত যোগ্যতা?

ইঞ্জিনিয়ার একে এম রেজাউল করিম
বাংলা একাডেমি পুরস্কার দলীয় বিবেচনা নাকি প্রকৃত যোগ্যতা?

এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রতিবছর পুরস্কার প্রদানের পর কিছু আলোচনা-সমালোচনা স্বাভাবিক হলেও, এ বছরের পুরস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হচ্ছে অনেক গুরুতর কারণেই।

পুরস্কার কী দলীয় পুনর্বাসনের হাতিয়ার? : বাংলা একাডেমি পুরস্কারের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বই লেখা দুই লেখক- ফারুক নওয়াজ ও মোহাম্মদ হান্নান- পুরস্কার পেয়েছেন। এ দুজন লেখক আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। প্রশ্ন উঠছে, বাংলা একাডেমি কি এখন দলীয় পুনর্বাসনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে? যদি ফারুক নওয়াজ সত্যিই একজন যোগ্য শিশু সাহিত্যিক হন, তবে এতদিন তিনি পুরস্কার থেকে বঞ্চিত ছিলেন কেন? তাছাড়া, মোহাম্মদ হান্নানের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণার যথার্থতা স্বীকার করলেও, পুরস্কার প্রদানে দলীয় পরিচয় অগ্রাধিকার পেল কি না, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।

স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্ন : পুরস্কারের বিচারক প্যানেলে প্রথম আলোর দুইজন কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও, সম্পাদক মতিউর রহমানের ভাই রেজাউর রহমান কীভাবে পুরস্কার পেলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এটি কি স্বার্থের সংঘাত নয়? বাংলা একাডেমি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। সুতরাং এর পুরস্কার নিয়ে এ ধরনের প্রশ্ন এড়ানো উচিত ছিল। একইভাবে, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ এ বছর পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমি একই মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি প্রতিষ্ঠান। তাই একজন প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে, বিশেষত যখন তিনি দায়িত্বে আছেন, পুরস্কার দেয়া সঙ্গত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক।

নারীদের অনুপস্থিতি : এবারের পুরস্কারের তালিকায় কোনো নারী লেখকের নাম নেই। এটি একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। পুরস্কারের যোগ্য এমন অন্তত ১০ জন নারীর নাম সহজেই বলা যেতে পারে, যারা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তা সত্ত্বেও এ বছর নারীদের একেবারেই উপেক্ষা করা হয়েছে।

প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন : ১. পুরস্কারের মূল বিবেচ্য বিষয় কি হওয়া উচিত রাজনৈতিক পরিচয় নাকি যোগ্যতা? ২. কেউ দলীয় ঘনিষ্ঠ হলেও যদি যোগ্য হন, তবে তিনি কি পুরস্কার পাওয়ার অধিকারী নন? ৩. পুরস্কারের তালিকা কি রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত হতে পেরেছে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যোগ্যতা এবং অবদানকেই একমাত্র মানদ- হিসেবে ধরা উচিত। দলীয় পরিচয় এখানে প্রভাব ফেললে বাংলা একাডেমির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়।

বাংলা একাডেমির দায়িত্ব : বাংলা একাডেমি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, বরং দেশের সৃজনশীল সাহিত্যের বিকাশের কেন্দ্রে থাকা উচিত। দলীয় বিবেচনায় পুরস্কার প্রদানের অভিযোগ উঠলে এ প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ বছরের পুরস্কারের তালিকা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, আমরা আশা করি ভবিষ্যতে বাংলা একাডেমি সবার আস্থা পুনরুদ্ধারে আরো সতর্ক হবে। সাহিত্যের মানদন্ডে পুরস্কারের যোগ্যতা নির্ধারণ করাই হবে সঠিক পথ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত