গত সাড়ে ১৫ বছরের অপশাসনে রাষ্ট্র ও সরকারের সব জায়গায় সীমাহীন ক্ষত সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব আমাদের গ্রাস করতে বসেছে। ফ্যাসিবাদের দোসর বড় বড় শিল্পপতি নিজের প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে অর্থ লুটে নেয়ার অবাধ সুযোগ পেয়েছে হাসিনার অপশাসনে। এ যাত্রায় তারা লুটপাট করার সাইনবোর্ড হিসেবে নিজেদের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করেন। হাসিনার একেবার ঘনিষ্ঠ সালমান এফ রহমান ছিলেন এ ধরনের লুটেরাদের অন্যতম। বেক্সিমকোকে সামনে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেন তিনি। কিন্তু শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি টেকসই করেননি। তাই পালাবদলের পর বেক্সিমকো অনেকটা ধসে পড়েছে। এর কর্মীরা পড়েছেন এক অনিশ্চয়তার মধ্যে।
বেক্সিমকো এখন ঋণভারে জর্জরিত। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা চালানোর মতো সক্ষমতা নেই। বেতন না পেয়ে শ্রমিকদের একটি অংশ আন্দোলনের নামে রাস্তায় জ্বালাও-পোড়াও করছে। গত বুধবার গাজীপুর ও সাভারে সড়ক অবরোধ করে নাশকতা চালায়। শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেছে, বেশ কয়েকটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মালভর্তি ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসেও আগুন দেয়। আন্দোলনে অনাগ্রহী শ্রমিকদের ওপর ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আক্রমণ চালায়। মহাদুর্নীতিবাজ সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের জন্য এখন দুর্বিষহ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা যাচ্ছে, পাঁচ মাস ধরে সরকারের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের বেতন দেয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে এগুলো বিক্রি করার আলোচনা শুরু করেছে সরকার। সেজন্য আগ্রহীদের সাথে সরকারি পক্ষের দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে।
মালিকানা পরিবর্তনের আগে এগুলো স্বচ্ছভাবে চালানোর সুযোগ নেই। কিন্তু আন্দোলনকারী শ্রমিকরা বেক্সিমকো শিল্প পার্কের সব কারখানা খুলে দেয়া, ব্যাংকব্যবস্থা চালু ও এলসি খুলে দেয়াসহ নানা দাবি জানাচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে- এ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো একটি নিয়মের অধীনে আনতে হলে মালিকানা ঠিক হতে হবে। বিপুল দায়দেনার বিষয়টি সুরাহা হতে হবে। শ্রমিকদের একটি অংশ আন্দোলনের নামে উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপরও তারা বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে। এ অবস্থায় উসকানিদাতাদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ যেন অস্থিতিশীলতা তৈরি করে সুযোগ নিতে না পারে। অন্যদিকে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। সেজন্য তাদের সাথে আলোচনার দ্বার খোলা রাখতে হবে।
স্বাধীনতার পর দেশের শিল্প খাত গুটি গুটি পায়ে অগ্রসর হয়েছে। হাসিনার শাসনামলে এর ব্যত্যয় ঘটে। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আকণ্ঠ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। সৎভাবে শিল্প স্থাপন করে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন করবেন কেউ- এ চিন্তা হারিয়ে যায়। সরকার ব্যাংকের কোষাগার শিল্পমালিকদের একটি অংশের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এর মাধ্যমে এস আলম, সালমান এফ রহমানসহ একটি দানব শ্রেণী তৈরি করা হয়। এরা আবার লুটে নেয়া অর্থের একটি অংশ হাসিনা ও তার পরিবারের মধ্যে বাটোয়ারা করে দিতেন। পরিণামে ব্যাংকব্যবস্থা ধসে পড়ে। অন্যদিকে শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও ভঙ্গুর হয়েছে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এ ধরনের শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠানের হদিস মিলছে। পরিস্থিতি ঠিকভাবে সামাল দেয়া না গেলে আমাদের অর্থনীতির জন্য এটি বড় ক্ষতির কারণ হবে।